বাস্তব জীবনের কিছু গল্প

বাস্তব জীবনের কিছু গল্প

প্রতিদিন গোসলের পর যখন আপনার ছোট বোন কিংবা বড় বোন নয়তো আপনার মা কাপড় শুকাতে দেওয়ার পরে, আপনি যদি গিয়ে দেখেন তাদের ব্যবহৃত ব্রা ঝুলছে। তখন আপনি কি করেন?

চোখটা হয়তো সাথে সাথে অন্য দিকে সরিয়ে নেন নয়তো পাশে থাকা ওড়না দিয়ে  চোখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে সেটা ঢেকে দেন। ভুলেও চোখটা আর এইদিকে ফিরান না।

সেইম একই জিনিসটা যখন পাশের বাসার ছাদে কিংবা বেলকনিতে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন তখন হা করে তাকিয়ে থাকেন আর পাশে থাকা বন্ধুকেও খুব আগ্রহ সহকারে দেখান।

একটা কাহিনী বলি,


আমাদের বাসায় আমি আর আমার কাজিন মৌমিতা থাকি। ও আমার সাথেই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো।  আমাদের বাসার ছাদেই ছিলো ছেলেদের মেস, ৫ জন কলেজ পড়ুয়া ছেলে, তরুন ছেলে দেখে বাবা আদর করেই তাদের ছাদের একপাশে তাদের মেসের ব্যবস্থা করে দেয়। তারা ছাদে থাকতো যেহেতু আমাদের ছোট তাই ছোট ভাইয়ের মতই সবাইকে আদর করতাম, ভালোবাসতাম। অনেক বিষয় নিয়ে গল্প করতাম, পরামর্শ দিতাম, বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে ওদের দিয়ে আসতাম খেতে। মাঝে মাঝে ওদের দিয়ে টুকটাক কিছু কিনতে পাঠাতাম, নিজের ভাইকে যেমন পাঠায়। ওদের আচরনেও মনে হতো আমাদের বেশ সম্মান করে, ভালোবাসে। ভাই না থাকার কষ্ট যেন আমরা ভুলেই যেতাম ওদের পেয়ে।


একদিন বাসায় বুয়া আসে না, ধোঁয়া কাপড় গুলো আমি আর মৌমিতা মেলে দিয়ে আসি। একটু পরে আবার ছাদে যাই আমরা, সিড়ির এক পাশেই ওদের থাকার মেস, হঠাত একজনের গলা শুনি বলছে মৌমিতা আপুরটা বেশি বড়। আমাদের কান খাড়া হয়ে যায়, দাঁড়িয়ে পড়ি।  

ইমনের গলা শুনি প্রশ্ন করে ও,

"কিরে, কি করছিস তোরা? আর তোদের হাতে কি?"

রায়হান তখন হেসে বললো,

"ফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছি"

ইমন বলল,

"মানে!"

তখন রায়হান  তার হাতে রাখা ব্রাটা দেখিয়ে বললো,

"এটা মিতা আপুর"

আর সজীব  তার হাতেরটা দেখিয়ে বললো,

"এটা মৌমিতা আপুর"


আমরা গোসলের পর এইগুলো যখন শুকাতে দিয়ে যাই তখন নাকি ওরা নিয়ে আসে।   ইমন ওদের অনেক বুঝিয়েছে যে, এই কাজগুলো করা উচিত না। অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বাদে সুস্থ মানুষ এইকাজ গুলো করতে পারে না। এমনকি ওদের ভয়ও দেখিয়েছে এইসব করলে আপুদের বলে দিবো।  কিন্তু রায়হান আর সজীব উল্টো ভয় দেখিয়ে বললো, এইসব বললে ওরা সবাই বলবে ইমনও ওদের সাথে ছিল। 

তারপরও ও বারবার যখন ওদের বুঝানোর চেষ্টা করছিল তখন রায়হান রেগে গিয়ে বলেছিলো,

"তোর এত জ্বলে কেন? ওরা তো আর তোর বোন না।"

ওদের কিছু না বলে নিচে চলে আসি, যাদের এতো আপন করে নিলাম তাদের থেকে এই আচরন পেয়ে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আমরা দুজন। তারপর থেকে কখনো ওদের  সাথে কথা বলে নি।  এমন কি কাউকে কখনোই দোকান থেকে কিছু আনতে বলিনি। 

একদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে ইমন সামনে এসে সালাম দিলো- ওকে দেখে ভুরু কুচকে গেলো।

"আপু, বাসায় যাবেন? চলেন একসাথে যাই।"

শুকনো হাসি হেসে বললাম, 

"না, যাও তুমি"

ও তখন বললাম,

"আপু আসেন তো।  ভাই বোন যাবো সমস্যা কি?"

তখন হেসে বললাম,

"ভাই বোন গেলে তো কোন সমস্যা নেই।  কিন্তু সমস্যাটা হলো তোমরা তো আমাকে বোনের চোখে দেখো না।"

এই কথা বলে একটা খালি রিকসা ডেকে চলে এলাম, ছেলেটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, বুঝতে পারছি আত্মগ্লানিতে ভুগছে ছেলেটা, একমাত্র ও প্রতিবাদ করেছিলো, তবুও বাকীদের জন্য ওকেও এড়িয়ে চলা ছাড়া উপায় ছিলো না।  এর ঠিক পরের দিন ইমন এই মেস ছেড়ে অন্য মেসে চলে যায়। মনে মনে ভাবি ভালোই হলো শুধুমাত্র ওর জন্য কাউকে এই বাসা থেকে তাড়ানোর জন্য বাবাকে কিছু বলিনি। ও ভালো কোন সঙ্গের সাথে থাকুক, ওর মতো মনের ওর মতো ভাববার মানুষদের সাথে থাকুক। মানুষের ভিতর খারাপ অভ্যাস গুলো ছোঁয়াছে রোগের মত হয়। যা খুব সহজেই অন্য একটা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যায়। হয়তো একদিন ও বাকীদের মতো হয়ে যেত। ও চলে যাওয়ার পরে বাবাকে বলে বাকী সবাইকে নোটিশ দিয়ে বের করে দেই বাসা থেকে।

 

মেস থেকে যাবার সময় ইমন একটা চিঠি লিখে যায় আমাদের দুইজনের জন্য, ও লিখে আপু আমার নিজের জমজ একট বোন আছে, আমি এক বোনের সাথে মায়ের পেটে ছিলাম, এই দুনিয়ার বুকে আমি অন্য কোন বোনের অসম্মান করতে পারি না আপু। কখনো ভাই না ভাবো দুঃক্ষ নেই, অমানুষ ভেবো না। চিঠির মধ্যে জলের ফোঁটা, মনে হচ্ছে ছেলেটা লিখছিলো আর কাঁদছিল। অজান্তে আমাদের দুজনের চোখেও জল চলে আসে, দোয়া করি ছেলেটা ভালো থাকুক। ওর জন্য এখনো সব ছেলেদের অসভ্য ভাবতে কষ্ট হয়। 

__


আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা চলছে।  খাতা দেওয়ার ঠিক বিশ মিনিট পরেই একটা মেয়ে স্যারকে বললো,

"স্যার, একটু ওয়াসরুমে যাবো"

মেয়েটার কথা শুনে স্যার রেগে গিয়ে বললো,

"২০ মিনিট যেতে না যেতেই ওয়াসরুম পেয়ে গেছে? তা আগে থেকেই ওয়াসরুমের ভিতর বই রেখে এসেছো নাকি?"

মেয়েটি মাথা নিচু করে বললো,

" স্যার প্লিজ, আমার এই মুহুর্তে যেতে হবে"

স্যার তখন মেয়েটিকে জোরে ধমক দিয়ে বললো,

"১ ঘন্টার আগে কোন ওয়াসরুমে যাওয়া যাবে না। চুপচাপ পরীক্ষা দাও"

স্যারের ধমক শুনে মেয়েটি চুপচাপ বসে ছিলো। আমি খেয়াল করছিলাম মেয়েটি খাতায় কিছু লিখছে না।  বসে থেকে মেয়েটি যখন নিরবে চোখের জল ফেলছিলো।  তখন স্যার চিৎকার করে বললো, 

"সারাবছর লেখাপড়া না করে  বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরাঘুরি করবে আর পরীক্ষার হলে এসে কান্নাকাটি করবে"


১ঘন্টা পার হবার পর  স্যার যখন মেয়েটিকে বললো ওয়াসরুমে যেতে তখন মেয়েটি স্যারের কাছে জমাকৃত ভ্যানিটি ব্যাগটা সাথে নিয়ে ওয়াসরুমে যেতে চাইলো।  স্যার তখন বললো,

"ব্যাগের ভিতর বই রেখেছো নাকি যে এটা নিয়ে ওয়াসরুমে যেতে হবে?"

মেয়েটা মাথা নিচু করে বললো,

"স্যার আমার শারীরিক সমস্যা হচ্ছে"

স্যার তখন বললো, 

"কি এমন সমস্যা শুনি  যে সাথে ব্যাগ নিয়ে যেতে হবে?'

উৎপল তখন চিৎকার করে সোজা দাঁড়িয়ে বলল,

"স্যার, আপনি কি সত্যিই বুঝতে পারছেন না মেয়েটার কি সমস্যা হচ্ছে? নাকি তার মুখ থেকে শুনার জন্য এমন করছেন?"


ওর কথা শুনে ওর পিছন থেকে সাইফুল দাঁড়িয়ে বললো,

"স্যার বুঝবে কি করে, স্যার তো কোন মেয়ের ঘরে জন্ম নেয় নি।  স্যার আকাশ থেকে টপ করে পরেছে "


সাথে সাথে কয়েকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

"ব্যাগটা খুলে স্যারকে একটু দেখিয়ে যে তো ব্যাগের ভিতর  বই না আছে প্যাড।  আর একটা  প্যাড স্যারকেও  দিবি স্যার যেন সেটা পরে বসে থাকে"


মুহূর্তের মধ্যে ক্লাসের সবাই স্যারকে অপমান করতে লাগলো। আর স্যার কি বলবে না বলবে এটা ভেবে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলো।  আমি তখন ভাবছিলাম সমাজে যেমন অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ আছে তেমনি কিছু সুস্থ মানুষও আছে। শুরুটা সাহস করে একটা ছেলে করেছিল তারপর আরেকটা ছেলে আর শেষটা বাকিরা সবাই করছে। এই জন্য এখনো ছেলেদের উপর এখনো বিশ্বাস হারাতে পারি না। 


সব শিক্ষকরাই বাবার মত হয় না। কিছু কিছু শিক্ষক পরিমলের মতও হয়। যারা ছাত্রীদের ভোগের বস্তু বানিয়ে ফেলে।

আমাদের দেশে প্রায় ৩০ শতাংশ মেয়েরা অপদস্ত হয় স্কুল কলেজ ভার্সিটির শিক্ষক দ্বারা। কোন ছাত্রীই শিক্ষকের সামনে অশ্লীল পোশাক পরিধান করে যায় না। তবুও খবরের কাগজ খুললে দেখা যায় শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী ধর্ষিত।

তবুও অনেক শিক্ষক বাবার চেয়ে বেশি আদর করেন। সন্তানের স্থান দিয়ে আগলে রাখেন। 


"দুনিয়াতে কিছু মানুষ আছে যারা কখনোই ঠিক হবে না তেমনি কিছু মানুষ একেবারে অপরিচিত মানুষ, আপনার ভাই হয়ে, বাবা হয়ে আগলে রাখবে। আমরা তাদের আশায় বিশ্বাস হারাই না, তাদের জন্য ভালোবাসা কমে না। প্রতিদিন উৎসুক হয়ে থাকি এমন একজন মানুষের সাথে আমাদের দেখা হোক। এমন একজন মানুষ আমার চলার পথে বাসের পাশের সিটে বসুক।


আরও এমন গল্প পড়ুন।