রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

ম*দ খাইয়ে মাতাল করে লাবন্যর সাথে কয়েকবার শারীরিক মেলামেশা শেষে লাবন্যর ন*গ্ন শরীরের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি হাসলো আয়ান। মনে মনে ভাবছে এত অহঙ্কার এত বড়াই কোথায় গেল আজ।


লাবণ্য আবারও আয়ানকে টেনে কাছে এনে আয়ানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে মাতাল হয়ে উঠলো আয়ানকে একান্তে পেতে।

নিজেকে সেচ্ছায় বারবার মেলে ধরে উজাড় করে দিচ্ছে আয়ানের কাছে। 


আয়ানও সুযোগটা নিয়ে নিচ্ছে ইচ্ছে মতোই, কারণ লাবন্যর নে*শা কেটে গেলেই হয়তো অনেক বড়ো কিছু হবে। কোটিপতি বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে বলে কথা। 


আজ আয়ান যেটা করেছে সেটার প্ল্যান সেদিন থেকে আয়ান শুরু করে যেদিন কফিশপে লাবন্যকে প্রস্তাব দেয়ায় সবার সামনে আয়ানকে ভীষণ অপমান করে সেদিন। 


শহরের অভিজাত এলাকায় লাবন্যর বাবার বাড়ি এবং ভীষণ দাপট। একই এলাকায় একটা ফ্ল্যাট কিনে আয়ানরা থাকে এবং আয়ানের বাবা একটা ব্যবসা করে।


আয়ানদের চেয়ে লাবন্যদের লেভেল অনেক উচুতে। মেয়ে হলেও লাবন্যকে দেখলে এলাকার ছেলেগুলো চোখ নিচু করে থাকে। কারণ লাবন্য একবার ক্ষেপে গেলে তার খবর করে ছাড়ে।


আমেরিকা থেকে আয়ান লেখাপড়া শেষ করে দেশে আসে, দেশেই সেটেল্ড হবার স্বপ্ন তার। একদিন বিকেলে আয়ান বাসার নিচে রোডের সাইটে দাড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিল এমন সময় লাবন্যও তার বাইক নিয়ে যাচ্ছিলো। বাইক চালানোর খুব শখ লাবন্যর। তো রাস্তার ভাঙা যায়গায় পানি জমে ছিল এবং সেখানে লাবন্যর বাইকের চাকা পড়তেই নোংরা পানি ছিটকে এসে আয়ানের গায়ে পড়ে। 


— হেই স্টুপিড— বলে আয়ান ঘুরে দাড়িয়ে বাইকে বসা লাবন্যকে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যায়। 


মেয়ে নয় যেন আসমানের পরী, দেখতে, সৌন্দর্যে,  পোশাকআশাকে সবকিছুতেই স্পষ্ট যে লাবন্যর ব্যাকগ্রাউন্ড কত স্ট্রং। এবং পার্সোনালিটি কতটা ধারালো। 


হেই ইস্টুপিট শব্দটা লাবন্যর কানে যেতেই বাইক ব্রেক করে ছুটে এসে আয়ানের কলার ধরে বললো— ইস্টুপিট মানে! আর কে তুই যে তোর এতবড় কলিজা আমাকে স্টুপিড বলা।


ঝালমুড়ি বিক্রেতা ফিসফিস করে আয়ানকে বললো— মামা কথা বাড়াইয়েন না সমস্যা হবে, লাবন্য আপাকে মনে হয় চিনেননা আপনি। ঐ যে ইংরেজিতে কি যেন বলেনা ঐটা বলে মাফ চান আপার কাছে। 


রাগে লাল হয়ে আছে লাবন্যর গাল, গোলাপি ঠোঁঠদুটো যেন এখনই ফেটে যাবে পাঁকা ডালিমের মতোই। আয়ানের কিন্তু রাগ হচ্ছে না, লাবন্যর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে লাবন্যর দিকে। 


লাবন্য আরও রেগে গিয়ে বললো— কিরে কথা বের হচ্ছেনা এখন, স্যরি বল নইলে আজ দিনের ভেতরেই তোর হাত পা ভেঙে রাস্তায় বসাবো বলে দিলাম। 


আয়ান আবার হেসে ফেললো। 


আয়ানও দেখতে শুনতে নায়কের চেয়ে কোন অংশে কম নয়, আর আয়ানের মায়াবী হাসিতে যে কেউ কাবু হবেই তাতে আর ভুল নেই। কিন্তু লাবন্য কাবু হবার মেয়ে নয় একদমই। 


আরও শক্ত করে লাবন্য আয়ানের কলার ধরে বললো— দেখ আমার মাথায় রক্ত ওঠার আগে স্যরি বল, নয়তো নিজের পায়ে হেটে আর মা বাবার কাছে ফিরতে পারবি না বলে দিচ্ছি। 


এবার আয়ান মিষ্টি হেসে লাবন্যর গাল টেনে দিয়ে বললো— লাবন্য গোলাপ সবাই ভালোবাসলেও গোলাপের কাটা কিন্তু সবার অপছন্দ। তুমি গোলাপের মতোই সুন্দর কিন্তু তোমার ব্যবহার ঐ কাটার মতোই ভয়ঙ্কর। 


লাবন্য ভীষণ অবাক হয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে কটমট করে বললো— তোর এতবড় সাহস তুই আমাকে স্পর্শ করেছিস!


ধমক দিয়ে আয়ান বললো— এই থামো তো, স্পর্শ করেছি তো বেশ করেছি, নিজে অপরাধ করে স্যরি বলার নাম নেই উল্টো আমার পেছনে পড়ে আছো। 


— তোকে দেখে নেবো— বলে রাগী চোখে আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো লাবন্য। 


আয়ান এগিয়ে এসে একেবারে লাবন্যর মুখোমুখি দাড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বললো— নে দেখ, মন ভরে দেখ, দেখা শেষ হলে বলিস।


লাবন্য গিয়ে বাইকে উঠে স্টার্ট করতেই আয়ান গিয়ে বাইকের সামনে দাড়িয়ে লাবন্যকে বললো— ব্যাপারটা খারাপ লাগলেও তোরে আমার ভালো লাগছে ভীষণ, দেখা হবে আবারও। 


লাবন্য চলে গেল। 


লাবন্য যেমন জেদি তেমনই রাগী। আয়ানকে একটা চরম শিক্ষা দিতে হবে ভেবে প্ল্যান করলো সেদিন। 


পরদিন এলাকার ছেলেপুলে নিয়ে এসে আয়ানের বাসায় হুমকি ধামকি দিয়ে যায় লাবন্য। আয়ান লাবন্যর পাগলামি দেখে হাসে।


আসলে লাবন্যকে মনে ধরেছে খুব আয়ানের, এমন মেয়েগুলো আবার খুব ভালো মনের হয়। যাকে ভালোবাসে তার জন্য জীবন দিতেও পিছপা হয়না। 


দিন যায়, চলার পথে দুজনের চোখাচোখি হয়। একসময় আয়ান নিজে থেকেই স্যরি বলে রাগারাগির অবসান ঘটাতে চায়।


একদিন আয়ান প্রপোজ করে লাবন্যকে। লাবন্য বলে এভাবে নয়, ওমুক কফিশপে কালকে উপস্থিত লোকজনের সামনে যদি প্রপোজ করতে পারো তবেই ভেবে দেখবো।


আসলে আয়ানকে অপমান করার জন্য যে লাবন্য প্ল্যান করেছে সেটা আয়ান বুঝতে পারেনি।


পরদিন সেই কফিশপে আয়ান একটা গোলাপ নিয়ে হাজির। কফিশপে ভর্তি মানুষজন। একপাশে কয়েকটি টেবিলে সব লাবন্যর বন্ধু বান্ধবীরা। লাবন্য অপেক্ষায় ছিল। 


আয়ান কফিশপে ঢুকেই এগিয়ে এসে লাবন্যর সামনে দাড়িয়ে গোলাপটা লাবণ্যর দিকে বাড়িয়ে ধরে জোরে বললো— আই লাভ ইউ লাবন্য। 


এবার লাবন্য হাততালি দিয়ে হেসে উঠে বললো— তোদের মতো রাস্তার ছেলেদের ধান্ধাই হলো সস্তায় ফুল কিনে কোটিপতির মেয়েদের পটানোর। কি করে ভাবলি তোর মতো একটা রাস্তার ছেলেকে আমি ভালোবাসবো? আরে তোকে এত এত লোকের সামনে অপমান করবো বলেই তোর সাথে বন্ধুত্বতার একটু অভিনয় করে এ পর্যন্ত নিয়ে আসলাম। একটা কথা মনে রাখবি, কুকুরের জন্য পচা বাসি খাবারই পার্ফেক্ট, এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা বোকামি। 


আয়ান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে লাবন্যর দিকে। 


লাবন্যর বন্ধু বান্ধবীরা সবাই হাসাহাসি করছে আয়ানকে নিয়ে। আর কফিশপের বাকি লোকজন চুপচাপ। 


গোলাপটা আয়ানের হাত থেকে নিয়ে নিচে ফেলে পায়ের তলায় পিষে লাবণ্য বললো— গোলাপের মতোই তোর স্থান এই পায়ের তলায় বুঝলি।


আয়ান আচানক লাবন্যর হাত ধরে টান মেরে লাবন্যকে কাছে এনে...


গল্পঃ প্রেম_মানে_পাগলামি। 

(০১ পর্ব)


গল্পঃ-প্রেম_মানে_পাগলামি 

( ০২ পর্ব ) 


লাবন্যর হাত ধরে কাছে টেনে সবার সামনেই লাবন্যর ঠোঁটে চুমু খেয়ে আবার ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলো আয়ান।


কফি-শপে উপস্থিত সকল লোকজন অবাক হয়ে পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে আয়ান ও লাবন্যর দিকে। রাগে লাবন্যর শরীর কাঁপছে থরথর করে। 


একটা টেবিলের ওপর বসে চেয়ারে পা রেখে আয়ান লাবন্যকে বললো— তুই বললি রাস্তার ছেলে, আরে দেহটা রাস্তায় পড়ে থাকুক অথবা রাজপ্রাসাদে, ভালোবাসা কিন্তু দেহের ভেতর হৃদয় মাঝেই থাকে সবার। অর্থ আভিজাত্যের কাগজে মোড়ানো তোর মন কীভাবে বুঝবে কোনটা নির্লোভ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা? কোটিপতির মেয়ে বলে নয়, মন তার গন্তব্য খুঁজে পেয়েছে তোর মাঝে তাই তোর প্রেমে পড়েছে। আমি তোকে চেয়েছি তোর বাবার টাকাপয়সা নয়।


রেগেমেগে লাবন্য বললো— এটা একদম ভালো করলি না, তোকে যদি দুইদিনের মধ্যে এলাকা ছাড়া না করেছি তাহলে আমার নাম লাবণ্য চৌধুরী নয় মনে রাখিস। 


আয়ান লাফ দিয়ে টেবিলের ওপর থেকে নেমে লাবন্যর সামনে দাড়িয়ে লাবন্যর কোমর ধরে টেনে এনে বুকের সাথে চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে বললো— সে তুমি লাবন্য চৌধুরী হও আর যে-ই হও, এলাকা ছাড়লেও তোমায় ছাড়ছি না মিস, মাইন্ড ইট।


লাবণ্য রাগে গজগজ করতে করতে বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে চলে গেল।


একজন ওয়েটার ডেকে আয়ান কফি অর্ডার করে বসলো। এক যুবক এগিয়ে এসে আয়ানের পাসের টেবিলে বসে হাসতে হাসতে বললো— ভাই আপনারই কপাল!


আয়ান আড় চোখে তাকিয়ে বললো— কেন আপনার কপাল কি কপাল নয়?


যুবক বললো— ভাই কফিশপে এসে সবাই কফি খায়, আপনি খাইলেন চুমু তা-ও আবার পরীর মতো একটা মেয়েকে। এর জন্যই বলছি আপনারই কপাল। 


— আচ্ছা আচ্ছা, তো আপনার জ্বলে নাকি চুমু খেতে দেখে? 


— ধুর কি বলেন, ভাত জোটেনা কফি খাবার চিন্তাভাবনা তো বিলাসিতা, কফি খাইতেই হিমসিম খাই চুমু খাওয়া তো দিবাস্বপ্ন। তাই আর জ্বলেনা, অনেক আগেই নিভে গেছে।


— মানে?


— প্রেম পিরিতের মোমবাতি। 


— হা হা হা, নাম কি আপনার? 


— জ্বি আমি মজনু। 


— তাহলে লাইলির হাতে লাইটার তুলে দিলেই হয়, নিভে যাওয়া মোমবাতি আবার জ্বালিয়ে দিবে।


— ভাই লাইটার ছাড়াই জীবনটাকে এমন ভাবে জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে যে রাতদিন তার বিরহে জ্বলছি। কফিশপে এসে আপনার রোমান্টিক সিন দেখে পেছনের স্মৃতি মনে পড়ে গেল তাই কথা বলার ইচ্ছে হতেই চলে এলাম আপনার কাছে। 


ওয়েটার এসে আয়ানের সামনে টেবিলে কফির কাঁপ রেখে গেল। 


কাপটা ধরে আয়ান কফিশপের মেঝেতে ইচ্ছে করে ফেলে দিতেই মজনু লাফিয়ে উঠে বললো— এ কি করলেন? 


আয়ান শান্ত গলায় বললো— অর্ডার যেহেতু আমি করেছি সেহেতু কফিটা আমারই ছিল তাইনা? এখন কোনো একটা কারণে কফিটা আমি খেতে পারিনি বলে কি আজীবন এই একটা কফির জন্য আফসোস করে মরবো? একদমই না। আবেগ বাদ দিয়ে নতুন করে অর্ডার করে খেয়ে নিলেই হলো। এটা সামান্য একটা উদাহরণ মাত্র। যেটা আপনার নয় সেটা কিছুতেই আপনার হবেনা, তাই তাকে নিয়ে ভেবে দুঃখ হতাশা দীর্ঘায়িত না করে নতুন করে ভাবুন, নতুন করে শুরু করুন পথচলা।


আয়ানের কথায় ভীষণ খুশি হলো মজনু। মজনু নিজে পুনরায় দুকাপ কফি অর্ডার করে দু'জন মিলে খেয়ে মজনু বিদায় নিলো।


সন্ধ্যার পরে আয়ান বাসায় ফিরে সবকিছু এলোমেলো, ভেঙ্গেচুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেখে ভুল বাসায় ঢুকে পড়ছে ভেবে বের হয়ে যাবে এমন সময় আয়ানের বাবা বললো— বাসা ঠিকই আছে বাবা শুধু জিওগ্রাফি পাল্টে গেছে। তা মেয়েটা কে শুনি?


আয়ান থতমত খেয়ে বললো— কোন মেয়ের কথা বলছো বাবা?


বাবা বললো— সাইক্লোনের মতো এলো, এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে সাথের গুন্ডারূপি বুলডোজার দিয়ে সবকিছু তছনছ করে চলে গেল। সত্য করে বলতো কি এমন মহৎ কর্ম সাধন করলি যার ফলাফল সাইক্লোন হয়ে এলো। 


আয়ানের মা বললো— তুমি থামো তো, আমার ঐটুকু ছেলে আর এমন কি করবে। 


আয়ানের বাবা বললো— আহা হা, ঐটুকু ছেলে! মনে হচ্ছে তোমার ছেলে এখনও ফিডার খায়। তোমার ছেলের জন্য সাজানো সংসার ভেঙ্গেচুরে ভেস্তে গেল। 


মা বললো— সে যায় যাক, সবকিছু আবার নতুন করে কেনা যাবে, কিন্তু মেয়েটাকে হাতছাড়া করা যাবেনা বুঝলে আয়ানের বাপ।


দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়ানের বাবা বললো— ভালোই বুঝতে পারছি, আমার ওপর অত্যাচার বাড়াতে দল ভারী করতে চাও।


আয়ানের বাবার কথা শুনে আয়ান ও আয়ানের মা হেসেই অস্থির।


আয়ানের বাবা বললো— তবে যা-ই হোক মেয়ের ক্যারেক্টার কিন্তু আমার দারুণ লাগছে আয়ানের মা। ছেলের বউ হিসেবে দারুণ হতো। 


হাসতে হাসতে আয়ানের মা বললো— প্রশংসা করছো নাকি ইশারা ইঙ্গিতে ছেলেকে লেলিয়ে দিচ্ছো?


— বাবা তোমরা সবকিছু গোছগাছ করো আমি আসছি— বলে আয়ান নিচে নেমে এসে বাইক স্টার্ট করে সোজা লাবন্যর বাসার কাছাকাছি এসে থামলো। 


দেয়াল টপকে পাইপ বেয়ে দোতলার বারান্দায় এসে সোজা লাবন্যর রুমে ঢুকে পড়লো। বেশ গোছানো পরিপাটি লাবন্যর রুম, লাবন্যর মতোই সুন্দর।


কিন্তু লাবন্য রুমে নেই! ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে বাথরুমের সামনে আসতেই ভেতর থেকে আসা ঝর্ণার পানির শব্দ পেয়ে আয়ান বুঝলো লাবন্য ভেতরে আছে হয়তো। 


রুম থেকে বেলকনির দরজা খোলা ছিল বলে আয়ান ঢুকতে পেরেছে রুমে, কিন্তু রুমের ভেতরের দরজা বন্ধ বলে অন্য রুম থেকে কেউ লাবন্যর রুমে আসতে পারবেনা বলে বাথরুমের দরজার সিটকিনি লক না করে গোসল করছিল লাবন্য। 


আয়ান বাথরুমের দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুলে গেল, শরীরের সব কাপড় খুলে গোসল করছিল লাবন্য। এই অবস্থায় লাবন্যকে দেখে যেমন আয়ান শকট, তেমন আচানক আয়ানকে দেখে লাবন্য হতভম্ব এবং নির্বাক। দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লাবন্য চিৎকার করবে এমন সময়...


গল্পঃ প্রেম_মানে_পাগলামি

 ( ০৩ পর্ব ) 

লেখকঃ হৃদয় আহমেদ চৌধুরী।


লাবন্যকে নগ্ন অবস্থায় বাথরুমে দেখে আয়ান শকট, আর আয়ানকে হঠাৎ এরকম উপস্থিত দেখে লাবন্য। 


লাবন্য দিশাহারা হয়ে চিৎকার করবে এমন সময় আয়ান বিদ্যুৎ গতিতে এগিয়ে গিয়ে লাবন্যর মুখ চেপে ধরে বললো— চিৎকার করলে হয়তো আমার জেল হবে, কিন্তু তোমার চরিত্রে আজীবনের জন্য কলঙ্কের দাগ লেগে যাবে যদি লোকজন জানতে পারে। 


আয়ানের হাতে লাবন্য কামড় দিতেই আয়ান হাত শরিয়ে ফেললো। লাবন্য দাঁত কটমট করে বললো— দেখার আর কিছু বাকি আছে? সব তো দেখা শেষ। 


আয়ান আবারও লাবন্যর দিকে তাকিয়ে বললো— এই সৌন্দর্য দেখে এক জনমে মন ভরবেনা মিস। এভাবে লক্ষ জনম দেখার সাধ জাগে মনে। 


লাবন্যের নবযৌবনা শরীরের ভাজে ভাজে যেন প্রেমের জোয়ার বইছে। যুবকপ্রাণ এমন অবস্থায় নিজেকে সামলে রাখা দায় আয়ানের। লাবন্যর ভেজা চুলের ঘ্রাণে মাতাল হয়ে উঠেছে আয়ানের মন। লাবন্যর শারীরিক গঠন এভাবে খোলামেলা যেজন দেখবে, সে আর কোনদিন অন্য মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবেনা হয়তো। লাবন্য থ মেরে দাড়িয়ে আছে অপলক আয়ানের দিকে চেয়ে। পাশেই ঝোলানো একটা তোয়ালে টেনে হাতে নিয়ে লাবন্যর গায়ে জড়িয়ে দিলো আয়ান।


লাবন্য এখনও চুপচাপ। আয়ান ঘুরে লাবন্যকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে লাবন্যর গলায় কিস করে শরীরে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো— তোমার কাছে পাগলামি মনে হলেও আমার কাছে তুমি আমার প্রথম প্রেম। তোমার প্রতি এই প্রেম একদিন দুদিন নয়। সারাজীবন যত্ন করে রাখার এবং একসাথে বাঁচার পরিকল্পনা আমার। দেখতে চাই তোমার যেদ ও অহঙ্কার জিতে যায় নাকি আমার প্রেম। 


জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের স্পর্শে ভালোলাগা এবং ভয়ের মিশ্র অনুভুতিতে কাঁপছে লাবন্যর শরীর। ইচ্ছে হচ্ছে এই স্পর্শ আরও আরও পেতে তাই চাইলেও সেই চাওয়ার টানে সরে যেতে পারছেনা লাবন্য।


আয়ান আবার ঘুরে পেছন থেকে লাবন্যর সামনে এসে লাবন্যকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে বললো— প্রেমে একটু পাগলামি না থাকলে হয় বলো। প্রেম মানেই তো পাগলামি। 


কথা শেষে আয়ানের ঠোঁট ডুবলো লাবন্যর ঠোঁটে। অন্যরকম এক ভালোলাগার বশে লাবন্যর হাতদুটো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আয়ানকে। লাবন্যর ইচ্ছে হচ্ছে এই অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী হোক, এই ভালোলাগা কভু না ফুরাক। 


লাবন্য ইচ্ছে করে শরীরে জড়ানো তোয়ালে ফেলে দিলো। আয়ান লাবন্যর ঠোঁটে গালে বুকে সবখানে মাতালের মতো আদরে আদরে ভরে দিতে লাগলো ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ায়। লাবন্যর শরীর যেন আরও আরও ব্যাকুল হয়ে উঠেছে, সব নিয়ম বাধা নিষেধ ভেঙে নিজেকে উজাড় করে দেবার নেশায় নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আয়ানকে বললো— আয়ান আজ তোমার জন্য সবকিছু উন্মুক্ত, যা ইচ্ছে তোমার করতে পারো।


আয়ান লাবন্যকে ছেড়ে দিয়ে তোয়ালেটা তুলে লাবন্যর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বললো— এপর্যন্ত, আপাতত এর বেশি কিছু নয়।


কথা শেষে লাবন্যকে পাজাকোলা করে কোলে তুলে রুমে নিয়ে আসলো আয়ান। 


লাবন্যর শরীরে যেন নেশা চড়ে গেছে আয়ানের ছোয়ার, নিজেকে সামলে রাখা দায়। আয়ানকে টেনে খাটের ওপর ফেলে আয়ানের বুকের ওপর ঝুকে পড়ে আয়ানের ঠোঁটে পাগলের মতো চুমু খেতে খেতে অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে লাবন্য। 


এভাবে কিছুক্ষণ চলার পরে আয়ান যখন উঠে চলে যাবে ঠিক তখন লাবন্য এমন ভান করছে যেন আয়ান লাবন্যর শরীর পেতে জোড়াজুড়ি করছে। 


আয়ান উঠে দাড়িয়ে বললো— তোমার মাথা পুরোপুরি গেছে নাকি লাবন্য! আমি জাস্ট তোমাকে এটাই বোঝাতে এসেছিলাম যে চাইলে আমি তোমার সর্বনাস করতে পারতাম, কিন্তু করিনি। 


লাবণ্য রহস্যময় হাসি হেসে বললো— আয়ান যে শরীর তুমি দেখেছো এবং স্পর্শ করেছো, সে শরীর আর কোনো পুরুষ কোনদিন দেখবেনা এবং স্পর্শও করতে পারবে না। তাই শুধু আজকের জন্যই তোমার কাছে নিজেকে পুরোপুরি উজাড় করে দিয়ে জীবনের প্রথম এবং শেষবারের মতো সেই সাদ পেতে চেয়েছিলাম যেটা একজন নারী পুরুষের কাছ থেকে পায়। কিন্তু তুমি তা হতে দিলেনা। যা-ই হোক এই লাবন্য হেরে যাবার মেয়ে নয়। আমার কাছে আমার জেদ আমার অহঙ্কার সবকিছুর চেয়ে বড়ো। সুতরাং তোমাকে হার মানানো আমার একমাত্র লক্ষ্য। শেষে আমি তোমার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার অভিনয় কেন করেছি জানো? কারণ রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। ঐ অংশটুকু দেখালেই জেলের ভাত তোমার জন্য রেডি হয়ে যাবে। এভাবে একটা মেয়ের রুমে ঢুকে তার ইজ্জত নষ্ট করার কেস মারাত্মক, আর তারচে বেশি মারাত্মক এই লাবন্য। পারলে নিজেকে বাঁচাও। যোগ্যকে পেতে হলে যোগ্যতা লাগে, দেখি তোমার কি যোগ্যতা আছে। 


আয়ান মুচকি হেসে বললো— লাবন্য তোমার কি মনে হয় আমি আমেরিকা গিয়েছিলাম ঝালমুড়ি বিক্রি করে ডলার উপার্জন করতে? নাকি লেখাপড়া করতে? খেলাটা জমবে ভালো। সমানে সমান না হলে খেলা জমেনা, দেখা যাক কি হয়।


কথা শেষে আয়ান চলে যাবার জন্য ঘুরে পা বাড়াতেই পেছন থেকে লাবন্য ডাক দিলো আয়ানকে। 


আয়ান লাবন্যর দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই...


গল্পঃ প্রেম_মানে_পাগলামি 

( ০৪ পর্ব ) 

লেখকঃ হৃদয় আহমেদ চৌধুরী।


লাবন্য শরীরে জড়ানো তোয়ালে খুলে ফেলে দিলো আয়ান ঘুরে তাকাতেই। আয়ান ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। লাবন্য বললো— দেখেই যখন ফেলেছো আরও দেখে নাও মন ভরে, বাকী জীবন তো জেলে কাটাতে হবে। 


আয়ান দুপা এগিয়ে লাবন্যর সামনে এসে দাড়িয়ে লাবন্যর বুকের মাঝখানে তিলটা আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে বললো— তোমার বুকের মাঝখানে যেমন তিলটা অসাধারণ, আমার হৃদয়ের মাঝে ঠিক তুমিও তেমন। জেলে থাকি আর যেখানেই থাকি বুকের ভেতর তুমি থাকবেই। আর হ্যাঁ তোমার মতোই নত স্বীকার করতে আমিও শিখিনি। তবে বিয়ের পরে কিন্তু তিলে রোজ চুমু খাবো বলে রাখলাম। 


তাচ্ছিল্যের সুরে লাবন্য বললো— দিবাস্বপ্ন। 


আয়ান বেরিয়ে চলে আসলো।


সকাল সকাল আয়ানের বাসার সামনে পুলিশের গাড়ি। আয়ানের নামে জোর করে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে কেস করেছে লাবন্য। 


আয়ান চুপচাপ, কোনো প্রতিবাদ না করে পুলিশের গাড়িতে উঠে বসলো।


থানায় এনে একটা সেলে ঢুকিয়ে রাখা হলো।


দুপুরের পরে কেউ একজন দেখা করতে আসলো আয়ানের সাথে।


একটা সুন্দরী যুবতী স্মার্ট মেয়ে এগিয়ে এসে আয়ানকে বললো— হাই, আমি মৌসুমি।


আয়ান বললো— আমি তো ওমর সানি নই আপনার হিরো অথবা স্বামী। আপনি ভুল যায়গায় এসেছেন। 


: হা, হা, হা, এমন পরিস্থিতিতেও আপনি এমন ফুরফুরে মুডে আছেন দেখে ভালো লাগলো আয়ান।


: ধন্যবাদ মৌসুমি। আসলে বিষয় কি জানেন? ছোটবেলায় শরীরে জ্বর আসলে যখন কিছু খেতে ইচ্ছে হতনা, তখন মা বলতো— জ্বর অবস্থায় কিছু না খেলে শরীর দূর্বল হয়ে যাবে, জ্বরের কাছে হেরে গেলে হবেনা, জ্বরকে হারিয়ে দিতে হবে। 

জীবনে সবক্ষেত্রেই এরকম ভাবা উচিৎ। বিপদে ভেঙে পড়লে সমস্যা আরও বাড়ে, চারদিক থেকে হতাশা ঘিরে ধরে। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের মনোবল মজবুত রাখা উচিৎ। 


: বাহ সুন্দর কথা বলেছেন, আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেননি! আপনি আমেরিকায় লেখাপড়া করতে যাবার আগে এক রাতের ঘটনা। হয়তো আপনার মনে নেই। আপনাদের সামনের ফ্ল্যাটে আমার থাকতাম। এক রাতে আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক করে। আপনি বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলেন, সবকিছু করেছেন আমার বাবার জন্য। সেই থেকে আপনার কাছে ঋণী। খুব ইচ্ছে ছিল একদিন সুযোগ পেলে যদি আপনার উপকারে লাগতে পারি। সেই সুযোগটা এসেছে। আমিও লেখাপড়া করে একজন উকিল এখন। আমার উকিল জীবনের প্রথম কেসটা আপনার হয়ে লড়তে চাই। 


: বাহ! তুমি সেই মৌসুমি! শুনে ভীষণ ভালো লাগলো। আসলে এই কেসে আমি যেকোনো মূহুর্তে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারি। কারণ গত রাতে আমাকে ফাঁসানোর কথাগুলো লাবণ্য বলার সময় তা আমার ফোনে রেকর্ড করেছি আমি। 


মোবাইল বের করে রেকর্ড চালু করলো আয়ান, রেকর্ড লাবন্য বলছে— আয়ান যে শরীর তুমি দেখেছো এবং স্পর্শ করেছো, সে শরীর আর কোনো পুরুষ কোনদিন দেখবেনা এবং স্পর্শও করতে পারবে না। তাই শুধু আজকের জন্যই তোমার কাছে নিজেকে পুরোপুরি উজাড় করে দিয়ে জীবনের প্রথম এবং শেষবারের মতো সেই সাদ পেতে চেয়েছিলাম যেটা একজন নারী পুরুষের কাছ থেকে পায়। কিন্তু তুমি তা হতে দিলেনা। যা-ই হোক এই লাবন্য হেরে যাবার মেয়ে নয়। আমার কাছে আমার জেদ আমার অহঙ্কার সবকিছুর চেয়ে বড়ো। সুতরাং তোমাকে হার মানানো আমার একমাত্র লক্ষ্য। শেষে আমি তোমার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার অভিনয় কেন করেছি জানো? কারণ রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। ঐ অংশটুকু দেখালেই জেলের ভাত তোমার জন্য রেডি হয়ে যাবে। এভাবে একটা মেয়ের রুমে ঢুকে তার ইজ্জত নষ্ট করার কেস মারাত্মক, আর তারচে বেশি মারাত্মক এই লাবন্য। পারলে নিজেকে বাঁচাও। যোগ্যকে পেতে হলে যোগ্যতা লাগে, দেখি তোমার কি যোগ্যতা আছে।


রেকর্ড শুনে মৌসুমি বললো— বাহ! তাহলে তো আর আদালতে যাবার দরকারই নেই। আমি দারোগার সাথে আলাপ করে আপনাকে এক্ষুনি নিয়ে যাবো সঙ্গে করে। 


আয়ান বললো— আমারও সেই প্ল্যান, এর জন্যই চুপচাপ পুলিশের গাড়িতে উঠে চলে আসি, যাতে লাবণ্য বুঝতে পারে আমি হাজতে। রাতে বের হবো ভাবছি। 


—তাহলে আমিও অপেক্ষা করি— মৌসুমি বললো।


আসলে আগেই দারোগাকে রেকর্ড শুনিয়ে সবকিছু মিটমাট করে রেখেছিল আয়ান।


রাতে বেরিয়ে মৌসুমিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় এসে অবাক আয়ান। বাসায় তালা ঝুলছে। মা বাবার ফোনে কল দিয়ে দেখলো ফোন বন্ধ। সামনের বাসার একজনের কাছে জিজ্ঞেস করতেই বললো আয়ানকে পুলিশ নিয়ে যাবার পরেই লাবন্য লোকজন নিয়ে এসে আয়ানের মা বাবাকে ভয় ডর দেখিয়ে ধমকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে তালা মেরে যায়। আয়ানের মা বাবা গ্রামের বাড়িতে চলে যায় তারপর। 


লাবন্য আয়ানকে মিথ্যা অপরাধে ফাসিঁয়েছে তাতেও আয়ান একটুও কষ্ট পায়নি। কিন্তু মা বাবার সাথে এমন আচরণ করায় মাথায় রক্ত চেপে যায় আয়ানের। 


আয়ান মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে লাবন্যর দম্ভ অহঙ্কার চূর্ণবিচূর্ণ করে তবেই মা বাবার কাছে ফিরবে।


কোটিপতির মেয়ে হওয়ায় দু'হাতে টাকা ওড়ানো অভ্যাস লাবন্যর। ইদানীং প্রায়ই বান্ধবীদের নিয়ে শহরের নাম্বার ওয়ান ক্লাবে আড্ডা মারে লাবন্য। 


বান্ধবীদের নিয়ে বিয়ার খাচ্ছে আর আড্ডায় মশগুল লাবণ্য। হয়তো প্রতিসোধের নেশায় বুদ হয়ে আছে। রাত অনেক হওয়ায় বান্ধবীরা চলে যেতে চাইলে লাবণ্য তাদের যেতে বলে ওয়েটারকে ডেকে আরও কড়া বিয়ার দিতে বলে। ওয়েটার আয়ানের কথা মতো বিয়ারের গ্লাসে ম*দ ঢেলে দেয় লাবন্যর গ্লাসে। লাবণ্য ম*দ খেয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়তেই আয়ান লাবন্যকে তুলে নিয়ে আসে। 


এর জন্যই গল্পের শুরুতে বলা হয়েছিল—


ম*দ খাইয়ে মাতাল করে লাবন্যর সাথে কয়েকবার শারীরিক মেলামেশা শেষে লাবন্যর ন*গ্ন শরীরের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি হাসলো আয়ান। মনে মনে ভাবছে এত অহঙ্কার এত বড়াই কোথায় গেল আজ।


লাবণ্য আবারও আয়ানকে টেনে কাছে এনে আয়ানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে মাতাল হয়ে উঠলো আয়ানকে একান্তে পেতে।

নিজেকে সেচ্ছায় বারবার মেলে ধরে উজাড় করে দিচ্ছে আয়ানের কাছে। 


আয়ানও সুযোগটা নিয়ে নিচ্ছে ইচ্ছে মতোই, কারণ লাবন্যর নে*শা কেটে গেলেই হয়তো অনেক বড়ো কিছু হবে। কোটিপতি বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে বলে কথা।


যাই হোক বর্তমানে ফিরি—


লাবন্যর নেশার ঘোর এখনও কাটেনি পুরোপুরি। 


আয়ান বললো— তোমার এত অহঙ্কার এত বড়াই আজ তোমার সর্বনাসের কারণ হলো লাবণ্য। আমি তোমাকে ভালোবেসে আপন করে পেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তার যোগ্য নও। আর কি আছে তোমার? একটা মেয়ের সবচেয়ে বড়ো সম্পদ তার দেহ, আর তোমার দেহটা আমার পাওয়া হয়েই গেল। আমার মা বাবাকে অপমান আমি কখনোই মেনে নেবোনা।


নগ্ন লাবন্য কাপড় দিয়ে নিজের শরীর ঢাকতে ঢাকতে ধীরে ধীরে বিছানায় বসে রহস্যময় হাসি হেসে বললো...


গল্পঃ প্রেম_মানে_পাগলামি 

( ০৫ পর্ব ) 

লেখকঃ হৃদয় আহমেদ চৌধুরী।


নগ্ন লাবন্য কাপড় দিয়ে নিজের শরীর ঢাকতে ঢাকতে ধীরে ধীরে বিছানায় বসে রহস্যময় হাসি হেসে আয়ানকে বললো— আয়ান তুমি কি ভেবেছো আমার দেহ ভোগ করে তুমি জিতে গেছো? হা হা হা, এখনও তুমিই হেরেছো ধোয়াশার আড়ালে। 


আয়ান ভীষণ অবাক হয়েও অতটা গুরুত্ব না দিয়ে চলে গেল। 


লাবন্য আবারও রহস্যময় হাসি হাসলো একবার। 


ভোর রাত, লাবন্যর ওখান থেকে ফিরে মেইন রোডের সাইট ধরে হাঁটছে আয়ান। অল্পসংখ্যক গাড়ির আসাযাওয়া ধীর গতিতে। 


হঠাৎ পেছনের দিক থেকে বিকট গুলির শব্দ সেইসাথে একটা বুলেট আয়ানের কানের পাশ ঘেষে সাৎ করে চলে গেল। 


আয়ান ঘুড়ে দাড়িয়ে দেখলো একটা মাইক্রোবাসে একজন মুখোশধারী আয়ানের দিকে বন্ধুক তাক করে দ্বিতীয় গুলি ছোড়ার নিশানা লক করছে। তাই দেখে আয়ান উল্টি মেরে রোডের সইট থেকে রোডের ভেতরে পড়লো কারণ আরও আরও চলমান গাড়ির ভীড়ে গুন্ডারা আয়ানের তেমন ক্ষতি করতে পারবেনা। 


এদিকে আয়ান যেই বরাবর রোডে উল্টি মেরে পড়েছে সেই সোজা সাই-সাই করে ছুটে আসা একটা সাদা প্রাইভেটকার আয়ানকে এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে কষে ব্রেক মেরে অন্যদিকে কাট করতেই প্রাইভেটকারটা ছিটকে গিয়ে কারেন্ট এর খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে রাস্তার বাইরে উল্টে পড়ে। 


গাড়ি জড়ো হয়ে যাওয়ায় আয়ানের ওপর আক্রমণ করা মাইক্রোবাসটা দ্রুত চলে যায়। 


আয়ানের মনে হলো তাহলে কি এসব লাবন্যর ষড়যন্ত্র? যাই হোক এসব পরে ভাবা যাবে। 


আয়ান দৌড়ে গিয়ে উল্টে যাওয়া প্রাইভেটকারের দরজা টেনেটুনে খুলে ভীষণ অবাক হয়ে যায়। গাড়ির ভেতর একজনই মানুষ এবং সে মেয়ে। মেয়েটিই ড্রাইভিং করছিল তাহলে। মেয়েটির চেহারা এবং পোষাক আসাক দেখে মনে হচ্ছে সম্ভ্রান্ত ঘরের উচ্চশিক্ষিতা মেয়ে। 


মেয়েটির পকেট থেকে বেরিয়ে ঝুলে থাকা একটি আইডিকার্ড দেখে আয়ান আরও অবাক হয়ে যায়। মেয়েটির নাম সুমু, এবং সুমু খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির জেনারেল ম্যানেজার। 


আয়ান লোকজনের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে সুমুকে গাড়ি থেকে বের করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে।


সুমুর ডানহাতে হালকা ফ্র্যাকচার হয়েছে এবং কপালের কাছ থেকে কেটে রক্তক্ষরণ। কিন্তু সুমুর জ্ঞান ফেরেনি এখনও। 


ডাক্তার এসে বললেন সুমুর জন্য দুই ব্যগ O+ ব্লাড দরকার ইমার্জেন্সি। আয়ান বললো ডক্টর তাহলে আর দেরী কেন, আমার ব্লাড গ্রুপও O+, নিয়ে নিন।


রক্ত দেয়া শেষে আয়ান ওয়েটিং রুমে বসে বসে ভাবছে— এক লাবন্যর ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে আরেক নির্দোষ সুমুর জীবন মরণের প্রশ্ন হতে হলো।


নিজেকে কোনভাবে স্থির করতে পারছে না আয়ান, কেমন একটা অপরাধ বোধে ছটফট করছে সারাক্ষণ। 


সেই সকাল থেকে আয়ান বসে আছে এক ভাবে, সুমুর জ্ঞান ফেরেনি এখনও। রাত প্রায় দশটা।


একজন নার্স এসে আয়ানকে বললো— স্যার ম্যাম এর জ্ঞান ফিরেছে, কথাবার্তাও বলছে। আপনাকে ডেকেছেন উনি। 


আয়ান চুপচাপ এসে সুমুর বেডের সাইডে চেয়ারে বসলো। চোখ খুলে আয়ানকে দেখে— বিপদ যে এত হ্যান্ডসাম এবং সুদর্শন হয় তা আপনাকে না দেখলে বুঝতাম না— বলে মুচকি হাসলো সুমু।


এমন অবস্থায়ও সুমুর এমন কথাবার্তা ভীষণ মুগ্ধ আয়ান। সুমুর চোখের দিকে তাকিয়ে আয়ান বললো— আসলে এটা ক্ষমার অযোগ্য জানি তবুও স্যরি আমি, এর বেশি আর কি বলার আছে বলুন। 


সুমু আবারও মুচকি হেসে বললো— তা বিপদ বলে কয়ে আসেনা জানি আমি, কিন্তু আপনি বিপদ কোথেকে এসে আমারই গাড়ির সামনে পড়েছিলেন শুনি? আর হ্যাঁ এটা ভেবে কষ্ট পাবেননা যে আপনার কারণেই আমার এই দশা, কারণ সবকিছু আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছেন সৃষ্টিকর্তা। এটা আমার কপালে ছিল তাই ঘটে গেল। আপনি বিপদ এই ঘটনার একটা উপাদান মাত্র, আর বাকিটা ওপরওয়ালা ইচ্ছে। তাই উল্টাপাল্টা ভেবে নিজে কষ্ট পেলে সেটা আপনার বোকামি। 


আয়ান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সুমুর কথা শুনছে আর মুগ্ধ হচ্ছে। 


আয়ানকে অন্যমনস্ক দেখে সুমু বললো— মিষ্টার বিপদ, আপনি নাহয় এক ধ্যানে আমার কথা গিলছেন, আমি কি গিলবো? আমার তো ক্ষুধা লাগছে খুব। 


— ও হ্যাঁ, তাইতো— বলে আয়ান দ্রুত বাইরে বেরিয়ে গেল।


একটা স্ট্রবেরি জুস এবং লাচ্ছি নিয়ে ফিরলো আয়ান। স্ট্রবেরি জুস এবং লাচ্ছি সুমুর পাশে রেখে খেয়ে নিতে বললো আয়ান।


ভ্রু কুঁচকে সুমু বললো— মিষ্টার বিপদ, কারো হাত পা ভেঙে দিয়ে তার সামনে বিরিয়ানির প্লেট দিয়ে যদি খেতে বলেন, হাত দিয়ে ধরার ক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে কি মনে মনে খাবে? এ তো দাওয়াত করে সামনে থেকে খাবারের প্লেট টেনে নিয়ে সসম্মানে বিদায় করে দেবার মতো অবস্থা। 


সুমুর কথা শুনে আয়ান হেসে ফেললো। 


আসলে সুমু এসব এজন্যই বলছে যাতে আয়ান একটু ইজি ফিল করে।


— তাহলে এখন উপায়?— আয়ান বললো। 


— উপায় তো একটাই, আপনাকে বাচাতে গিয়ে আমার হাতে শরীরে চোট, আপনার তো সবই ঠিক আছে, আপনি আমাকে খাইয়ে দিন— বলে মুচকি হাসলো সুমু।


— না মানে ইয়ে— 


— আপনি ইয়ে ইয়ে করতে থাকুন আর আমার পেটের নাড়িভুড়ি হজম হয়ে যাক ক্ষুধায়। 


আয়ান চামচ দিয়ে সুমুকে লাচ্ছি খাইয়ে দিতে দিতে বললো— আসলে আপনার বাসায় তো কিছুই জানেনা, জানানো হয়নি উপায় ছিলনা বলে। 


সুমু বললো— জীবনে যদি হঠাৎ করে কখনও খারাপ পরিস্থিতি এসে যায় তাহলে হুট করেই প্রিয়জনদের জানাবেননা, আপনার পরিস্থিতি তাদের সময়কেও খারাপ করে দেবে, টেনশনে ফেলে দেবে। তবে হ্যা খুশির সংবাদ শেয়ার করতে কখনোই বিলম্ব করবেননা, খুশি জিনিসটা যত দ্রুত সম্ভব শেয়ার করবেন, এটা অন্যদেরও মন ভালো করে তোলে তাই।


— কিন্তু আপনার পরিবারকে তো জানানো উচিৎ— আয়ান বললো। 


সুমু চোখের ইশারায় স্ট্রবেরি জুস দেখিয়ে দিতেই আয়ান সুমুর মুখের সামনে ধরলো, স্ট্র তে মুখ লাগিয়ে এক চুমুক দিয়ে সুমু বললো— আসলে আমার বড়ো ভাইয়া নিউইয়র্কে সেটেল্ড, আব্বু আম্মু কিছুদিন আগে সেখানে গেছে কয়েকমাস থাকবেন বলে। ঠিক এমন একটা মুহূর্তে আমার এই অবস্থার কথা তাদের জানালে তাদের মনের অবস্থা কি হবে একবার ভাবুন। হ্যা আমি যদি মরে যেতাম তাহলে জানানোটা অবশ্যাম্ভাবী ছিল। সুতরাং বর্তমান এই পরিস্থিতি আমিই সামলে নিতে পারবো তবে অবশ্যই আমি যতদিন সুস্থ না হয়ে উঠি পুরোপুরি ততদিন এভাবেই আমাকে আপনার সেবাযত্ন করতে হবে মিস্টার বিপদ। 


— না মানে ইয়ে— আমতা আমতা করে বললো আয়ান।


ভ্রু কুঁচকে সুমু বললো— ওসব ইয়ে মানে বাগানে ছুড়ে ফেলে আমার সেবাযত্নে মনোযোগী হোন, নয়তো ইচ্ছে হলে চলে যান। আপনি ভাবুন আপনার কারণে আমার এই অবস্থায় পাশে থাকবেন নাকি ফেলে চলে যাবেন? 


আয়ানের মা বাবাও গ্রামে চলে গেছে যেহেতু আয়ানও আপাতত একা শহরে। আয়ান ভাবলো আয়ানের কারনেই যখন এই অবস্থা সুমুর, তখন আয়ানের উচিৎ সুমুকে সেবাযত্ন করে সারিয়ে তোলা। 


নার্স এসে একটা কাগজ আয়ানের হাতে দিয়ে বললো— স্যার এই যে ম্যাডামের রিলিজ পেপার।


পেপারটা হাতে নিয়ে আয়ান অবাক হয়ে সুমুর দিকে তাকালো।


সুমু হেসে ফেলে বললো— এমন রিএকশন দিচ্ছেন যেন আমার বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্সির পজিটিভ রিপোর্ট আপনার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। 


আয়ান হেসে ফেলে বললো— না মানে ডক্টর এত জলদি আপনাকে যেতে দিচ্ছে দেখে অবাক হচ্ছি।


সুমু বললো— আসলে আমিই ডক্টরকে বলে ম্যানেজ করেছি মিস্টার বিপদ। এখানে থাকলে আমি আরও অসুস্থ হয়ে যাবো তাই জলদি বাসায় ফেরার ব্যবস্থা করলাম। 


নিচে এসে নার্সরা ধরে সুমুকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে চলে গেল। আয়ান উঠে বসবে এমন সময় একটা পুলিশের গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে কয়েকজন পুলিশ নেমে এ্যাম্বুলেন্স এর দিয়ে এগিয়ে আসছে দেখে আয়ানের বুকটা ধক করে উঠলো। এটা লাবন্যর নতুন কোনো চাল নয়তো?!


গল্পঃ-প্রেম মানে পাগলামি

 ( ০৬ পর্ব ) 

লেখকঃ হৃদয় আহমেদ চৌধুরী।


নেশার ঘরে লাবন্যর সাথে শারীরিক মেলামেশা করার পরে আয়ান তো চলে আসে। নেশা কেটে যাবার পরে হয়তো লাবন্য পুলিশের কাছে এসব কিছু বলেছে। 


এসব ভাবছে আয়ান দাড়িয়ে দাড়িয়ে আর পুলিশ এগিয়ে এসে গাড়ির পাশে দাড়ালো। সুমু পুলিশদের জিজ্ঞেস করলো— কি ব্যাপার আপনারা?


দারোগা বললো— ম্যাডাম আপনাদের কোম্পানি হাইয়েস্ট ট্যাক্স পে করে থাকে সবসময়, আর সরকারের কাছে হাইয়েস্ট ট্যাক্স পেয়ারদের নথি থাকে। এবং সরকার তাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেন। আপনার এক্সিডেন্ট এর ব্যপারে এবং রাস্তায় বন্দুকধারীদের গুলি চালানোর বিষয়ে আমারা অনুসন্ধান করছি। আপনি সাবধানে থাকবেন এবং আপনি চাইলে আপনার বাসায় কয়েকজন পুলিশ দিতে পারি আপনার সিকিউরিটির জন্য। 


সুমু মিষ্টি হেসে বললো— ওরা তো আমাকে উদ্দেশ্য করে গুলি করেনি সুতরাং এই বিষয়ে আমার সমস্যা নেই। আমি একজন বিপদকে বাঁচতে গিয়েই বিপদে পড়েছি এই আরকি। সমস্যা নেই আমি সামলে নেবো। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ আসার জন্য।


আয়ান হাফ ছেড়ে বাচলো। শুধু শুধু টেনশনে আধমরা হবার অবস্থা। 


এ্যাম্বুলেন্স বাসার সামনে আসতেই সুমুর ছোটবোন মিম এবং কাজের মেয়ে এসে গেট খুলে দিলো।


সবাই ধরাধরি করে সুমুকে তার বেডরুমে এনে শুইয়ে দিলো।


আয়ানকে দেখে মিম সুমুকে জিজ্ঞেস করলো— ইনি কে আপু?


— উনি মিস্টার বিপদ— বলে সুমু হেসে দিলো।


মিম হাসতে হাসতে বললো— আপু সবাই বিপদের কাছ থেকে পালায়, আর তুমি কিনা বিপদ সঙ্গে নিয়ে ঘুরছো।


আবার সবাই হেসে উঠলো। 


কাজের মেয়ে বললো— বিপদ যে এত সুন্দর হয় দেখতে তা এনাকে না দেখলে বুঝতাম না। আমাদের সবার জীবনে এরকম একটা বিপদ আসুক। 


আবার সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। 


সবার হাসাহাসি দেখে আয়ানের কাশি বেড়ে গেলো। তাই দেখে সুমু বললো— আরে ওরা মজা করছে, প্রেশার নেবার কিছু নেই। 


আয়ান আমতা আমতা করে বললো— নাম নিয়ে তো মহা বিপদে পড়লাম। 


মিম আবার বললো— আচ্ছা আচ্ছা, বিপদও তাহলে বিপদে পড়ে, আজ প্রথম জানলাম — হাহাহা।


আবার সবাই হেসে অস্থির। 


তারপর আরও অনেক অনেক কথাবার্তা শেষে মিম আয়ানকে বললো— আচ্ছা বিপদ ভাইয়া, আপনি যখন আপুর আপাতত কেয়ার টেকার, আপুর পাশের রুমটায় তাহলে আপনি থাকবেন, আসুন দেখিয়ে দিচ্ছি। 


আয়ানকে নিয়ে মিম পাশের রুমে চলে গেল। 


কাজের মেয়ে সুমুর পাশে বসে হেসে হেসে বললো— আপু একটা কথা কমু?


— আচ্ছা বলো।


— আপা বিপদ ভাইয়াও সুন্দর, আপনিও সুন্দর। আপনাগো দুইজনের বিয়ে হলে কি হবে বলেন তো?


— কী হবে? 


— সুন্দর সুন্দর বেবি হবে একেবারে গুলুমুলু।


— হাহাহা, এই কথা কে বললো তোকে?


— আপু চিপায় চাপায় সবাই বলে, এমন কি সাইন্সও বলে।


— হা হা হা, তোরও তো বিয়ে হলো অনেক দিন, বেবি নিসনি কেন। তোর একটা বেবি থাকলে সাথে করে নিয়ে আসতি আমরাও আদর করতে পারতাম। 


— আপু আমি তো চাইছিলাম, কিন্তু মহাকাশে পৌঁছানোর আগেই ওনার রকেটের তেল খতম হয়ে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে। 


— হাহাহা, থাম তুই। মহাকাশে কি বলতো?


— আপু বেবি তো আকাশ থেকেই আনতে হয় দুজন মিলে, কিন্তু ওনার রকেট বেশিক্ষণ উড়তে পারেনা।


— হাহাহা, তুই যা তো এখান থেকে। পাজি একটা। 


কাজের মেয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল।


যেকোনো পরিস্থিতিতে সুমু নিজেকে সুন্দর ভাবে মানিয়ে নিতে পারে বলেই আজ এতটা সফল সুমু, এতবড় কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার পদে সাফল্যের সাথে দ্বায়িত্ব পালন করছে। 


রাতে ডিনারের পরে সুমুর রুমে সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে আয়ান।


সুমু বললো— আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছেনাতো আয়ান।


— আরে না, আপনাদের মতো এত সুন্দর মন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের কাছে থাকলে আবার সমস্যা কি? 


— বাহ! একদিনেই কীভাবে বুঝলেন আমাদের মন মানুষিকতা সুন্দর? 


— আসলে আমার একটা বিশেষ গুণ আছে, কাউকে বুঝতে আমার বেশি সময় লাগেনা। অল্পতেই ধারণা এসে যায়।


— বেশ তো! তো মিস্টার বিপদ, ধারণা করে আমার সম্পর্কে কিছু বলুন তো আমি কেমন।


— ওকে; আপনি খুব গোছালো এবং সোজাসাপটা কথা বলা মেয়ে। খুব চঞ্চল আবার ভীষণ রকম চুপচাপ থাকতে পারেন। কাউকে ভালোবাসলে এবং বিশ্বাস করলে পুরোপুরি করেন, আবার সে যদি বিশ্বাস ঘাতকতা করে তাহলে আপনার মন থেকে চিরতরে উঠে যায়। নীরবতা আপনার প্রিয়, বিশেষ করে একলা থাকতেই বেশি ভালোবাসেন। আপনি সাহিত্য প্রেমী। কষ্ট লুকিয়ে রেখে স্বাভাবিক ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার ক্ষমতা আপনার আছে। মনের কথা সহজে কারো সাথে শেয়ার করেননা। আপনার যন্ত্রণাগুলো আপনাকে ভীষণ পীড়া দিলেও সহজে আপনার চোখে জল আসেনা। আপনার ব্যক্তিত্ব ভীষণ মজবুত। আপাতত এ পর্যন্তই। 


সুমু হা হয়ে তাকিয়ে আছে আয়ানের মুখের দিকে। ভীষণ বিস্ময় নিয়ে মুচকি হেসে বললো— আপনি কি জ্যোতিষ শাস্ত্রে পিএইচডি করেছেন নাকি আয়ান। এতকিছু বলে দিলেন। 


— না মানে কারো সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললেই তার সম্পর্কে একটা ধারণা চলে আসে মনে, বলতে পারেন এটা সাবকনসিয়াস মনের একটা অদ্ভুত শক্তি। 


দিনদিন আয়ানে মুগ্ধ হচ্ছে সুমু, আর সুমুতে আয়ান। ধীরে ধীরে দুজনের প্রতি দুজনের ভালোলাগা বাড়তে থাকে। 


প্রায় দুমাস হয়ে যায়। সুমু পুরোপুরি সুস্থ এখন কিন্তু আয়ানের সামনে ধরা দেয়না যে সে সুস্থ। তাহলে যদি আয়ান চলে যায়। সুমু চায় সামনে তার জন্মদিনে আয়ানকে সারপ্রাইজ দিতে। 


একদিন বাইরে থেকে ফেরার পথে আয়ান লক্ষ্য করে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে লাবন্য আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানের মাথা গরম হয়ে ওঠে মুহুর্তেই। এতকিছু করেও লাবন্যর মন এখনও ভরেনি!


আয়ান লাবন্যকে কিছু বলার জন্য এগিয়ে যেতেই লাবন্য গাড়ি নিয়ে চলে গেল। কিন্তু আয়ানের মস্তিষ্কে লাবন্যর প্রতি রাগের বিস্ফোরণ চলছে অবিরত। লাবন্যকে ইচ্ছে মতো কিছু কথা না শোনাতে পারলে শান্তি হবেনা।


দুদিন পরে লাবন্যর অফিসে উপস্থিত আয়ান। লাবন্যর টেবিলের সামনের চেয়ারে এক যুবক বসে আছে। লাবন্যকে কেমন অস্থির লাগছে। লাবন্যর মুখটা দেখে সমস্ত রাগ উড়ে গিয়ে মায়া লাগল আয়ানের মনে। 


আয়ানকে দেখেও ভীষণ চমকে গেল লাবন্য। 


আয়ান সোজাসাপটা বললো— লাবন্য শেষবারের মতো বলছি হার মেনে নাও, তাহলে আজই আমি তোমায় বিয়ে করে নিজের বউ করে বরণ করবো। এভাবে আর থাকা যায়না। 


সামনের চেয়ারে বসা যুবকের দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়িয়ে লাবন্য আয়ানকে বললো— তোর মতো একটা ছোটলোকের বাচ্চার কাছে হার মানবো আবার তাকে বিয়ে করবো ভাবলি কোন সাহসে। এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যা।


আয়ান একটা কথাও বললো না আর। চুপচাপ বের হয়ে চলে আসলো। লাবন্যকে পাওয়া হবেনা আর বোধহয়। 


লাবন্যর সামনের চেয়ারে বসা যুবকও বেরিয়ে যাবার পরে লাবণ্য কি ভেবে যেন কান্নায় ভেঙে পড়লো খুব। 


আরও দিন অতিবাহিত হচ্ছে, এদিকে লাবন্যর দেয়া কষ্ট জাদুকরী ভাবে সুমু আয়ানের মন থেকে দূর করে দিয়ে কাছে টেনে নিচ্ছে। আয়ানও সুমুতে মুগ্ধ। আয়ান জানে সুমু তাকে ভীষণ পছন্দ করে। 


অবশেষে সুমুর জন্মদিন এসে গেল। সুমু জন্মদিনের কথা আয়ানের কাছে লুকালেও আয়ান ঠিকই জেনে গিয়েছে। রাত বারোটায় আয়ানও সুমুকে সারপ্রাইজ দিবে বলে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে। এদিকে সুমুও।


রাত বারোটা বাজতেই আয়ান সুমুর ছোটবোন সুমুর রুমে হাজির হয়ে ভীষণ অবাক। নীল শাড়ি পরে সুমু দাড়িয়ে আছে সামনে, যেন স্বর্গের অপ্সরী। চোখ ফেরানো দায়।


সুমু মিষ্টি হেসে বললো— আয়ান জন্মদিনে তোমার জন্য বিশেষ সারপ্রাইজ, আমি পুরোপুরি সুস্থ তোমার সেবাযত্নে। ইচ্ছে হলে চলে যেতে পারো তবে তুমি ছাড়া আমার আর ভালো থাকা হবেনা তাহলে। 


আয়ান বললো— এসব কথা পরে। 


তারপর আয়ান ও সুমুর ছোটবোন সুমুকে পাশের রুমে নিয়ে গেল। সুমু ভীষণ সারপ্রাইজড। রুমটা ভীষণ সুন্দর ফুল ও রঙিন কাগজে সাজানো। ইয়া বড়ো এক কেক। আনন্দে নেচে উঠলো সুমুর মন।


বার্থডে উইশ শেষে কেক খেয়ে অনেক সময় অতিবাহিত হলো। যে যার রুমে চলে গেল। 


কিছুক্ষন পরে আয়ান এসে সুমুর রুমে ঢুকলো। সুমুর মুখে আনন্দের হাসি। সুমু যেন আয়ানের অপেক্ষাতেই ছিল। 


সুমু বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে হাসিমুখে বললো— কিছু বলবে আয়ান।


আয়ান পেছনে গুঁজে রাখা একটা প্যাকেট বের করে, প্যাকেট থেকে একটা সুন্দর বক্স বের করলো। তারপর সেই বক্স থেকে একটা স্বর্ণের হার বের করে সুমুর দিকে বাড়িয়ে ধরলো। 


সুমু এতটাই সারপ্রাইজড যে একদম থমকে গেল, মহানন্দে আত্মহারা। 


নিজেকে সামলে নিয়ে সুমু বললো— হারটা নিজের হাতে তুমি পরিয়ে দিলে আরও ভালো লাগবে আয়ান।


আয়ান হারটা সুমুর গলায় পরিয়ে দিলো।


আনন্দে সুমুর চোখে জল চিকচিক করে উঠলো। 


আয়ান সুমুকে বিছানায় উঠে বসে পা খাটের বাইরে রাখতে বললো। সুমু তা-ই করলো।


আয়ান সুমুর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে, প্যান্টের পকেট থেকে একজোড়া রূপার নুপুর বের করলো নীল পাথর বসিয়ে ডিজাইন করা। 


সুমু শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে। 


আয়ান সুমুর দুই পায়ে নুপুর পরিয়ে দিয়ে, সুমুর সুন্দর পায়ে একটা চুমু খেতেই সুমু লাফিয়ে উঠে বললো— এটা কি করলে আয়ান।


—ভালোবাসায় সব সুন্দর— বলে আয়ান সেই প্যাকেট থেকে একটা বকুল ফুলের মালা বের করে সুমুর খোঁপায় বেধে দিলো।


সুমু নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না। ভীষণ খুশিতে আয়ানকে কাছে টেনে আয়ানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে লম্বা চুমু খেলো পরাপর কয়েকবার। অনেক সময় কেটে গেল, রাত গভীর।


আয়ানের বুকের ওপর শুয়ে আছে সুমু। হঠাৎ করে সুমুকে নিচে ফেলে আয়ান সুমুর ওপর ঝুকে পড়ে বললো— অনেক চেষ্টা করেও মনকে বোঝাতে ব্যর্থ হলাম সুমু, সে খাবেই খাবে তোমার ঠোঁটে চুমু। 


সুমু লজ্জামাখা হাসি হেসে বললো— বারণ তো করিনি। 


তারপর ধীরে ধীরে আয়ানের ঠোঁট স্পর্শ করলো সুমুর ঠোঁট। অন্যরকম এক আনন্দের খেল খেলে যাচ্ছে দুজনের দেহ মনে। সুমু আরও গভীর ভাবে পেতে চাইছে আয়ানকে। 


আয়ানের আদরে আদরে সুমু পাগলপ্রায়। সুমুও আয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পুরোপুরি উপভোগ করতে লাগলো আয়ানের আদর। আয়ান ধীরে ধীরে সুমুর কপালে, গলায়, বুকে, পেটে, কোমরে, ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ায় পাগল করে তুলছে সুমুকে আরও আরও। 


সুমুর সমস্ত দেহমন প্রচন্ড ভাবে আয়ানের এই স্পর্শ পেতে আরও ব্যাকুল হয়ে উঠলো। সুমু নিজেকে আয়ানের সামনে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দিতেই আয়ান...


গল্পঃ-প্রেম_মানে_পাগলামি

 ( ০৭ ও শেষ পর্ব ) 

লেখকঃ হৃদয় আহমেদ চৌধুরী।


সুমুর সমস্ত দেহমন প্রচন্ড ভাবে আয়ানের এই স্পর্শ পেতে আরও ব্যাকুল হয়ে উঠলো। সুমু নিজেকে আয়ানের সামনে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দিতেই আয়ান হঠাৎ করে উঠে দাড়িয়ে বললো— কিছুটা বাকী থাক সুমু, ওটা নাহয় বিয়ের পরেই হবে। পৃথিবী চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে, চলো বাইরে যাই চাঁদ দেখি।


হঠাৎ করে আয়ানের নিজের ওপর নিজের এমন পরিবর্তন দেখে ভীষণ অবাক সুমু। পুরুষ এরকম মুহূর্তে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে শুনেছে সুমু। কিন্তু এরকম মুহূর্তে নিজেকে আয়ান নিয়ন্ত্রণ করে ভিন্ন একটা সাবজেক্ট এর দিকে ফোকাস করায় এটাই প্রমাণ হয় যে আয়ান ভীষণ ধৈর্যশীল। মনে মনে সুমু খুশীই হলো।


কিছুক্ষণ নীরবতা তারপর মিষ্টি হেসে সুমু আবদার করে বললো— যেতে পারি আয়ান, যদি তুমি কোলে করে নিয়ে যাও তবে। 


আয়ান কোনো কথা না বলে চুপচাপ পাজাকোলা করে কোলে তুলে সুমুকে নিয়ে বাইরে চলে আসলো। দীর্ঘ সময় চাঁদ দেখা গল্প করা শেষে আবার যে যার রুমে। 


সুমু আর দেরী করতে চাইলোনা। ফোন করে আয়ানের সম্পর্কে সবকিছু বলে, মা বাবাকে জলদি দেশে ফিরতে বললো।


কয়েদিন বাদে সুমুর মা বাবা দেশে ফিরে আসে এবং আয়ানের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আয়ান ও সুমুর বিয়ের কথাবার্তা পাকা করে আসে। 


কাজের মেয়ে সুমুর রুমে ফ্লোর মুছছে আর সুমু খাটে বসে কোলে বসা বিড়ালের পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করে দিচ্ছে। 


হঠাৎ কি মনে করে মুচকি হেসে কাজের মেয়ে বললো— সুমু আপা একটা কথা বলি?


কাজের মেয়ে বললো— বিড়ালকে এত আদর করে লাভ কি আপা?


সুমু অবাক হয়ে বললো— মানে?


কাজের মেয়ে বললো— মানে কয়দিন পরেই তো এই বিড়াল যত্ন করে মারবেন! 


সুমু আরও অবাক হয়ে বললো— কি বলিস এসব? 


কাজের মেয়ে হা হা করে হেসে বললো— কেন বিয়ের পরে বাসর ঘরে আপনি আর আয়ান ভাইয়া মিলে তো বিড়ালই মারবেন সারারাত, হা হা হা।


সুমু লজ্জা পেয়ে হাসতে হাসতে বললো— চুপকর তুই, ফাজিল একটা। বিকেলে আমরা শপিং করতে যাবো, তুইয়ো যাবি। কাজ শেষ করে রেডি হয়ে থাকবি কিন্তু। 


ভীষণ খুশি হয়ে— আচ্ছা আপা— বলে কাজের মেয়ে কাজে মন দিলো।


বিকেলে সুমু, সুমুর ছোটবোন, কাজের মেয়ে এবং আয়ান মিলে বের হলো শপিং এর উদ্দেশ্যে।


একটা নামকরা শপিংমলে শপিং করতে ব্যস্ত সবাই। হাসিখুশী পরিবেশ মুহূর্তে এমন ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে কে জানতো!


হঠাৎ বিকট এক শব্দ, মুহুর্তে আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া, তারপর গুলিবিদ্ধ সুমুর মাটিতে লুটিয়ে পড়া। 


মানে সুমু আয়নায় খেয়াল করলো মুখোশধারী কয়েজনের মধ্যে একজন আয়ানের দিয়ে বন্ধুক তাক করেছে। সুমু ধাক্কা দিয়ে আয়ানকে সরিয়ে দিতেই মুখোশধারীর বন্দুকের গুলি এসে সুমুর মাথার এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। সুমু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রাণ হারালো। 


ইতিমধ্যে পুলিশ নিয়ে হাজির লাবন্য। পুলিশ সঠিক সময়ে চারপাশ থেকে ঘেরাউ করে ফেলেছে বলে খুনী আর পালাতে পারেনি। 


যেই দোকানে কেনাকাটা করার সময় এই কান্ড ঘটেছে সেই দোকানের সামনে এসে লাবন্য দাড়ালো বিষন্ন মুখে। এই কদিনে লাবন্যর চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। 


লাবন্যকে দেখে মাত্র ক্ষিপ্র গতিতে আয়ান ছুটে এসে ঠাস ঠাস করে লাবন্যর গালে কষে দুটি থাপ্পড় মেরে বললো— সুমুর প্রাণ নিয়ে এবার তোমার মন ভরলো? চেয়েছিলে তো আমাকে মারতে, মাঝখানে আমাকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ দিয়ে গেল নিরীহ নিষ্পাপ সুমু। প্রেম কাকে বলে শেখো, দ্যাখো প্রেমের জন্য মানুষ নিজের প্রাণ দিতেও দ্বিধাবোধ করেনা। আর তুমি একজন অহঙ্কারী মেয়ে। 


লাবণ্য খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো— আয়ান আজও তুমি হেরেই গেলে। তবে আজ তোমাকে কিছু বলার সময় হয়েছে। আমার বাবা তার ছোটভাই মানে আমার চাচার ছেলে শুভর সাথে আমার বিয়ে দিবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু শুভর আমার প্রতি কখনোই কোনো অনুভূতি ছিলনা, ছিল আমার বাবার সম্পদের ওপর লোভ। তাই আমাকে হারালে ওর প্ল্যান ভেস্তে যাবে বলেই যেদিন ও জানতে পারে আমি তোমাকে পছন্দ করি, এবং তুমি আমাকে। সেদিন থেকে ও তোমার পিছে পড়ে যায়। শুভ ভয়ংকর, বড়ো বড়ো সন্ত্রাসী মাস্তানের সাথে ওঠাবসা ওর। আমি সবকিছু বুঝতে পেরে তোমাকে ভালোবাসি বলেই তোমার ভালোর জন্য তোমার সাথে দূর্ব্যবহার করে তোমাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। তোমার মা বাবাকে জোর করে বাসা থেকে বের করে দেবার কারণ শুভ তার লোকজন নিয়ে যেন মা বাবার ক্ষতি করতে না পারে। আমি যতই তোমার থেকে দূরে থেকেছি ততই দিশেহারা হয়ে রয়েছি দেখেই শুভ বুঝে যেত তোমাকে আমি কতটা চাই। এর জন্যই তোমার ওপর একের পরে এক হামলা। আজ দুপুরের পরে শরবতের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শুভকে খাইয়ে দেই। ও ঘুমিয়ে পড়ার পরে ওর ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ওর মোবাইল আনলক করে মেসেজে দেখি ও কিলারের সাথে চুক্তি করেছে তোমাকে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার। পুলিশে খবর দিয়ে এখানে আসতে আসতে হয়তো একটু লেট হয়েছে তাই সুমুর প্রাণ হারাতে হলো। আয়ান আসলেই প্রেম মানে পাগলামি। পাগলামি বলেই তোমার ভালোর জন্য নিজের ভালোথাকা বিসর্জন দিলাম। জীবনটা হঠাৎ কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। যা-ই হোক তুমি ভালো থেকো। আর কোনো ভয় নেই তোমার। 


লাবন্যর কথা শুনে আয়ান বাকরুদ্ধ পাথরের মূর্তির মতো অনড় হয়ে দাড়িয়ে আছে। কি বলবে ভেবে পায়না।


লাবণ্য চলে যায়। 


প্রায় মাস দুয়েক পরে। আয়ানের বাবা-মা ইতিমধ্যে গ্রাম থেকে আবার শহরে ফিরেছে। 


লাবন্যর ভালোবাসা কখনও বুঝতে পারেনি বলে অপরাধ বোধে এবং লজ্জা ও চরম হতাশায় আয়ান ডিপ্রেশনে, দিনদিন শরীর ভেঙে পড়ছে। 


আয়ান সিদ্ধান্ত নিলো আবার আমেরিকা চলে যাবে। লাবণ্যর সামনে গিয়ে দাড়ানোর সাহস আর নেই আয়ানের। 


সবকিছু রেডি করে নির্দিষ্ট দিনে বাসা থেকে রওয়ানা হলো আয়ান। 


এয়ারপোর্টে ঢুকবে এমন সময় লাবন্যর গাড়ি এসে থামলো, দ্রুত গতিতে গাড়ি থেকে নেমে এসে লাবন্য পেছন থেকে আয়ানের হাত টেনে ধরলো। আয়ান ঘুরে দাড়িয়ে লাবন্যকে দেখে ভীষণ অবাক। 


লাবণ্য বললো— বিয়ের পরের কাজকর্ম আগেই সেড়ে এখন আমেরিকা যাওয়া হচ্ছে তাইনা?


আয়ান লাবন্যর মুখ চেপে ধরে বললো— আরে আস্তে বলো, আশেপাশের লোকজন শুনে ফেললে কেলেংকারী ঘটে যাবে তো।


আয়ানের হাতে কামড় দিতেই আয়ান হাত সরিয়ে নিলো। লাবন্য বললো— আমেরিকা যান অথবা মঙ্গল গ্রহে আগে বিয়ে করে প্রেম মানে পাগলামি চ্যাপ্টার ক্লোজ করে বউ মানে ভালোবাসার অধ্যায় শুরু করে যাও।


আয়ানের চোখে আনন্দে পানি টলমল করছে। 


লাবন্য মিষ্টি হেসে বললো— না বলা কথাটাও আজ বলে দেই তোমায়।


তারপর এত এত লোকের ভীড়ে লাবণ্য আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো— ভালোবাসি আয়ান, আই লাভ ইউ। 


আয়ানের বুকটা একেবারে হালকা হয়ে গেল। শক্ত করে লাবন্যকে জড়িয়ে— আমিও তোমায় ভীষণ ভালোবাসি লাবণ্য — বললো আয়ান।


এরপর বিয়ে হয়ে যায় দুজনের। সমাপ্ত হলো পাগলামির, রয়ে গেল প্রেম ভালোবাসাময় একটা সুখের ছোট্ট সংসার। 


সমাপ্ত।


গল্পঃ প্রেম_মানে_পাগলামি

লেখকঃ হৃদয় আহমেদ চৌধুরী।


পর্রবের আরও অনেক গল্প পড়ুন।