বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প

বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প

গল্প-মরা বাগানের ঝরা ফুল

ভাইয়া, আমারে একটি খেলনা কিনা দিবা ??

জানো ভাইয়া ,

আমার বান্ধবী রিমি , সাথী ,

জাহানারা , আয়েশা ও সুমাইয়া

সবারই অনেক সুন্দর সুন্দর খেলনা আছে ।

আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ওরা এগুলা নিয়ে খেলা করে।

আমি খেলতে চাইলে

ওরা বলে আমাকে খেলা নেওয়া

যাবে না ।

কারণ আমরা নাকি গরীব ??

গরীবরা নাকি ছোটো লোক হয় ,

আর অনেক লোভী হয়!!!

ভাইয়া আমরা গরীব কেন ?

আমরা কি সত্যিই লোভী ভাইয়া ????

সাত বছর বয়সী বোনের প্রশ্নের

কোনো উত্তর দিতে পারেনা

রেহুমান ।

রেহুমানরা দুই ভাই বোন ,

বাবা আব্দুর রহমান পাঁচ বছর পূর্বে

মারা গেছেন .

মা রিজিয়া খানম তিনিও পরলোক গমন করেছেন তিন বছর হলো ।

তাই একমাত্র বোন নাদিয়া ,

রেহুমান এর জান প্রাণ সবই বলা যায় ।

বাবা মা হারা দুই ভাই বোন

একে অপরের সুখে দুঃখের সাথী ।

রেহুমানের যতো কষ্টই হোক না কেনো

বোন নাদিয়ার সকল চাওয়া পূরণের

প্রাণাপণ চেষ্টা করে সে ।

কিন্তু রেহুমান এর আজ বাকশক্তি

হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম ,

বোনের নানা রকমের ছেলে মানুষী

আবদার , চাওয়া গুলো পূর্ণতা না

পাওয়ার কষ্ট ,

বোনের মুখের দিকে তাকাতে বড়ই

লজ্জা লাগে রেহুমানের ।

নাদিয়ার অধিকাংশ ইচ্ছে গুলোই

অপূর্ণ থেকে গেছে তার অপারগতার

কারণে ।

বোনের হাত ধরে রেহুমান বলে কে

বলেছে আমরা গরীব ???

আমাদের টাকা পয়সা না থাকতে

পারে কিন্তু আমাদের রয়েছে মনুষত্ব,বিবেক ,

আমাদের যা রয়েছে তা অনেক

ধনীরই নেই ।

ওদের অনেক কিছু থাকতে পারে ,

কিন্তু মনে নেই কোনো শান্তি , মমতাবোধ !!!

পিচ্চি নাদিয়া ভাই রেহুমানের

ভারী ভারী কথার কিছুই বুঝে না ।

শুধু অঝরে তার চোখে অশ্রু ঝরতে থাকে।

সে অনেক কিছুই বুঝে না , কিন্তু এটুকু বুঝতে

পেরেছে যে , এ ছোট্ট জীবনে সে

অনেক কিছুই হারিয়েছে

মানুষের করুন দৃষ্টিগুলো তার দিকে

নিপতিত হতে দেখে ।

কি পাশবিক মুহূর্ত গেছে কয়েকদিন

তার উপর ।

মুহুর্মুহু নির্যাতনে বারবার জ্ঞান

হারিয়েছে নাদিয়া , তবুও থামেনি

বর্বরদের নির্যাতন ।

পালাক্রমে তার ছোটো শরীরটাকে

নিয়ে খেলেছে হায়েনার দল ।

যখন তারা ভেবেছে ছোটো

নাদিয়ার আর প্রাণ নেই তখন ফেলে

গেছে গভীর রাতে স্কুলটার পাশে ।

রেহুমান অনেক চেষ্টা করেছে

বাঁচাতে প্রাণ প্রিয় বোনটিকে ,

আল্লাহর রহমতে বোন বেঁচে গেলেও

আজও অপরাধীরা শাস্তি পায়নি ,।

এ সমাজ , এ রাষ্ট্র তাদের ন্যায় বিচার

প্রাপ্তি নিশ্চিত করেনি ।

তাই অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে বহাল

তবিয়তেই ঘুরে বেড়াই ।

আর নির্মম নির্যাতনের শিকার

নাদিয়া , রেহুমানরা লজ্জা ও

অপমানে মাথা নিচু করে বাঁচতে

বাধ্য হয় ।

এ এক অদ্ভুত দেশ , আর দেশের মানুষ

গুলোও বড় অদ্ভুত ।

আজ নাদিয়া ষোলো বছরের যুবতী ,

বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায়

নেই ,

কতটা দুঃখ কষ্ট আর মনো বেদনা নিয়ে

বেঁচে আছে সে !!!

সেই ছোটো বেলায় যে ভয়াবহ ঘটনা

ঘটেছিল তার জীবনে , তারপর

থেকে আজ অবধি ভাই রেহুমান তার মুখ

ভাইয়া ডাক শুনতে পাইনি ।

বোবা হয়ে গেছে নাদিয়া ,

এ বোবাত্ব যেনো চরম উপহাস করে

বুঝিয়ে দেয় এ দেশের মানুষ , সমাজ ও

রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে !!!

দেখো তোমার আদরের বোন ,

তোমার প্রাণের কন্যা ,

তোমার দেশের ইজ্জ্বত

কতটা অসহায় এদেশে , এ সমাজের বুকে।

তখন রেহুমানের মতো ভাইদের কিছুই

করার থাকে না , চোখের অশ্রু বিসর্জন

দেওয়া ছাড়া !!!!

আজ রেহুমানের অনেক টাকা পয়সা হয়েছে ।

কি নেই তার ????

কিন্তু জীবনের সব সুখই হারিয়ে গেছে

তার ।

একজন নাদিয়া একটি পরিবারের শুধু

রক্তে মাংসে গড়া একজন সদস্যই নয় !!!

একজন নাদিয়া একটি পরিবারের প্রাণ

,পরিবার নামক ফুল বাগানের সবচেয়ে

রঙিন ও সুগন্ধি ফুল ।

বাবার কলিজা ,

ভাইয়ের প্রাণের স্পন্দন ।

একটি পরিবারের সকল হাসি খুশীর

কেন্দ্রস্থল ।

----------------

এ সমাজ , এ দেশ

ও এ পৃথিবীর মানুষ গুলো

কবে বুঝবে বিষয়টা ???????

যদি কখনো বুঝে

তবেই এ পৃথিবী হয়ে উঠবে স্বর্গীয়ময় ।

আর তাহলেই কোনো নাদিয়া

,রেহুমানকে জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে

থাকতে হবে না এ পৃথিবীতে ।

----------

সমাপ্ত


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।