রোমান্টিক ফানি স্ট্যাটাস

রোমান্টিক ফানি স্ট্যাটাস

ছাদের উপর বসে বসে ফেসবুকিং করছি। হঠাৎ করে একটা মেয়ে কল দিয়ে বললো.......


মেয়েটাঃ আসসালামু আলাইকুম।


আমিঃ ওয়ালাকুমুস সালাম, কে বলছেন? 


মেয়েটাঃ যার সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছে। 


আমিঃ ওহহ তাসফিয়া।


মেয়েটাঃ হুমম।


আমিঃ তো বলুন?


তাসফিয়াঃ না মানে, আপনারা তো দেখতে আসলেন। আপনার পছন্দ হলো মুরুব্বিরা কথা শুরু করে দিয়েছে। 


আমিঃ তো! আপনার কি আমাকে পছন্দ না? নাকি বয়ফ্রেন্ড আছে।


তাসফিয়াঃ না আসলে তেমন কিছু না, বলছিলাম কি আপনি কি ফ্রি আছেন। 


আমিঃ হুমম, কেনো?


তাসফিয়াঃ না মানে, আমাদের তো তেমন আলাদা ভাবে কথা হয়নি। যদি কোথাও মিট করেন তো..


আমিঃ আচ্ছা বলুন কোথায় আসতে হবে? 


তাসফিয়াঃ থ্যাংকস আমি আপনাকে টেক্সট করে জানাবো।


আমিঃ ওকে।


তাসফিয়াঃ ওহহ আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আমার সাথে আমার তিনটা বান্ধবীও থাকবে। 


এই বলে মেয়েটা ফোন কেটে দিলো। তাসফিয়া ইকবাল নামক মেয়েটার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। গত দু'দিন আগে দেখতে যাওয়ার পর আমার পছন্দ হয়। মূলত তারপর থেকেই বিয়ের কথাবার্তা চলছে। তার সাথে আমার আলাদা করে তেমন কথা হয়নি। আবার আগে থেকেও পরিচিত ছিলাম না। কাজেই মিট করার কথা শুনতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে রাজি হয়ে গেছি।


বিকেল বলায় তাসফিয়ার নাম্বার থেকে টেক্সট আসছে।

উত্তরায় একটা নাম করা রেস্টুরেন্টে মিট করার কথা বলেছে। রেস্টুরেন্টের নাম দেখেই আমার গলা শুকাতে শুরু করলো। রিতীমতো প্রেশারও বাড়তে লাগলো। আমি ঘামাতে শুরু করলাম। এদিকে মাসের শেষ দিক।পকেটের বেহাল অবস্থা। ভাবছিলাম তাসফিয়ার ব্যাপারে। মিট করার কথায় রাজি হয় কি ভুল করলাম।

মেয়েটা কি একটু বেশিই উচ্চবিলাসি? ওকে বিয়ে করা কি ঠিক হবে? বিয়েটা কি কেন্সেল করে দিবো...... 


মানুষ হিসেবে আমি একটু হিসাবি আরকি। যাকে এই যুগে কিপ্টে বলা হয়। তবুও হিসেব ছাড়া তো আর দুনিয়া চলে না তাইনা। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ভাবলাম গিয়েই দেখি। রাজি যখন হয়েছি, তখন না গেলে শুধু আমার নয় পুরো পরিবারেরই দুর্নাম হবে। 


বাড়িতে আমার বোনের জন্য কোথাও টাকা রেখে শান্তি নেই। কোনো মতে আমি ঘর ছাড়লেই সে এসে মানিব্যাগ, প্যান্টের পকেট, বালিশের নিচে সহ সব জায়গায় হাতরে টাকা পেলেই নিজের মনে করে নিয়ে যায়। তবুও এদিক সেদিক হাতরে, বিভিন্ন গোপন জায়গা খুঁজে মোটামুটি কিছু টাকা জোগাড় করে ফেললাম। এতে ৪/৫ জনের খাবারের বিল হয়ে যাবে।

 

সন্ধার পরেই রওনা হলাম। এতো দামী রেস্টুরেন্টে এর আগে খুব কমই আসা হয়েছে। বলতে গেলে ঢুকতামই না কখনো। যদি না ২/১ টা বন্ধু ট্রিট দিতো।


অবশেষে রেস্টুরেন্টের সামনে চলে আসলাম। আমার গলা আবারো শুকাতে লাগলো। হাত-পা অবশ হয়ে আসতে শুরু করলো😁। বিয়ের আগে যদি এই 

মেয়ের জন্য এতো টাকা খরচ করতে হয় বিয়ের পরে

না জানি কি হবে আল্লাহ মালুম🙁


আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে 'ফু দিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি কর্ণারে জানালার পাশে চারজন মেয়ে বসে আছে। তাদের মধ্যে একজন তাসফিয়া। এতোগুলা বান্ধবী নিয়ে দেখা করার কি দরকার মানে বুঝলাম না। তাসফিয়া ডাকলো আমায়...


তাসফিয়াঃ এই যে এদিকে আসুন।


আমি গেলাম। হাসিমুখে নিজের সিটে বসলাম। তারপর আড়চোখে তাকিয়ে সবাইকে এক নজর দেখে নিলাম। এদের মধ্যে একজন আবার সেই লেভেলের মুটকি🙉

একটা ছোটখাটো হাতির বাচ্চার সাথে একে অনায়াসে অদল-বদল করা যাবে😁। মনে মনে তার নাম দিলাম নীল তিমির বাচ্চা😜। উনাকে দেখেই আমার মাথা আবারো ঘুরতে শুরু করে দিলো।। মনে হচ্ছে এই বুঝি জ্ঞান হারিয়ে পরে যাবো। তাসফিয়া ওর বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বললো.......... 


তাসফিয়াঃ ওহহ আপনাকে তো বলাই হয়নি। 


আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালাম। সে বললো.......


তাসফিয়াঃ আসলে আপনার সাথে বিয়ের কথা চলছে দেখে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ। আর আপনার সাথে বিয়ে উপলক্ষে আমার বান্ধবীদেরকে ট্রিট দিচ্ছি। 


ঠিক সেই সময় তাসফিয়াকে উদ্দেশ্য করে নীল তিমির বাচ্চা বললো🤣🤣.......


নীল তিমির বাচ্চাঃ আগে খাবার অর্ডার কর। তারপর খেতে খেতে কথা বলা যাবে। 


যেহেতু তাসফিয়ার বান্ধবীদের নাম এখনো জানা হয়নি সেহেতু নীল তিমির বাচ্চা বর্ননা করা হয়েছে😁। তাসফিয়া বললো........


তাসফিয়াঃ কি খাবি বল?


নীল তিমির বাচ্চাঃ অনেকদিন বুফে ডিনার খাই না! আজকে বুফে অর্ডার করলে কেমন হয়?


কথাটা শুনে আমার বুকের ভেতর ব্যাথা শুরু হলো🙉।

বাম হাত দিয়ে বুকের বাম পাশে চেপে ধরলাম 😁।

বারবার মনে হচ্ছে ভেতর থেকে কলিজা টা বের হয়ে দৌঁড় দিবে☹️। আমি মনে মনে বললাম "" এই যে নীল তিমির বাচ্চা জীবনে বুফে ডিনার করেছিস🥺? ওহ তোর তো আবার অতটুকুতে হবে না।। তোর তো এক সমদ্র পরিমাণ চাই😰। 


বাস্তবে শক্তি সঞ্চয় করে অনেক কষ্টে মুখে হাসিটা ধরে রাখলাম। কিন্তু বুকের ভেতর-টায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে😩। তাসফিয়া মৃদু হেসে বললো.........


তাসফিয়াঃ তোদের যা ইচ্ছে খেতে পারিস। আপনার কোনো সমস্যা নেই তো?


বলেই তাসফিয়া আমার দিকে তাকালো। আমি কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। এসি থাকা স্বত্বেও ঘামাতে শুরু করলাম😇। বারবার মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেও এই বিপদ থেকে বাঁচা যাবে😒।


নেহাৎ মান সম্মানের ভয়ে হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম "না কোনো সমস্যা নেই"🙂। অথচ আমার সমস্যার কোনো শেষ নেই😢। সবাই প্রতিটা আইটেম এক এক করে প্লেটে তুলে নিচ্ছে। খাচ্ছে আর ওরা নিজেদের ভেতর কথা চালাচালি আর হাসাহাসি করছে। আমি মুগ্ধ 

নয়নে তাদের খাওয়া দেখছি। খাওয়ার বেলায়ও যে এতো বিলাসিতা করা যায় এদেরকে না দেখলে জানা হতো না। বিশেষ করে হাতির বাচ্চাটা! সে কোনো কথা বলছে না, খুব আয়েশ করে খেয়ে যাচ্ছে😟। 


কথা বলে সময় নষ্ট করার মতো সময় ওর হাতে নেই😒 আমি ভাবছি কিভাবে এখান থেকে কেটে পড়া যায় 🙁। তাতে অবশ্য মেয়ে গুলো বিপদে পড়বে, আমার দুর্নাম হবে, হয়তো বিয়েটাও ভেঙে যাবে। সে যাইহোক, আমার এমনিতেই বিয়ের স্বাদ মিটে গেছে। হঠাৎ তাসফিয়া বললো............


তাসফিয়াঃ ওমা, সেকি আপনি কিছু খাবেন না?


আমি গলা পরিস্কার করতে করতে বললাম........... 


আমিঃ আসলে যদি কিছু মনে না করেন আমি একটু ওয়াশরুম থেকে ঘুরে আসছি। 


কথাটা বলে উঠে চলে আসলাম। তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এখন শান্তি লাগছে, আরাম পাচ্ছি☺️। হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি বলে লোকে ভাববে কিপ্টে। টাকা বাঁচানোর জন্য হেঁটে যায়।

অথচ কেউ বলবে না হাঁটতে আমার অনেক ভালো লাগে। ওদিকে তাসফিয়া ফোনের উপর ফোন দিচ্ছে। 

আমি ফোনটা এ্যারোপ্লেন মুড করে হাঁটায় মনোযোগ দিলাম। অনেকটা পথ যেতে হবে......


ওরে কই যাইতেছেন? মেনশন দিয়ে যান আপনার কোন

                  বন্ধু এমন কিপ্টামি করতে পারে। 

    যে কিনা টাকা বাঁচানোর জন্য বিয়ে কেন্সেল করে

                        দিতেও দ্বিধাবোধ করে না।


 -গল্পঃ_কাল_আমার_বিয়ে 


লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 

*************সমাপ্ত*************


এমন আরও অনেক মজার গল্প পড়ুন।