মিথ্যা ভালোবাসা

মিথ্যা ভালোবাসা

মাঝরাতে ইভার মোবাইলে মেসেজ আসলো- 'জানু, তোমার জামাই ঘরে আছে, না আমি আসব?'

আতিক মোবাইলটা খুব স্বাভাবিক ভ*ঙ্গি*তেই হাতে নিয়ে বসে আছে। যথেষ্ট ঠান্ডা গ৬লায় ইভাকে ডাকলো। ইভা ঘুমের ঘোরে বলল, কী হয়েছে?

: তোমার রোমিও মেসেজ পাঠিয়েছে। ও আসতে চায়।

- কই আসতে চায়?

: কই আবার? তোমার কাছে! আরেকটু সুন্দর করে বললে বলতে হয় তোমার বিছানায়।


ইভার ঘুম কে>টে গেল ম্যাজিকের মতো। সোজা হয়ে বসে টেবিল লাইটটা জ্বালিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে আতিকের দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ।

আতিক কিছু না বলে মোবাইলটা ইভার হাতে দিয়ে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। এমন ঘটনা আজ প্রথম না। প্রায় রাতেই ইভার মোবাইলে কল আসে। আতিক হ্যালো বলা মাত্রই লাইন কেটে যায়। গত সপ্তাহে একবার ঝামেলা হয়েছিল এটা নিয়ে। রাত তখন তিনটা। ইভা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল ফোনে। আতিক পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই ইভা লাইন কেটে দেয়। চার বছরের সংসারে একটা মানুষকে যথেষ্ট ভালোভাবে চেনা যায়। আতিক স্পষ্ট দেখলো ইভার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। আতিক শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছিল, কার সাথে কথা বলছিলে?

: তুমি কি আমাকে সন্দেহ করো?

- আমি জিজ্ঞেস করছি কার সাথে কথা বলছিলে?

: একটা নাম্বার থেকে প্রায়ই অদ্ভুত সব মেসেজ আসে। আমি কথা বলে জানতে চাচ্ছিলাম ইনি কে?

- ইভা, তুমি কি নাটক সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছ?

: কী বলতে চাও তুমি?

- বলতে চাই তোমার কী মনে হয় আমি ফিডার খাই?

: আতিক, তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু নয়।

- আমি যা ভাবছি তেমন নয়। যা দেখছি তেমনও নয়?

: কী দেখছ?

- আজ রাতে আমি অফিস থেকে ফেরার সময় কার গাড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল গেটের সামনে থেকে? কে এসেছিল?

: অদ্ভুত প্রশ্ন! এই বাড়িতে কী আমরা একাই থাকি না কি! কে কার কাছে কখন এসেছে, কার গাড়ি কখন বের হয়ে গেছে সেটা আমি কী জানি!

- আমার আসার সময়ই কেন গাড়িটাকে দেখি বারবার? একদিন নয়, বরং বলতে গেলে প্রত্যেক দিন।


এ পর্যায়ে ইভা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে রুমে এসে জিনসপত্র ভাঙচুর শুরু করে। চোর ধরা খাওয়ার পর বৃথা যে চেষ্টা চালায় নিজেকে ছাড়ানোর জন্য, ইভার অক্ষম রাগের আস্ফালনও ঠিক তেমনটাই দেখাচ্ছিল। 


বিয়েটা ওদের প্রেমেরই ছিল। কিন্তু মাত্র চারটা বছরে একটা মানুষ কতটা বদলে যায়! আতিক না হয় অফিস নিয়ে ব্যস্তই থাকে একটু। হ্যাঁ, মাঝেমাঝেই অফিসের কাজে কয়েকদিনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। আর এই সুযোগে! ছিঃ!


শেষ পর্যন্ত আর টেকা গেলো না। আজ ওদের চার বছরের সংসারের সমাপ্তি। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। ইভা নিজের সব জিনিসপত্র নিয়ে বাসা ছেড়ে যাচ্ছে। অনেকদিন সহ্য করেছে আতিক। কিন্তু সেদিন অফিস থেকে ফিরে বেডরুমে সিগারেটের ফিল্টার পাওয়ার পর ঘটনা আর কথা কা>টাকা>টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আতিক সিগারেট খায় না। বেডরুমে কে এসেছিল জিজ্ঞেস করতেই ইভা স্বভাবতই অস্বীকার করে। রাগারাগির এক পর্যায়ে গায়ে হাতও উঠে যায় এবং তখনি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত। এত তাড়াতাড়ি সবকিছু হয়ে গেল যা বলার মতো না!


ইভা সবকিছু নিয়ে গাড়িতে উঠে যাবার পরে আতিক ধীর পায়ে সোফাতে এসে বসলো। অফিসের সুন্দরী পিএ চৈতিকে ফোন দিয়ে বলল, সব ঠিকঠাক। এবার তুমি চলে আসতে পারো পার্মানেন্ট ভাবে।

: হা হা হা, প্ল্যানটা কিন্তু আমারই ছিল। ক্রেডিট দিবে না?

- আরে, হ্যাঁ! মাঝরাতে যদি তুমি ওইসব মেসেজ না পাঠাতে, ওভাবে ফোন না করতে আর সিগারেট ফিল্টারের ইস্যু তুলে ওর গায়ে হাত না তোলাতে তাহলে বাপু কিছুতেই এত সহজে ছাড়তো না আমায়। বুদ্ধি আছে তোমার মাথায়। হা হা হা!


ধোঁকা


এমন আরও অনেক বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।