অবহেলার কষ্টের গল্প

অবহেলার কষ্টের গল্প

গল্প-যৌনকর্মী...🫣

পর্ব: ০১


আমরা এমন হতভাগ্য যে মরার পর জানাজা টা ও পায়না। এমনকি লাশটা দাফন ও হয়না ভালো করে কোনো রকম মাটিতে পুঁতে ফেলে।

আপনাদের শুনাবো আজ আমার জীবনি। আপনারা অনেকেই সামান্য দুঃখ পেলে বলেন যে মারা যাবো বাঁচতে ইচ্ছে করে না।কিংবা কেউ সুইসাইড সহ নেশার জগতে চলে যায়।

 বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো আমাদের চেয়ে করুন কিন্তুু আপনার জীবনি নয়।


আমার ছোটো বেলা থেকে শুরু করি। আমার জন্ম গত ভাবে যৌনকর্মী। আমার মা ও ছিলেন একজন পতিতা। 

আমার মা  নিদিষ্ট করে বলতে পারবে না যে আমার বাবা কে। কারন অহরহ পুরুষ এর আগমন হয় আমার মায়ের কাছে। 

তাই বাবার পরিচয় আপনাদের কাছে দিতে পারবো না।

আমার বেড়ে উঠা দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীর অলিতে গলিতে। 

এটা আমাদের এলাকা। যৌনকর্মীদের এলাকা।

এখানে কোনো মসজিদ মন্দির কিছু নেই। এখানে জাত পাতের ও কোনো ঠিক নেই। 

আমি যখন হয় আমার মায়ের তখন খুব অভাব কারন খদ্দেররা আসতো না আর আমার মা বাচ্চা জন্ম দিয়েছে তাই ৩ বা ৪ মাস ধরে কোনো কাজ ছিলো না মার।

মা আমাকে দুধের বদলে ভাতের ফ্যান খাওয়াতো। 

সত্যি বলতে আমার মায়ের বুকের দুধ খদ্দেররা খেয়ে ফেলতো সেজন্য আমি আর দুধ পেতাম না।

ধীরে ধীরে যখন বড় হয় তখন থেকে মাকে দেখতাম ঠোঁটে লাল লিপি স্টিক দিয়ে একটা লাল টিপ পড়ে খুব বাজে রকমের সেজে আমাদের ছোট্ট কুট্টির এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। 

ছোট্ট কুট্টির টা ছিলো আমাদের ঘর।এখানে একটা খাট, একটা আলনাা আর কিছু হাড়ি পাতিল ছিলো। 

যা দিয়ে রান্না করে খেতাম।

যখন খদ্দের আসতো তখন মা আমাকে রুম থেকে বের করে দিতো। 

ওহ ভুলতে ভুলে গেছি আমার নাম রানী মা আমার নাম রেখেছিলো রানী।

আমাদের পল্লীতে একটা খদ্দের আসলে তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যেতো। 

কারন সবাই সবার কুটিরে ডাকতো। 

কিন্তুু খদ্দের এর যাকে ভালো লাগতো যার সাথে দামে মিলতো তার কুটিরে যেতো। 

আমাদের পল্লীতে একটা সরদারনী ছিলো তাকে আমি নানি ডাকতাম। 

সে আমাদের পরিচালনা করতো। 

সে প্রতিদিন রাত ১০ টার সময় আসতো আর তাকে আমরা সবাই ৫০ টাকা করে দিতে হতো। 

এছাড়া আমাদের রুম ভাড়া ছিলো ৩০০ টাকা।

খদ্দের রা খুব বেশি টাকা দিতো না।

২০০ বা ৩০০ টাকা দিতো।

কোনো কোনো দিন ১ টা ও আসতো না খদ্দের আবার কোনো কোনো দিন ৫ বা ৬ টা ও আসতো।

আমার বয়স যখন ৯ তখন খদ্দেররা আমার দিকে খুব বাজে ভাবে তাকাতো।

একদিন এক খদ্দের আসে। 

আমার মায়ের কাছে। 

তো তার কাজ শেষে চলে যাওয়ার সময় আমাকে দেখে।

তখন আমার মাকে বলে এইটা কেরে। 

আমার মা আমায় তার পিছনে লুকিয়ে ফেলে।

তখন আমার মা বলে।


--আরে যা যা মরদ কাম শেষ হয়ছে এহন যা,


তখন খদ্দের বলে এটারে ১০ মিনিট এর জন্য দিলে তোরে ৫০০ টাকা দিবো। 

কিন্তুু আমার মা রাজি হয়না।

যখন লোকটা ১ হাজার টাকা বললও তখন মা রাজি হয়।

আর মা আমাকে আর লোকটাকে কুটিরে রেখে বাইরে চলে যায়।


লোকটা আমার কাছে আসতে থাকে। 

আমার শরীরটা কুবড়ে থুবড়ে খায়।আমি চিৎকার করি কান্না করি অনেক। 

কিন্তুু কেউ আসে না।

আমার সারা শরীর রক্তে ভেসে যায়।

আমি মাএ ৯ বছর বয়সে রেপ হয়।

লোকটা যাওয়ার সময় আমার মাকে ১৫০০ শত টাকা দেয়।

বলে ডাক্তার দেখাইতে।


আমাকে ডাক্তার দেখানো হলো। প্রায়  ৫ দিন এর মতো আমার রক্ত যেতে লাগলো।

এর পরে লোকটা আবার এলো।এবার ও মা আমাকে তার হাতে ছেড়ে দিলো। 

আমি চিৎকার চেচামেচি কেউ যেনো শুনতেছিলো না।কারন এই পল্লীতে এগুলো কোনো ব্যাপার। 

১০ বছরে পড়লাম।

সবাই বলতে লাগলো সাটিফিকেট লাগবে। এত অল্প বয়সে এই কাজে নামানো যাবে না। আমার মা ২ টা পয়সা কামানোর জন্য আমাকে এই পথে নামিয়ে দিলো। 

কিন্তুু তখন আমি অনেক ছোট এবং শারীরিক ভাবে ও অনেক ছোট। 

মা আমাকে ফার্মেসী থেকে কিছু ট্যাবলেট আর ৩ টা ইনজেকশন মারালো। 

আমি যেনো ভুলে ফেঁপে উঠলাম। কেউ বলবেই না যে আমার বয়স ১০ বছর।

আসলে দৌলতদিয়া পতিতা পল্লী তে কিছু ফার্মেসী আছে যেখানে মেয়েদের শারীরিক গঠন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি করে। 

যা শরীরের জন্য অনেক খারাপ এটা হার্ট লিভার কিডনিতে পানি জমে যায়। এমনকি অকেজো ও হয়ে যায়।

দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীর অর্ধেক পতিতা বয়সের আগে এই সব ওষুধ এর দ্বারা শারীরিক গঠন বৃদ্ধির জন্য। কিন্তুু যখন বয়স ৩০ পার হয় তখন তাদের শরীরে নানা রকম রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধে।

আর তারা বড়ো জোর ৪০ বছর পযন্ত বাঁচে । 

আমার মা টাকা খাইয়ে ১৮ বছর করে একটা সার্টিফিকেট বানালো।

কারন মাঝে মাঝে পুলিশ রেড দেয়।

এরপর আমি পুরো পতিতা হয়ে গেলাম। 

আমার মা আমাকে লাল টিপ দিয়ে ঠোঁট লাল করিয়ে খদ্দের খোঁজার জন্য বের করে দিতো। 

কম বয়স ছিলো খদ্দের রা ও আমার উওর আগ্রহ করতো। 

আমার প্রতিদিন ইনকাম হতো ৮০০ থেকে ৯০০ শত টাকা। 

খদ্দেররা আসলে অনেক সময় খুব বেশি খুশি করতে পারলে বকশিস দিতো। 

আবার খুব গালাগালি ও করতো।

কত রকমের বয়সের সে খদ্দের আসতো হিসাব নেই একদম ১২ বছর থেকে শুরু করে ৮০ বছরের খদ্দের পযন্ত। 

এই নিষিদ্ধ পল্লীতে ভালো ডাক্তার নেই ভরসা হিসাবে কতগুলে ফার্মেসী 

তারা ও আমাদের কাছে ওষুধ বেচতো অনেক চওড়া দামে মনে হতো আমরা যেনো টাকার গাছ।


এই নিষিদ্ধ পল্লীতে কোনো মান সম্মান ছিলো না। এই খানে ছোটো বড়ো সবাই সবাইকে এক ভাষা করতো এখানে কেউ কাউকে সালাম দিতে আমি শুনি নি৷ আযান পুজা এগুলোত কখনও দেখিনী ও। আর এখানে অনেকেই আছে যারা দোয়া দুরুদ ও জানতো না। আমাদের জন্য কোনো পবিএ দিন ছিলো না। কোনে উতসব ও না।

আমাদের মান সম্মান তো একদমই নেই এমন ও হয়েছে যে। আমার মা যার সাথে শুয়েছে। সে ও আমার সাথে শুয়েছে। 

কয়দিন পর পর প্রশাসনের লোক আসতো তাদের চাঁদা দিতে হতো না হলে সবাইকে বেঁধো রোক মারতো৷ 

এলাকার এমপি চেয়ারম্যান সবাইকে টাকা দিতে হতো। 

না হলে তো এ পল্লী চলবে না। 

সবাই আমাদের ঘৃনা করে। অথচ তারাই আমাদের শরীর বেচা টাকা নেই। 

সময় এভাবেই গড়াই। সে তো আর অপেক্ষা করে না। 

আমার বয়স এখন ১৬। টগবগে যুবতি আমি। 

যে কোনো পুরুষেরই চোখে পড়ি। 

ইদানিং টিভিতে থাকি নিরাপদ যৌন মিলন এর কথা। 

না হলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারি। যেমন Hlv,  গনোরিয়া, সহও জটিল রোগে। 

আসলে আমাদের এই পল্লীর সবাই এরকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। 

কিন্তুু আমরা কি করবো বলুন খদ্দেররা তো কনডম ব্যবহার করতেই চায় না। 

তারা আসে ও না। 

আর না আসলে আমরা চলবো কিভাবে বলুন। 

তাদের কনডম এর কথা বললে তারা গালাগালি করে। 

তারা চলে যেতে চায়। 

তাই আমরা জন্ম নিরোধক পিল খেতে হয়।

কিন্তুু কিছু খদ্দের খুব ভালো মানুষ। তারা আসলে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকাও দেয় খুশি হয়ে। 


যেদিন টাকা বেশি পায় সেদিন অনেক খুশি হয়।ইদানীং আপনারা তো জানেন মায়ের শরীর ভালো না। এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারে না। 

জরায়ুতে সমস্যা হয়েছে। 

এখানের ফার্মেসীর ওষুধ গুলো ও আর কাজ করে না। 

রাতে ব্যাথার জন্য ঘুমাতে পারে না। 

পুরো সংসারের খরচ আমার মাথার উপর চলে আসে। 

ইদানীং একটা ছেলের সাথে আমার খুব ভাব হয়। 

সে আমার চেয়ে বয়সে বড়ো।তার বয়স ২৩। ধনীর দুলাল। কিন্তুু পড়ালেখা করে। 

যেদিন ১ম এখানে আসে তার সাথে আমার পরিচয় হয়। 

তার সাথে সময় কাটানো হয়। তখন সে আমাকে ২ হাজার টাকা দেয়। আর বলে এখন থেকে তোমার কাছেই আসবো। 

যখন কোনো খদ্দের আসে তখন আমার মা কুটির এর বাহিরে চলে যায়।আসলে ২ টা কুটির ভাড়া করার সামথ্য আমার নাই। 

যখন কেউ রাতে থাকতে চায় কোনো খদ্দের তখন আমার মায়ের অনেক কস্ট হয়ে যায়।বাহিরে কোথাও বা কারো ঘরে রাতে থাকে। 

অনেক সময় অন্যর ঘরে ও রাতে খদ্দের থাকে। 

এমনিতেই মা অসুস্থ। 

ছেলেটাকে আমার খুব ভালো লাগে। 

নাম তার আহমেদ। 

সে সবসময় আমাকে বলে এমন কড়া কালারের লিপি স্টিক দিবে না। 

এমন বাজে ভাবে সাজবে না। 

আমি ও তার কথা শুনে চলার চেষ্টা করি। 

আমার মায়ের অসুস্থতা দেখে সে বাহিরে চিকিৎসার জন্য নিতে চায়।কিন্তুু সর্দার রা তো আর বাহিরে নিয়ে যেতে দিবে না।

সে বাহির থেকে আমাদের ওষুধ এনে দেয়। সেটা অনেক ভালো খেলে আমার মায়ের ব্যাথা অনেক কমে যায়। 

সময় গড়িয়ে যায়। এখন আমার বয়স ২০। 

এ পাঁচ বছরে আহমেদ নিয়মিত আসা যাওয়া করে। 

সে চাইতো না আমি অন্য খদ্দের এর কাছে যায়।

সে প্রায় সময় রাতে থাকে। 

হঠাৎ সে একমাসের মতো আসে না। মন অনেক খারাপ আমার তার সাথে যোগাযোগর কোনো মাধ্যম নেই। 

এর মধ্যে একদিন সকালে আমার মা মারা যায়।

আমার মা চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। কারন আমার মাকে হাসপাতালে নিতে পারিনী। 

আমার মায়ের কবর দিতে দিবে না। 

দাফন ও না। এলাকার চেয়ারম্যান এরা বলছে। কোনো হুজুর জানাজা পড়বে না।

কারন আমরা পতিতা। পতিতাদের জানাজা হয় না। 

আচ্ছা আমরা প্রকাশ্য পতিতাবৃত্তি করি কিন্তুু অনেক শিক্ষিতো মানুষ লুকিয়ে যে করে।

বড় বড় নায়িকারা তাদের শরীর দেখায়। এটাতে কি কিছু হয়না। 

অথচ আমাদের টাকা চেয়ারম্যান এমপিরা খেয়ে মানুষ হয়তেছে এটা কি গুনাহ নাহ। 

অনেক হুজুর এর কাছে গেলাম কেউ জানাজা পড়বে না। দাফন ও করবেনা। 

শেষে আমাদের পল্লীর একটা খালি জায়গায় মাকে আমরা কোনো রকম গোসল করিয়ে জানাজা ছাড়া মাটিতে কবর। দি। 

আমরা পল্লীর মানুষরা বড়ো অসহায় এটা কেউ বুজে না। 

আমরা শরীর বেচে খায় আমরা জানি কিন্তুু এ পল্লীতে যারা থাকি তারা বাহিরের জগত সমপকে জানে না। 

আমাদের বের হতে দেয় না।

আমি জানি না এই দায় কার।


~যৌনকর্মী...🫣

পর্ব: ০২ ও শেষ 


আহমেদ ও আসছে না । মা ও মারা গেলো আমি একাকিত্ব আমায় ঘিরে ধরেছে। কাজে ও মন বসাতে পারছিনা। 

মা মারা যাওয়ার ১ মাস কেটে গেলো। কোনো খদ্দের এর সাথে সময় কাটাই নি। দোয়া কালাম ও জানি না যে মায়ের জন্য একটু দোয়া করবো। 

কি হতভাগ্য কপাল আমার। 

কিন্তুু এভাবে বসে বসে খেলেও তো জীবন যাবে না। জমা টাকা ফুরিয়ে আসছে। 

খদ্দের তো ধরতেই হবে। 

দেখি কাল সকাল থেকে পারি কিনা। 

মন মেজাজ ভালো নেই। 

আর আহমেদ এর বিরহে আমার মনটা পুড়েছে।

সকালে এক খদ্দের এলো। 

দামাদামি হলো। 

খদ্দের যাওয়ার সময় মাএ ২০০ টাকা দিলো অথচো কথা ছিলো ৫০০ দিবে। 

প্রতিবাদ করাই আমাকে মা* খা* বলে গালাগালি দিলো। 

আমি নাকি তাকে ভালো মতো আরাম দিতে পারিনি তাই সে ২০০ টাকা দিলো। 

সকাল সকাল মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলে। 

বললাম শালা দুর হ। শুয়োর ঘরে বউ রেখে মা* সাথে শুতে আসোস কেনো। 

তোকে ডেকে আনছি নাকি রে। 

শালা হারামি।


মেজাজ টাই আমার খারাপ হয়ে গেলো। বিকালের দিকে দরজা বন্ধ করে একটু ঘুমাইতেছিলাম। 

দেখলাম দরজায় আওয়াজ হয়তেছে। 

দরজা খুললাম। ওমা দেখতেছি আহমেদ। 

সে ভিতরে ডুকলো। 

আর আমি তাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। 

বললাম এত দিন কোথায় ছিলা। আজকে ৩ টা মাস কেটে গেলো আসো নি তুমি কি আমায় ভুলে গেছো৷ 

মা আর নেই।

সে দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লো। 

আর বললও মাফ করো এত দিন অনেক ঝামেলাই ছিলাম। 

তাই আসতে পারি নী। 

তাকে সব খুলে বললাম। 

সে সব শুনে কান্না করে দিলো আর বললও আমি তো আছি। 

সে আমার মায়ের কবর জিয়ারত করলও। 

আর আমাকে কিছু দোয়া দুরুদ শেখালো। 

সে বললও আমি সবসময় আছি তোমার পাশে। 

তার থেকে সে রোজ আসতো। 

আসার সময় আমার জন্য অনেক রকম খাবার আনতো যা আমি জীবনে আমি চোখেও দেখিনী আর খাই ও নি। 

যেমন বার্গার স্যান্ডউইচ এগুলো নাকি নাম। 

আমি নাম শুনে হাসতাম।

সে মাঝে মাঝে রাতে ও থাকতো। 

তখন আমার খুব ভালো লাগতো। 

তাকে রেঁধে খাওয়াতাম। 

তাকে সবসময় বললতাম আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। 

তারপর সে বলতো নিয়ে যাবো। 

সারা পল্লীতে আহমেদ কে আমার নাগর বলতো৷ 

আর আমাকে সবাই বলতও ওরা বসন্তের কোকিল আসবে যাবে। 

ওদের ভালোবাসতে নেই। 

আমি ওদের কথায় কান দিতাম না৷ 

এভাবে ১ টা বছর কাটলো। 

আহমেদ আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলতো। আমাকে অনেক দোয়া ও শিখিয়ে ছিলো। নামাজ ও৷ 

১ বছর বাদে আমি হঠাৎ অনুভব করলাম আমি গর্ভবতী। 

আর হ্যা বলে রাখি। 

এই ১ বছর আহমেদ ছাড়া আমি কোনো পুরুষ এর সাথে থাকিনাই। 

যা লাগতো সব আহমেদ দিতো। 

আহমেদ কিন্তুু আমাকে এখান থেকে বাহিরে নিতে চেয়েছিলো। 

কিন্তুু পল্লীর সর্দার আর মানুষ রা দেয়নি। 

আমি গর্ভবতী হওয়াতে আহমেদ কে বললাম। 

আহমেদ অনেক খুশি। 

সে আমার অনেক যত্ন নিতো।আসলে, ৩ দিন বা ৪ দিন ও থেকে যেতো। 

অনেক খাবার আনতো এমনি বাহির থেকে ওষুধ ও আনতো। 

এভাবে আমার ৭ মাস কাটে। 

একদিন এসে আমাকে বললও একটু ঝামেলাই আছি ১ সপ্তাহের মতো আসবো। 

আমি বললাম ঠিক আছে৷ 

এর মধ্যে আমি কিছু টাকা ও জমিয়েছি। 

১ সপ্তাহ কাটলো আহমেদ আসলো না। 

অনেকে বুজালো আসবে কিন্তুু দিন যায় মাস যায় সে আসে না। 

আমার ৯ মাস শেষের দিকে। 

আমি তাকে খুব মিস করছিলাম আর সন্তানের কথা ভাবছিলাম। 

অনেকে তো রীতিমতো বকাবকি করলো কেন বাচ্চা নিলাম সে আর আসবে না। 

আমি মনে মনে রবের কাছে একটা ছেলে চাইতাম। 

কারন ছেলে হলে এ জীবন সে পাবে না। পতিতা হবে না৷ 

কিন্তুু মেয়ে হলে জীবনটা আমার মতোই হবে। 

একরাতে আমার খুব ব্যাথা উঠলো আমি নরমালে মেয়ের মা হলাম। 

মেয়ে হওয়াতে আমি একটু দুঃখ পেলাম কারন জীবনটা আমার মতো হোক সেটা আমি চায় না কারন আমি মা। 

আহমেদ ততদিনেও আসলো না। 

আমি আর আমার মেয়ে জমানো টাকা ভেঙে খেতে লাগলাম। কারন মেয়ে বুকের দুধ খায়। 

জমানো টাকা ও ফুরিয়ে আসতে লাগলো। 

অবশেষে খদ্দের জায়গা দিতে হলো। 

আমার মেয়ের বয়স ১ বছর হয়ে যায় আহমেদ আসে না কিন্তুু আমি তার অপেক্ষাই থাকি। 

আর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় থাকি। 

দেখতে দেখতে কয়েক বছর কেটে গেলো। 

আমার মেয়ের বয়স এখন ৫। 

কিন্তুু আহমেদ আজোও এলো না। 

যখন খদ্দের আসে আমি আমার মেয়েকে লুকিয়ে রাখি৷ 


আমি এখন আল্লাহর কাছে একটাই প্রাথনা করি 

কীভাবে আমি আমার মেয়েকে এখান থেকে বের করবো। 

কারন তাকে বের করা আমার জীবনের একটা লহ্ম্য।

কারন আমি তাকে এই জীবন দিতে চায় না। 

পতিতা বানাতে চায় না।আচ্ছা জীবন কি আমাকে সুযোগ দিবে?? 


আমার মেয়েটা প্রায় সময় বলে আচ্ছা আমার বাবা কোথায় কিন্তুু আমি উওর দিতে পারি না। 

আহমেদ এর আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি কারন তারা এমনি। 

বসন্তের কোকিল তারা।এ জীবনে হয়তো আহমেদ এর সাথে দেখা হবে। 

আমার মেয়ে টা দিন দিন বড় হতে লাগলো। 

খদ্দের দের চোখে পড়ে। লুকিয়ে কতখন রাখা যায়।

আমার শরীর টা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। 

কেমন যেনো লাগে। 

অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। 

আমাদের পল্লী তে এমনি হয়। ৩০ এর কাছাকাছি গেলে সবাই অসুস্থ হয়ে মারা যায়।

কারন শরীর আর কতো সইবে।আমার তো জাহান্নামি আমাদের এই দুনিয়াই ও জায়গা নেই আবার ওই দুনিয়াই ও নেই। 

আমার মেয়ের বয়স ৮ বছর। 

আমার এখন মনে হয় আর বাঁচবো না আমি। 

মৃত্যু আমায় ডাকছে এখন। 

কিন্তুু মেয়ের চিন্তায় জীবন শেষ। 

এখন আর খদ্দের আনতে পারিনা মাসের মধ্যে ১ দিন ও পারিনা৷ অসুস্থ হয়ে যায়।

কারন অল্প বয়সে মোটা আর বড়ো হওয়ার ওষুধ খেয়েছি এখন তার প্রভাব শরীরে পড়ছে। 

অনেকে বলছে মেয়েকে এ কাজে নামিয়ে দিতে।

কিন্তুু জীবন থাকতে এটা কখনও করবো না আমি। 

আল্লাহকে সবসময় ডাকি।

হঠাৎ এক সনধ্যায় এক লোক আসে। আমি অসুস্থ শুয়ে আছি।

আমাকে আমার মেয়ে বলছে মা কে জেনো আসছে। 

আমি বলি কে আসছে। 

মা আমি চিনি না। 

তখন ভেতরে ডুকে। 

আমি পাশ ফিরে দেখি এ আর কেউ না। আহমেদ। 

আজ এত বছর পরে। 

আমাকে সে জড়িয়ে ধরে আর বলে আমায় মাফ করে দিও সেদিন আমি একটা ঝামেলাই পড়ে যায়। 

তারপর বাবা মা আমাকে রাশিয়া পাঠায় দেয়।আজ ৮ বছর পর দেশে এসে তোমার কাছে এসেছি। 

আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম৷ 

আর বললাম আল্লাহ আমার কথা শুনেছে। 

আমার মেয়েকে কাছে নিয়ে বললাম এটা আমার আমার মেয়ে। নাম জান্নাত।

তুমি বলেছিলে মেয়ে হলে জান্নাত রাখতে। 

আমি রেখেছি। 

তখন সে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আর বলে আমার মেয়ে তুমি। 

সেদিন রাতে সে আমাদের সাথে থাকে। 

টানা ৪ দিন থাকে।সে টাকা দেয় আমি বাজার করে আনি তাকে রেঁধে আমি খাওয়াই। 

আর রাতের বেলা তার বুকে শুই। আসলে তার বুকে আলাদা একটা শান্তি আছে। 

তাকে বলি আমার মেয়েকে তুমি নিয়ে যাও। 

ওকে সুন্দর একটা জীবন দাও। 

তখন সে বলে নিয়ে যাবো। 

দিন দিন আমার শরীর খুব খারাপ হতে লাগলো। 

মেয়ে সবসময় বলে মা তুমি ঠিক হয়ে যাবে।আমার মেয়ে আমাকে রান্না করে খাওয়াই। 

৮ বছরের মেয়ে। 

জান্নাত কই তুই। 

এই তো মা কি হয়ছে?

মা একটু পানি দে আর ফার্মেসী থেকে আমার জন্য কিছু ওষুধ এনে দে। 

আর এই টাকা নে। 

আচ্ছা মা আমি যাইতেছি৷ 

মার জন্য ওষুধ আনতে গেলাম।

তখন ফার্মেসীর ছেলেটা আমায় বলে ভালোই তো বড় হয়ছোস। 

আমি কিছু না বলে চলে আসি। 

আর মাকে ওষুধ টা খেতে দি। 

মা ওষুধ খাওয়ার পর আমাকে বলে জান্নাত তোর বাপের সাথে চলে যাইস। 

পালাই যাইস এখান থেকে। 

পড়ালেখা করে মানুষ হয়ছস।

রাতের বেলা মা আর আমি ঘুমালাম। 

সকাল বেলা মাকে ডাকি কিন্তুু মা আর উঠে না। 

কারন আমার মা মারা গেছে। 

বাপ কে খবর দিতে পারি নাই বাপ সেদিন আসে নাই। 

মাকে নানুর কবরের পাশে জানাজা ছাড়া দাফন করলো। 

কারন হুজুর রা আমাদের জানা জা পড়ে না।

আমার মায়ের জীবনটা এভাবেই শেষ হলো। 


আমি ৮ বছরের একটা মেয়ে। তখন পুরো একা। বাবা আসে নাই ৩ দিন ধরে। 

সর্দার তো বলছে কিছু দিন পর থেকে কাজে নেমে যাইস। 

আমাকে শরীর বড়ো করার ইনজেকশন দিতে বলছে ফার্মেসীতে গিয়ে। 

আমি তখন কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছিলাম না কি করবো। 

বাবা এলো ৭ দিন পর বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরি কান্না করি। আর বলি মা নেই। 

বাবা তখন মাটিতে বসে পড়ে। বাবাকে নিয়ে মার কবরে যায় আর বাবা কবর জিয়ারত করে। 

বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে। 

আর বলে মা আমি তোর মাকে শেষ বারের মতো দেখতে ও পারলাম না।বাবা আমাকে নিয়ে যেতে চায় তখন সরদারনী যেতে দেয় না।

অনেক জোড়াজুড়ির পর বাবা কে বলে ১ লাখ টাকা দিলে নিয়ে যেতে দিবো। 

বাবা ও রাজি হলো আর আমাকে ১ লাখ টাকা দিয়ে নিয়ে আসলো। 

বাহিরের জগত সে এক অন্যরকম অনুভুতি। 

বাহির টা কত সুন্দর পরিস্কার যা বলে বোজানোর মতো না। 

বাবা আমাকে একটা বন্ধুর বাসায় রাখলেন আর বললেন আমাকে কিছু দিন দেখতে। 

বাবার বন্ধুর একটা মেয়ে ছিলো আমি তার সাথে খেলাতাম। 

বাবার আমাকে নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়ে আর আসলো না। 

১ মাস পর বাবা আমাকে সাথে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। 

আমাকে বাবার বন্ধুর বউটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো।আর জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলো। 

তারপর গাড়িতে করে কোথায় যেনো গেলাম। 

ওখানে গিয়ে দেখি কতো বড়ো বড়ো পাখির মতো ডানা। 

বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা এটা কি। 

তখন বাবা বললও এটা বিমান। 

এটা করে আমরা উড়বো। 

উড়ে উড়ে আমরা অন্য দেশে যাবো। রাশিয়া যাবো। 

আমি অনেক খুশি।তারপর বিমানে চেপে অন্য দেশে এলাম। 

শুরু হলো নতুন জীবন। 

বাবা আমাকে এখানে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো। 

আর হোস্টেলে দিয়ে দিলো। 

বাবা আসতো টাকা দিয়ে যেতো। 

মাঝে মাঝে আমি বাবার রুমেও যেতাম। বাবা জব করতো তাই আমাকে তেমন সময় দিতো না। 

আর প্রবাস জীবন সময় কিভাবে দিবে। 

বাবা আমাকে যতটা পারতো আদর করতো। 

ধীরে ধীরে অনেকটা সময় কাটলো। 

বলে রাখি বাবা ২ বছর পর পর দেশে যেতো। আর ৬ বা ৭ মাস পর আসতো। 

যখন বাবা দেশে যেতো আমাকে তেমন কল দিতো না। 

আর আমিও দিতাম না বাবা আমাকে মানা করতো কল দিতে। 

কিন্তুু বাবা আমায় টাকা দিয়ে যেতো। 

জীবন থেকে ১৫ টা বছর কেটে গেলো। 

এখন আমি রাশিয়ার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লেখা করছি। 

বাবার ও এখন বয়স হয়েছে। 

বাবা একদিন বললও বাবার আরো একটা পরিবার আছে। 

বাবা তাই ২ বছর পর পর দেশে যায়।সেখানে বাবার ৩ টা ছেলে আছে।

বাবা কখনও তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নি। 

আর কখনও দিবে ও না। 

বাবা আমায় খুব ভালো বাসে। 

কোনো কিছুর কমতি বা অভাব রাখেনি। 

কিন্তুু বাবার পরিবারে কেউ জানে না তার একটা মেয়ে রাশিয়াতে বেড়ে উঠছে। 

আমাকে এখন দেখলে কেউ চিনতে পারে না যে আমি বাঙালি। 

সবাই রাশিয়ান ই বলে। 

কিন্তুু সবচেয়ে বড়ো কথা আমি বাংলা ভাষা বলতেই সবচেয়ে পছন্দ করি। 

রাশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি শেষ করে সরকারি চাকরি তে যোগ দি। 

এর মধ্যে আমি জাতীয়তা পেয়ে গিয়েছি রাশিয়ার নাগরিক হিসাবে। 

বাংলাদেশ আর যাওয়া হলো না। 

তবে ইচ্ছে আছে বাংলাদেশ এ যাওয়ার। 

বাবা এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে দেশে একবারে চলে যায়।

আর আমি ও চাকরির সুএে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি। 

২০১৩ র দিকে এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়। 

ছেলেটা বাঙালি ছিলো। 

তবে সে রাশিয়াতে সেটেল্ড ছিলো। 

তার সাথে একটা পর্যায়ে প্রনয়ের সম্পর্কে যায়।

বিষয় টা বাবাকে শেয়ার করি। 

আর তাকে আমি আমার কালো অতীত বলি। 

তারপর ২০১৪ তে আমাদের বিয়ে হয়।

বিয়ে টা বাবাই আমাকে দেয়।

২০১৭ তে আমার একটা ছেলে হয়। আমি তখন বাংলাদেশে যায়।প্রায় ২৭ টা বছর পর কিন্তুু মার কবরে আর যাওয়া হয় না। বাংলাদেশ এর চিটাগাং এ আমার শশুর বাড়ি। কিন্তুু আমার শশুর শাশুড়ী রাশিয়াতেই থাকে আমাদের সাথে। 

আমি পুরো বাংলাদেশ ঘুরি বরের সাথে। 

সত্যি বলতে আমার বর আমায় অনেক ভালো বাসে। 

সে আমায় মন দিয়ে বোঝে। 

বাবা চিটাগাং এ আসে ৩ দিন থেকে আবার চলে যায়।

বাংলাদেশ আমার খুব ভালো লাগে। ৩ মাস থেকে আমি আবার রাশিয়াতে চলে যায়।

এখন আমি যখন ছুটি পায় দেশে চলে আসি। 

২০২০ সালে এখন আমি আবার ২য় বারের মতো গর্ভবতী। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য। 

আসলে জীবন আমাকে ২য় বার সুযোগ দিয়েছে। 

আর আমি আমার বাবার কাছে কৃতজ্ঞ আমাকে এত সুন্দর ভাবে জীবন সাজিয়ে দেওয়ার জন্য।সত্যি বলতে সব আল্লাহর ইচ্ছে। 


কিন্তুু আমি এখনও গর্বের সাথেই বলি আমি পতিতার সন্তান। 

পতিতা-দের জীবনি আমি যেভাবে বলছি তার চেয়েও করুন।

দোয়া করবেন তাদের জন্য।


......সমাপ্ত......


লেখিকা: নুসরাত হক


এমন আরও অনেক বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।