রোমান্টিক ফেসবুক স্ট্যাটাস

রোমান্টিক ফেসবুক স্ট্যাটাস

চোখ বেঁধে বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম। যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে, আগে আমরা কেউ কাউকে দেখিনি। মেয়ের নামও গোপন রাখা হয়েছে। বিয়ে করার সময়ও আমার চোখ বাঁধা ছিল।


চোখ বেঁধে বিয়ে করা আমাদের বংশের কোন নিয়ম নয়। এর জন্য অবশ্য আমি নিজেই দায়ী।


কিছুদিন আগে, মাধবী নামের এক মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়। মেয়েটি বেশ সুন্দরী, আমারও তাকে বেশ পছন্দ হয়। পারিবারিক ভাবেই সবকিছুই ঠিক হয়।


বিয়ের পিড়িতে বসামাত্র আমার কেন যানি মাধবীকে ভালো লাগছেনা। মনে হলো, আরও ভালো করে খোঁজ নিলে হয়তো, মাধবীর চেয়ে সুন্দরী কাউকে পাওয়া যেত।


আমি বাবার কানে কানে বললাম, "বাবা আমি বিয়ে করবনা। মাধবীকে আমার পছন্দ হচ্ছেনা।"


বাবা আমার চোখের দিকে চেয়ে, দাঁত কিটমিট করছে। ইশারা করে বলল, চুপচাপ বসে থাকতে।


কি করব, না করব ভেবে পাচ্ছি না। যাকে পছন্দ হচ্ছে না, তার সাথে কি করে বাকী জীবন কাটাব। মনে মনে ভাবলাম, যে করেই হোক এখান থেকে আমাকে পালাতে হবে।


আমি বসা থেকে উঠে, এদিক ওদিক চেয়ে দিলাম এক দৌড়। কয়েকজন পিছু নিলেও আমাকে ধরতে পারল না। আমি বাড়ি এসে দরজা আটকিয়ে বসে রইলাম।


বাবা বাড়িতে এসে, ইচ্ছেমত বকল। তবুও ভালো লাগছিল, বিয়েটা তো আর করতে হয়নি। 

আমি চলে আসার পর, আমার বন্ধু রাতুলের সাথে মাধবীর বিয়ে দিয়ে সম্মান রক্ষা করেছে বাবা।


কয়েকদিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে কাটলেও, কয়েদিন পর থেকে আবার খারাপ লাগা শুরু হলো। এতবড় খাটে একা শুয়ে থাকা খুব কষ্ট হচ্ছিল।


বাবার সামনে গিয়ে কান ধরে উঠবস করে, ক্ষমা চাইলাম। আর কখনো এমন করব না বলে প্রতিজ্ঞা করলাম।


এর কিছুদিন পর। অনেক দেখেশুনে, নিপা নামের এক মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়। মাধবীর চেয়ে নিপা বেশ সুন্দরী। পারিবারিক ভাবেই সবকিছু ঠিক হয়।


বিয়ের দিন, সকল আত্মীয় স্বজন এসে উপস্থিত। শুধু আমার এক বন্ধু, নিশাত এখনো আসেনি। নিশাত আমেরিকায় সেটেল, ওখানেই বিয়ে করেছে গত বছর। আমেরিকা থেকে সরাসরি আমাদের বাসায় আসতেছে।


নিশাত আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। নিশাতের বউ দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। এত সুন্দর মানুষ হয়, ভাবতেই পারছিনা। নিশাত ডাব্বা মার্কা ছার্ত্র আছিল, লটারী পেয়ে আমেরিকা গিয়েছে। আর তার বউ এত সুন্দরী। নিশাতের বউ এর কাছে নিপা কিছুইনা।


একটা সাদা চামড়া ওয়ালা মেয়ে বিয়ে করতে পারলাম না। এ জীবন রেখে কি লাভ। যে করেই হোক বিয়ে ভাঙতে হবে। বরযাত্রা রওনা হবার কিছুক্ষন আগে, আমি বাড়ি থেকে পালাইলাম।


প্রায় মাস'দুয়েক এই বন্ধু ওই বন্ধুর বাসায় বাসায় কাটিয়ে দিলাম। দুমাস পর বাড়িতে গিয়ে বাবার পা জড়িয়ে ধরে, ক্ষমা চাইলাম।


সবকিছুই আগের মতো চলছিল। কিন্তু খাটের দিকে তাকালেই, কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে। আইবুড়ো হয়ে কতদিন থাকব?


চক্ষু লজ্জার বলি দিয়ে, আবারও বাবাকে বিয়ের কথা বললাম। কিন্তু বাবা কিছুতেই আমার বিয়ে দিবে না। আমার জন্য আর নতুন করে অপমানিত হতে পারবে না।


অনেক আকুতি মিনতি করে বললাম। কান ধরে উঠবস করলাম। কিন্তু কিছুতেই বাবা আমাকে আর বিশ্বাস করতে পারছে না। কিছুতেই বাবা আমার উপর আর ভরসা পাচ্ছেন না। বাবার ধারনা, আবারও এমন কোন ঘটনা ঘটবে, সে কোন রিস্ক নিতে পারবে না।


অবশেষে বাবার পা ধরে বললাম,

"তুমি যার সাথে বিয়ে ঠিক করবা, সেই মেয়েকেই বিয়ে করব। বিয়ের আগে ওই মেয়েকে দেখতে চাইব না, নাম কি সেটাও জানতে চাইব না। প্রয়োজনে আমার চোখ বেঁধে বিয়ে করতে নিয়ে যাইবা, বিয়ে হবার পর বাসরঘরে ঢোকার আগ পর্যন্ত আমার চোখ বাঁধা থাকব। তবুও বিয়ে দাও।"


আমার কথায় বাবার মনে দয়া হলো। বাবা আমায় বিয়ে দিতে রাজি হল।


অনেক খোঁজ করে, বাবার পছন্দ মতো ভালো একটা মেয়ের সন্ধান পায়। আজ তার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। তাকে এখনো আমি দেখিনি, কি নাম সেটাও জানি না। বাড়ি থেকে রওনা হবার সময়, শক্ত করে আমার চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। বিয়ের সময়ও চোখ বাঁধা ছিল। কনেপক্ষ আপত্তি করলে বাবা বলে, "আমাদের ফ্যামেলির হাজার বছরের ঐতিহ্য, বাসর ঘরের আগে বউ এর মুখ দেখা যাবে না।"


বিয়ে হবার পর, চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজায় তালা দেওয়া হয়েছে। যাতে, চাইলেও দরজা খুলে পালাতে না পারি।


বাসর ঘরে চোখ বাঁধা অবস্থায় দাড়িয়ে আছি। চোখের বাঁধন খুলে চাইতে বুক দুকদুক করছে। দেখতে কেমন হবে, না হবে, কে জানে।


বুক দড়ফড়ানি কমানোর জন্য আস্তে করে বললাম, 'তুমি কি গান গাইতে পারো?'


মেয়েটি আস্তে করে বলল, 'জি পারি।'


মেয়েটার ভয়েজ খুবই কিউট। আমি বললাম,

"তোমার প্রিয় একটা গান শোনাও।"


মেয়েটা গান শুরু করল। ভয়েজটা খুবই চেনা চেনা লাগছে। খুবই কাছের কেউ হবে। মনে হচ্ছে, জনম জনম ধরে তাকে আমি চিনি। আবেগ আপ্লুত হয়ে চোখের বাঁধন খুলে যা দেখলাম। তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।

বঁধু সেঁজে বসে আছে, রাণু মন্ডল।


আমি লাফ দিয়ে দরজা খুলতে গেলাম। বাইরে থেকে তালা দেওয়া। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে লাথি ধাক্কা দিতে লাগলাম....

কারার ঐ লৌহ কপাট

ভেংগে ফ্যাল দরজা কপাট

ওরে ঐ দরজা খোলা

কারার ঐ লৌহ কপাট

কারার ঐ লৌহ কপাট

কারার ঐ লৌহ কপাট


-গল্প: বিয়ে_বিভ্রাট 

             

এমন আরও অনেক মজার মজার রোম্যান্টিক গল্প পড়ুন।