বিশ্বাস ঘাতক

বিশ্বাস ঘাতক

রুহি বললো, " আপু তোর সঙ্গে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে তিনি নাকি গতকাল রাতে চেয়ারম্যান বাড়ির কাজের মেয়েকে জোর করে জড়িয়ে ধরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। আর একটু আগে কথা গুলো চেয়ারম্যান সাহেব মামাকে কল দিয়ে বললো, আমার তো শুনেই হাতপা কাঁপছে। "


রুহির কথা কানে যেতেই হাত দিয়ে চায়ের কাপ নিচে পরে গেল নিপার। নিপা অবাক চোখে তখন তাকিয়ে থেকে বললো, " কি বললি রুহি? "


- বড়মামা তো এটাই বললো তাকে নাকি মোবাইল করে জানিয়েছে চেয়ারম্যান সাহেব। 


- বাবা কোথায়? 


- মামা তো বাইরে গেল। 


- তোর কি মনে হয় যে হাবিব এমন কিছু করতে পারে, আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। 


- কিন্তু সেই কাজের মেয়েটা নিজের মুখে নাকি কাঁদতে কাঁদতে চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করে শাস্তি দাবী করছে। আমি বুঝতে পারছি না, তিনি একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হয়ে কীভাবে এমন কাজ করতে পারে? আর তাছাড়া সপ্তাহ খানিক পরে তোমার সঙ্গে তার বিয়ে হবে। 


- তুই চল আমার সঙ্গে। 


- কোথায়? 


- যে বাড়িতে হাবিব থাকে সেই চেয়ারম্যান বাড়ি যাবো, তাড়াতাড়ি চল। 


- কিন্তু সেখানে তোমার যাওয়া কি ঠিক হবে? 


- কেন হবে না? আমি সরাসরি নিজের মুখে তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই। 


- কিন্তু...


- তোকে যেতে হবে না, আমি যাচ্ছি। 


- ঠিক আছে চলো।


তড়িঘড়ি করে কোনরকমে বোরকা পরে বেরিয়ে গেল রুহি এবং তার মামাতো বোন নিপা। খুলনা শহরের খালিশপুরে মামার সঙ্গে থাকে রুহির মা এবং রুহি। রুহির মামার একমাত্র মেয়ে নিপা, তার সঙ্গে বিয়ে হবার কথা পাশেই প্রভাতী স্কুলের শিক্ষক আহসান হাবিবের। আর সেজন্যই কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে দুদিন আগে খুলনা এসেছে নিপা। 


রুহির বাবার ফাঁসি হবার পর নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে, বাহিরের জমিজমা বিক্রি করে বড়মামার সঙ্গে বাস করছে। রুহির মামি খুব ভালো, তিনিই জোর করে তার ননদকে কাছে নিয়ে এসেছে। এর মাঝখানে রুহি ও তার মা পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশনে ছিল ছোটমামার কাছে। 


পৌরসভার মোড় ঘুরে তারা কোহিনূর মোড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কারণ কোহিনূর মোড়ের ঠিক কাছেই চেয়ারম্যান বাড়ি। তবে এই বাড়ির যিনি চেয়ারম্যান হিসাবে খ্যাত তিনি এখন আর কোন চেয়ারম্যান নয়। একসময় রূপসার ওপাড়ে কোন একটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, আর তিনি এখানে বাড়ি করেন। আস্তে আস্তে এই বাড়িটা চেয়ারম্যান বাড়ি হিসাবে পরিচিত হয়ে গেছে সবার কাছে। 


চেয়ারম্যান বাড়িতে প্রবেশ করে নিপা অবাক হয়ে গেল, কারণ সে ভেবেছিল এখানে অনেক মানুষ জমা হয়ে গেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তেমন কাউকে চোখে পরছে না, তবে যেই ৪/৫ ব্যক্তি বসার ঘরে বসে আছে তাদের মধ্যে নিপার বাবাও আছে। নিপাকে দেখে নিপার বাবা খানিকটা বিব্রত হয়ে গেল কিন্তু কিছু বললো না। সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে হাবিব, নিপার দিকে একবার তাকিয়ে চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি নামিয়ে নিল। 


নিপা কোনরকম ভনিতা না করে হাবিবের সামনে গিয়ে বললো:-


- এসব কি শুনছি হাবিব? 


- হাবিব চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 


- নিপা চিৎকার করে বললো, আমার কথার উত্তর দাও না কেন? সবাই এসব কি বলছে? 


- হাবিব শুধু তার নিচু মাথাটা সোজা করে নিপার অগ্নি দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইল। 


- কথা বলছো না কেন? 


- কি বলবো? 


- সবাই কি বলছে? 


- তোমাকে সবাই কি বলছে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে তুমি কোনটা বিশ্বাস করো? 


- আমি তোমার মুখ দিয়ে শুনতে চাই। 


- তুমি যেটা বিশ্বাস করবে সেটাই, আমার সম্বন্ধে ধারণা তোমার মোটামুটি আছে। 


- ঘুরিয়ে কথা বলতে চাই না, তুমি আমাকে বলো তো কেন এমন জঘন্য কাজ করতে পারলে? 


- তুমিও কি সবার মতো অবিশ্বাস করো? 


- সবাই কি তোমার শত্রু? কেন সবাই তোমার সঙ্গে বা তোমাকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেবে? 


- তোমার যদি ধারণা হয় যে আমি এমন কাজটা করতে পারি তাহলে আমি অপরাধী। 


ঠাস করে এক চড় মেরে কাঁদতে কাঁদতে নিপা বললো " সপ্তাহ খানিক নিজেকে ধরে রাখতে পারলি না কুলাঙ্গার? তারপর বিয়ে হতো আমার সঙ্গে, আর এতই যদি অধৈর্য তাহলে আমাকে বললি না কেন? আমি তো খুলনাতেই ছিলাম, তাই আমাকে বললে আমি তোর শরীরের যন্ত্রণা ভালো করে মিটিয়ে দিতাম। তখন আর তোর ভদ্রতার মুখোশের আড়ালের পিশাচ রূপ ওই মেয়েকে দেখতে হতো না। " 


- হাবিব চুপচাপ। 


রুহি তখন নিপাকে টান দিয়ে সরিয়ে নিল, আর তার বাবা বললো " এসব কি হচ্ছে নিপা? "


- নিপা বললো, আপনারা ওকে চরম শাস্তি দিবেন যাতে কেউ এমন কাজ না করে। শিক্ষকের মতো মহান একটা পেশায় জড়িত থেকে এমন ঘৃণিত কাজ যেন কেউ না করতে পারে। 


হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল নিপা, আর তার সঙ্গে সঙ্গে রুহিও বের হয়ে গেল। উপস্থিত সকলেই চুপ করে একটা অঘটন উপভোগ করে গেল। তারপর তারাও চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। নিপার বাবা বসে আছে চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে, তখনই হাবিবকে ভিতরের ঘরে পাঠানো হলো। 


হাবিবের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর, চাকরির জন্য খুলনা শহরে পরে আছে। প্রভাতী স্কুলের সভাপতি হচ্ছেন চেয়ারম্যান সাহেব তাই তিনি নিজের ঘরে এনে রেখেছে তাকে। ছাদের চিলেকোঠার ঘরে বাস করতো হাবিব, আর তিনবেলা তার রুমের মধ্যে খাবার নিয়ে আসতো কাজের মেয়েটা। তবে নিপার সঙ্গে হাবিবের পরিচয় হয়েছে মাস তিনেক আগে, তারপর সেই পরিচয় থেকে ভালবাসা আর ভালবাসা দিয়ে বিয়ের কথা হচ্ছিল। 


ঘন্টা দুই পরে নিপার কাছে খবর আসলো, হাবিব চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে বসে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু মারা যায়নি তাই তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। 


সন্ধ্যা বেলা চেয়ারম্যান সাহেব এসে নিপার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললো " যদিও এটা আমাকে লিখেছিল কিন্তু আমার মনে হচ্ছে চিঠিটা তোমার ও পড়া উচিৎ। " 


চিঠি নিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে পড়তে শুরু করলো নিপা। 


শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব, 


পৃথিবীতে দম ফুরিয়ে গেছে তাই ত্যাগ করলাম। তবে মৃত্যুর আগে একটা ঘটনা জানাতে খুব ইচ্ছে করছে। নিপার সঙ্গে পরিচয় হবার ঘটনা। 


মাস তিনেক আগের কথা, ঢাকা থেকে "সুন্দরবন এক্সপ্রেসে" খুলনা আসছিলাম। আবহাওয়া ছিল খুবই খারাপ, কিন্তু ট্রেনের মধ্যে সেই আবহাওয়া বেশ চমৎকার লাগছিল। খারাপ আবহাওয়ার কারণে ট্রেন সেদিন লেইট হলো, রাত দুইটার দিকে খুলনা শহরে পৌছলাম। যশোর পার হয়েই ঝড়ের কবলে পরেছিলাম তবুও ট্রেন আস্তে আস্তে করে ঠিকই চলছিল। যদিও সকলের ধারণা ছিল যে রেললাইনের উপর গাছ উপড়ে পরতে পারে বা ভেঙ্গে পরতে পারে। সেই ভয়ে চালক হয়তো ট্রেন থামিয়ে রাখবেন, কিন্তু সেটা হয়নি। 


স্টেশন থেকে বের হলাম তখন ঝড় নেই কিন্তু বৃষ্টি দিয়ে ভেসে যাচ্ছে শহর। আশ্চর্য হলাম কারণ এই ঝড়বৃষ্টির রাতেও বাহিরে তখন তিন-চারটা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে। আমার সঙ্গে তেমন কিছু ছিল না বলে আমি ঝটপট বাহিরে এসে একটা রিক্সা ঠিক করে নিলাম। মালপত্র নিয়ে বাকিরা এসে আমরা যারা রিক্সা দখল করেছি তাদের উপর বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আমাকে নিয়ে রিক্সা যখন বের হয়ে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করে নিপাকে দেখতে পেলাম দাঁড়িয়ে আছে। হাত দিয়ে চুল ঠিক করছিল কিন্তু আমি ভেবেছিলাম সে হাতের ইশারা করেছে। তাই রিক্সা থামিয়ে তার কাছে গেলাম, আর যখন জানতে পারলাম যে আমাকে ডাকে নাই তখন নিজেকে বোকা ভাবলাম। তারপর যখন জানলাম সেও নাকি খালিশপুর যাবে তখন আমার সঙ্গে রিক্সায় উঠতে প্রস্তাব করলাম। বুড়ো রিক্সা ওয়ালা দেখা মেয়েটা একটু ভেবেই রিক্সার মধ্যে উঠতে রাজি হলো। 


আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে, সমস্ত রাস্তা তখন পানি জমে তলিয়ে গেছে প্রায়। রিক্সায় বসে ভিজতে ভিজতে জড়সড় হয়ে বসে আছি, সে এক অদ্ভুত অনুভূতি ছিল। মৃত্যুর দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে আজ সেই বৃষ্টিভেজা রাতটা খুব মনে পরছে। এ জীবনে আর কোনদিন একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা হবে না, কি অদ্ভুত তাই না? হুমায়ূন আহমেদ স্যারের মতো বলতে ইচ্ছে করে " আর কিছুদিন পর পৃথিবী পৃথিবীর মতো থাকবে, এভাবেই শ্রাবণে বৃষ্টি নামবে, টিনের চালে সেতার বাজবে, আকাশ ভেঙ্গে জোৎস্না নামবে কিন্তু আমি থাকবো না। "


খালিশপুরে পৌঁছে অবাক হলাম, ঝড়ের কবলে পরে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। নিপাদের বাসা হারিয়ে গেছে বাড়ির সামনের বড় গাছটি উপড়ে পরেছে বলে। আর তখন হঠাৎ করে ঝড় আরও বেড়ে গেছে, এদিকে নিপা তাদের বাসায় ঢুকতে পারছে না। আমি তখন বাধ্য হয়ে তাকে বললাম আমার সঙ্গে আসতে, সে রাজি হলো। রিক্সায় বসে আমি যে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সেটা তাকে বলেছিলাম আর টুকটাক পরিচয় হয়েছিল। দ্রুত কোহিনূর মোড়ে এসে আপনার এই বাসায় প্রবেশ করতে পারলাম, গেইট বন্ধ ছিল কিন্তু আপনি তো একটা চাবি দিয়ে রেখেছেন আমাকে। 


কোনমতে চিলেকোঠার ঘরে তাকে নিয়ে গেলাম, আপনাদের মেিন দরজা নক করেছিলাম বেশ কয়েকবার কিন্তু সাড়াশব্দ নেই। তারপর তাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলাম, ততক্ষণে ছাদ ভেসে যাচ্ছে প্রায়। কোনরকমে রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করলাম, দুজনেই ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছি যেন ভেজা দুটো কাক। নিপার সেই ভেজা চুল আর ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে রইলাম বেশ কিছু সময়। নিপা সেটা বুঝতে পেরে বেশ লজ্জা পেয়েছিল, মনে হয় ভয়ও পাচ্ছে। আমি তাকে পোশাক পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বৃষ্টিতে ভিজে ছাদে দাঁড়িয়ে তার ভেজা শরীর চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আহ কত সুন্দর। 


বইপড়ার টেবিলে বসে রাতটা কাটিয়ে দিলাম, আর আমার বিছানায় শুয়ে সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঠান্ডায় কম্বল জড়িয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল নিপা। ভোরবেলা বৃষ্টির মধ্যেই খুব সাবধানে ওকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে গেলাম তার বাসার দিকে। কারণ একটা অবিবাহিতা মেয়ে আমার সঙ্গে রাতে ছিল সেটা কেউ না জানুক। আমরা দুজন ছাড়া আজ আপনি তৃতীয়জন জানতে পারলেন সেই রাতের কথা। 


প্রচুর ঝড়বৃষ্টির রাতে যেই সুন্দরী রূপবতী নিপাকে নিজের বিছানায় পেয়েও আমি সারারাত চেয়ারে বসে হুমায়ূন আহমেদের " কোথাও কেউ নেই " উপন্যাস পড়ে কাটিয়ে দিলাম। সেই নিপা কেন বা কীভাবে বিশ্বাস করলো যে একটা কাজের মেয়ে দেখে আমি মনুষ্যত্ব ভুলে যাবো? 


খুব অদ্ভুত পৃথিবী, অদ্ভুত তার মানুষগুলো। 


ইতি,

আহসান হাবিব। 


পরদিন "সন্ধ্যার একটু পর" হাসপাতালে গেল রুহি এবং তার মামাতো বোন নিপা। অসুস্থ হাবিব চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে, নিপা তার কেবিনের দরজা ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 


- রুহি বললো, কেমন আছেন হাবিব ভাই? 


- অস্পষ্ট কণ্ঠে হাবিব বললো, আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো? 


- জ্বি ভাই ভালো আছি, আপনি কেন শুধু এমন পাগলামি করতে গেলেন হাবিব ভাই? মানুষের তো ভুল হতেই পারে তাই বলে কেউ কি আত্মহত্যা করতে যায়? আর আপনি শিক্ষিত একজন মানুষ তাই এটা করা কি ঠিক? 


- তোমার আপু দাঁড়িয়ে আছে কেন? তাকে বসতে বলো, নাকি সমস্যা আছে? 


নিপা এবার মুখ তুলে একবার হাবিবের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল, গাল বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে গেল। হাবিব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বসতে ইশারা করলো, নিপা আস্তে করে হাবিবের পায়ের কাছে বসলো। 


- রুহি বললো, আপনার গ্রামের বাড়ি থেকে কেউ আসেনি? 


- না সেখানে খবর দেওয়া হয়নি, ফরিদপুর থেকে এতদূর কাউকে আনতে চাই না। তাছাড়া গ্রামের মধ্যে যদি জানাজানি হয়ে যায় যে আমি সুইসাইড করতে গেছি তাহলে সবাই ছিছি করবে। 


- এবার নিপা বললো, বুঝতে যখন পারছো তাখন কেন নিজেকে মারতে গেলে? আমার নাহয় ভুল হয়েছে কিন্তু সেই ভুল ভাঙ্গানে দায়িত্ব কার? শুধু একটা চিঠি লিখে মরে গেলেই কি সবকিছুর সকল সমাধান হয়ে যায়? 


- বিশ্বাস বলে একটা কথা থাকে নিপা। 


- মানলাম আমি, কিন্তু বললাম তো ভুল হয়েছে তাই বলে এতবড় শাস্তি দেবার ব্যবস্থা করতে হবে? 


- এ বিষয়টা এখন বাদ দাও তো। 


- কেন বাদ দেবো? আমি ওই কাজের মেয়েটাকে ছেড়ে দেবো ভেবেছ? কখখনো নয়। 


- তা ঠিক, আমিও যেহেতু মরিনি সেহেতু কেন সে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে সেটা খুঁজে বের করবো। 


- তোমাকে কিছু করতে হবে না তুমি শুধু আগের মতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো, বিয়ের দিন তো ঘনিয়ে আসছে। 


- এতকিছুর পরও তোমার বাবা আমাকে তার মেয়ের জামাই হিসাবে মেনে নেবে? 


- কেন নেবে না? মেয়ে যদি মানে তাহলে সেখানে বাবা কি করবে? 


- তবুও, একবার যেহেতু কথা উঠেছে। 


- রুহি বললো, ভাইয়া আপনি চুপ করেন, মামার বিষয়টা আমরা দেখবো। আপনি শুধু সুস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য তৈরি হন নাহলে তো... 


- নিপা বললো, ঠিক আছে ঠিক আছে তুই এবার চুপ কর তো রুহি। 


- আচ্ছা চুপ করলাম, তোমরা কথা বলো আমি বরং বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করি। 


রুহি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল, আর নিপা তখন হাবিবের আরও কাছে এগিয়ে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে বললো, 


- এখন কেমন লাগছে? 


- ভালো। 


- ক্ষমা করেছ? 


- কিসের জন্য? 


- ভুল করেছি বলে। 


- মনে রাখিনি। 


- তাহলে এভাবে একা রেখে চলে যাচ্ছিলে কেন? 


- আল্লাহ তো গ্রহণ করে নিল না, আর যাকে এত ভালবাসলাম সে তো বুঝলে না। 


- একবার সুস্থ হয়ে ওঠো, এতো বেশি ভালবাসা দেবো যে কল্পনা করতে পারবে না। 


- তোমার হাতটা একটু আমার বুকের উপর রাখ তো, একটু অনুভব করি।


---সমাপ্ত 


সমস্ত পর্বের গল্প পড়তে ক্লিক করুন।