না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প

না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প

" আমার শরীরের উপরে আবিদের কোনো চাহিদা ছিলো না।"


কিন্তু আমার যেই বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই তারপরে,

ভালোবাসার উপহার হিসেবে আবিদ আমার কাছে চব্বিশ ঘন্টা চেয়েছে। মানে একরাত এবং একদিন। সেই চব্বিশ ঘন্টা তার কাছে আমাকে বিলিয়ে দিতে হবে। তার ইচ্ছা মত আমার সময় কাটাতে হবে।


কোন পরীক্ষার মাঝে পড়ে গেলাম জানিনা।


যেহেতু আমার কারনেই আবিদ আমাকে হারিয়ে ফেলতে চলছে,তাই যেভাবেই হোক আমি আবিদের চাওয়াটা পূরন করবো। যদিও আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে আবিদ কখনোই আমার ক্ষতি করবে না। 


আবিদের দেওয়া গোলাপী রঙের শাড়িটা পড়েছি আজ । ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক আর কপালে ছোট একটা কালোটিপ দিয়েছি। আবিদের সাথে আমার দেখা হয়েছে মাত্র পাঁচবার। তার মধ্যে একবারই আমি শাড়ি পড়ে ওর সামনে গিয়েছি। তাও বছর খানেক আগের কথা। 


বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি কখন তিনটা বাজবে। কারন আবিদ আমাকে বলেছে আমার বাসার সামনে জাস্ট তিনটায় আসবে। এখন বাজে পৌনে দুইটা। এখনো অনেকটা সময় আছে। তবুও আগে থেকে আমি রেডি হয়েছি। আমার ছোট খালাকে বলেছি বন্ধুবীর বাসায় যাবো। আর আব্বু আম্মু বিয়ের দাওয়াত দিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। সেই সুবাদেই আজ আমি বাসা থেকে বের হতে পারবো।


আর তাছাড়া বাবা মায়ের পছন্দ মতই বিয়ে করে নিচ্ছি। কোনো ধরনের অনিচ্ছা প্রকাশ করিনি। তাই তাদের কোনো সন্দেহ বা ভয় কিছুই নেই। সব সময় বাবা মায়ের কথা মত চলেছি।


আমার বিয়েটা হচ্ছে আমার খালাতো ভাইয়ের সাথেই। মানে ছোট খালার ছেলে। তাকে বলেই আজ বের হচ্ছি। যেহেতু তাকে বলে পারমিশন নিচ্ছি,সেহেতু কোনো ধরনের ঝামেলা হবে না।


ছোট খালা আমাকে অনেক ভালোবসে। তার মেয়ের মতই দেখে আসছেন সব সময়। আমার বাবা মায়ের কাছে তার একটাই আবদার তার ছেলের বউ বানাবে আমাকে। এটাও বলে রেখেছেন স্কুল লেভেলে যখন পড়ি। যদিও আমার বাবা মা ছোট খালার কাছে ঋণী। মুখ ফুটে বলতে পারেনি কিছু।


আমি রায়ান ভাইকে দেখেছি সেই ছোট বেলায়, তারপরে আর দেখিনি। কিন্তু যখন থেকে আমি জেনেছি ছোট খালা তার পুত্রবধূ বানাবে আমাকে,কেনো যেনো তার প্রতি ভালোবাসা আগের মত নেই। সত্যি বলতে তার মাঝে আর খালার ছাপ দেখতে পাইনি। অথচ আমার ফুফুরা আমাদের ভালো চোখে দেখে না,তবুও কেনো যেনো তদের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেলো।


আমার জন্মের সময় আমার মা নাকি মৃত্যুর পথযাত্রী ছিলেন। কিন্তু ছোট খালা মাকে রিস্ক নিয়ে দুইবার রক্ত দিয়েছেন। রক্ত একসাথে দুইবার ডোনেট করলে নাকি জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি থাকে,তবুও তিনি রক্ত দিয়েছেন আমার মাকে। সেই থেকে আমার ছোট খালার চাওয়ার কাছে আমার বাবা সব সময় প্রস্তুত।


ও হ্যাঁ! কি যেনো বলছিলাম! রায়ান ভাইকে সেই ছোট বেলার পরে আর আমি দেখিনি। রায়ান ভাইয়ের বাবা বেঁচে নেই। আমার জন্মের আগেই খালুজান মারা গেছেন। আমার ছোট বেলায় মাঝে মধ্যে আমাদের বাসায় আসতেন,কিন্তু ছোট খালা অন্য শহরে চাকরি পাওয়ার পরে আর আসেনি। এর পরে যখন একটু বড় হয় রায়ান ভাই বিদেশ চলে যান। বিদের যাওয়ার পরেই ছোট খালা আমার আব্বা মাকে বলেন আমাকে তার ছেলের বউ বানাবেন।


রায়ান ভাই সেই দেশের বাহিরে চলে গিয়েছেন, আর দেশে আসেনি। মাঝে মধ্যে ছোট খালা কয়েকমাস করে থেকে আসেন। অনেকবার আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন রায়ান ভাই। কিন্তু আমার কেনো যেনো লজ্জা পাচ্ছিলো। তাই আর তার সাথে কথা হয়নি। রায়ান ভাইও লাজুক টাইপের। তিনিও তেমন চায়নি কথা বলতে।


আমার এইযে সকল কসমেটিকস, হাতের দামী মোবাইল সবই রায়ান ভাইয়ের দেওয়া। মানে ছোট খালা ভাইয়ের কাছে যেতেন আর এগুলা নিয়ে আসতেন।


আর আবিদ! হাহা আবিদের সাথে পরিচয় কাকতালীয় ভাবে। মাঝে মধ্যে ভাবলে ঠোঁটের কোনো হাসি পায়। সিনেমাটিক ধাক্কা যাকে বলে আরকি। আমার বান্ধবীর বড় বোনের বিয়েতে গিয়ে আবিদের সাথে পরিচয়। হোচট খেয়ে আবিদের গায়ের উপরে পরে যাই। এ কারনেই হয়তো ওর সাথে আমার প্রেমটা হয়েছে।


আবিদের কথা না হয় পরে এক সময় বলবো।


তিনটা বেজে গেছে। এখনই নিচে নামতে হবে। আবিদ ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দিলো আমার বাসার সামনের স্কুল গেইটে অপেক্ষা করতে। আমি মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করলাম,এরই মধ্যে আবিদ চলে আসলো। ওর গাড়িতে উঠে বসলাম। 


কিছুক্ষন পরে ব্রেক কষে আবিদ বললো সামনে বসতে। আমি সামনে বসতে কিছুটা আনইজি ফিল করলাম,তবুও সামনে গেলাম।


- বা সাইডের কাজল লেপ্টে আছে।


- দেখলে কিভাবে?


-লুকিং গ্লাসে।


-এরই মধ্যে এত নজর?


- বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে?


- হ্যা আগামী মাসের সাত তারিখ।


- আর মাত্র এগারো দিন আছে।


- হ্যা!


- পানির বোতলের মুখটা খুলে দাও তো তৃষ্ণা পেয়েছে।


- লং ড্রাইভ করে এসেছো?


- হ্যা চিটাগং থেকে এসেছি।


- সামনে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।


- নাহ ঠিক আছে।


- কোথায় যাচ্ছি?


- চিটাগং। 


- এতদূর?


- হ্যাঁ।


- কাল ফিরতে পারবো?


- হয়তো! 


- হয়তো মানে?


- পারব ফিরতে।


- ভেবে বলছো?


- হ্যাঁ।


কিছুক্ষন পরে আবিদ আর আমি নামলাম। বুঝতে পেরেছি আবিদের খুধা পেয়েছে। রেস্টুরেন্টে গিয়ে আবিদের একার জন্য খাবার অর্ডার দিলাম। আমি খেয়ে বের হয়েছি,তাই খুধা লাগেনি। আমি লক্ষ্য করলাম আবিদ কিছুটা নিশ্চুপ। অন্য মনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে। খাবার সামনে। 


আমি আবিদের পাশে গিয়ে বসলাম। আর খাবার ওর মুখে পুড়ে দিলাম। মাথা নিচু করে খাচ্ছে। হঠাৎ করে বলে উঠলো।


- খুবই সুন্দর লাগছে। আমি আবারো তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম। কিন্তু প্রেমে পড়ার আগেই যে তোমাকে হারিয়ে ফেলতে চলেছি।


- কোনো কথা নয়। চুপচাপ খাও।


- হুম খাচ্ছি,গলা থেকে নামছে না।


- খাইতে দিচ্ছিতো।


- যাচ্ছিনা চিটাগং, এই শহরের আসে পাশেই থাকবো।


- তাল পাকিয়ে ফেলেছো? কি সব আবল তাবল বলতেছো।


- চার তারিখ ফ্লাইট। 


- মানে?


- অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি,আপুর কাছে। ফিরব না।


- অভিমান জমিয়ে?


- নাহ,ভালোবাসাকে উপহার দিয়ে।


- ঠিক বুঝলাম না।


- এই দেশটাকে আমার ভালোবাসাকে দিয়ে যাচ্ছি।


- ওহ।


- চলো আর খাবো না। 


লং ড্রাইভ। ঘুমিয়ে পরেছি আমি। আবিদ ডাক দিয়ে উঠালো। আমি তাকিয়ে দেখি অন্ধকার রাত। সময় রাত সাড়ে নয়টা। আবিদকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় এসেছি আমরা। আমাকে বললো ওর মামাবাড়ির এলাকায়। গাড়ি থেকে নেমে ওর সাথে একটু পথ হাটলাম। আমি লক্ষ্য করলাম আবিদ আমার হাতটা ধরে আছে। আবিদের সাথে হাটলাম। 


কলিংবেল বাজাতেই একজন ভদ্র মহিলা দরজা খুলে দিলেন। খোলার সাথে সাথে বললো... ”আমার আম্মাজান। ”


পায়ে সালাম করে নিলাম। কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম সে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের মধ্যে ঢুকে আবিদ ওর মায়ের হাত ধরে মেঝেতে নিয়ে সোফায় বসালেন। বসিয়ে বললো....


- আম্মা কথা এসেছে, তুমি বলেছিলে কথাকে নিয়ে আসতে।


- কথা মা আসছে?কই আমার পাশে বসতে বল।


তার মানে আবিদের আম্মা চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। চোখে দেখতে পায় না। আমার কিছুটা কান্না পেলো।


আমি আবিদের আম্মার পাশে গিয়ে হাতটা ধরে বললাম....


- জি আম্মা আমি বসেছি আপনার পাশে।


- মা! কথা জানো সেই কবেই আবিদকে বলেছি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসতে। তার আজ হলো তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আশার।


আমি চুপচাপ হয়ে আছি। তিনি আবারো বললেন...


-আচ্ছা মা অনেক দূর থেকেই মনে হয় আসছো। খাবার খেয়ে নাও। একটু রেস্ট নাও। তারপরে তোমার সাথে কথা বলি। কেমন মা!


- ঠিক আছে আম্মা।


আবিদ আম্মাকে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন পরে আসলেন এক মুরুব্বি। তার পরে আস্তে আস্তে কয়েকজনেই আসলেন।


খাবার টেবিলে বসেছি। একে একে সবার সাথে কথা বলে নিলাম। কিন্তু আমি খেতে পারছি না। আবিদ চোখের ইশারায় খেতে বললো। আমি পারছি না।


জোৎস্না রাত। আবিদের সাথে ওদের ফুল বাগানের মাঝে একটা বেঞ্চে বসলাম। আবিদ আমাকে বললো....


- "কথা, তোমার ব্যপারে আমার মায়ের কাছে সব কিছুই বলেছি। সেই অনেকদিন হয়েছে তোমাকে মায়ের কাছে নিয়ে আসতে বলেছে। কিন্তু কিভাবে নিয়ে আসবো বলো? আমার মা জানে না তুমি আমার হতে পারবে না। আমার মা যে অন্ধ তা তোমাকে বলিনি। কোথায় থাকে তাও বলিনি। 


জানো কথা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। ঠিক কতটা ভালোবাসি বুঝাতে পারবো না। আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসি আমার মাকেও তেমন ভালোবাসি। এই অন্ধমানুষটার কারনে আমি আত্মহত্যা করতে পারছি না। যদি কোনো ওয়ে থাকতো আমি হয়তো আত্মহত্যা করে ফেলতাম। 


আর তোমাকেও আমার ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। আমি ভেবেছিলাম আমার এই অনিশ্চিত ভালোবাসা জয়ী হয়ে আমার জীবনে তুমি থেকে যাবে। কিন্তু ঠিকই অনিশ্চিত থেকে গেলো। আমি তোমাকে আমার করে নিতে পারলাম না। তাই ভেবেছি আমি এবং আমার আম্মাজান অস্ট্রেলিয়া চলে যাবো। যদিও আম্মাজানকে আমি এখনো কিছু বলিনি। তবে ফ্লাইটের আগে আম্মাজানকে সব কিছু বলবো।"


আবিদের কথা শুনে চোখ ফেটে কান্না আসলো। আমার দমটা একেবারেই যেনো আটকে গেলো। আমি নিশ্বাস নিতে পারছিনা। আবিদকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। কান্নার শব্দটা আমি আটকে রাখতে পারলাম না। হুঁহুঁ করে কেঁদে দিলাম। আবিদ আমাকে জড়িয়ে ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না। আবিদ যেনো আমাকে খুব করে কাঁদতে সুযোগ দিচ্ছে।


আমি কতক্ষন আবিদকে জড়িয়ে ধরেছিলাম ঠিক মনে নেই। আবিদের শার্টটা ভিজে গিয়েছে চোখের পানিতে। আবিদের চোখের পানি আমার চোয়াল বেয়ে বড়ছে। তবুও কথা বলছে না। এক পর্যায়ে আমি আবিদকে বললাম.....


"আমি যাবনা। তোমার কাছেই থাকবো। ওই দিকে যা হবার হোক। কিন্তু তোমাকে ছেড়ে আমি যাব না। "


- স্বার্থপরের মত কথা বলো না। বাবা মা আছেন। কত আশা করেছে তোমাকে নিয়ে।


- ঠিক হয়ে যাবে,আমি তোমাকে রেখে কোথাও যাব না।


- তুমি না গেলেও আমি এগিয়ে দিয়ে আসবো। তোমার জন্য কাউকে আমি কষ্ট পেতে দিব না। দরকার হলে আমি মরে যাবো,এই পৃথিবী ছা....


আমি আবিদের ঠোঁট বন্ধ করে দিলাম আমার দুই ঠোঁট দিয়ে। এই প্রথম অনুভব করলাম আবার ভালোবাসার অধিকার নিয়ে, প্রিয় মানুষের ঠোঁট লেপ্টে দিয়েছি.......


গল্প : _দেয়াল_বন্দি

পর্ব : ০১ 

লেখাঃ নাজমুল হুদা


গল্প:_দেয়াল_বন্দি (২য় পর্ব)

লেখাঃ Md. Nazmul Huda 


(২)

আমি আবিদের ঠোঁট বন্ধ করে দিলাম আমার দুই ঠোঁট দিয়ে। এই প্রথম অনুভব করলাম আবার ভালোবাসার অধিকার নিয়ে, প্রিয় মানুষের ঠোঁট লেপ্টে দিয়েছি। আবিদ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর মাঝে কোনো অনুভূতি আমি দেখতে পেলাম না। দুইহাত আবিদের কাধের উপর রেখে মিশিয়ে আছি ঠোঁট দুটি। 


আবিদ আমাকে ছাড়িয়ে নিলো। ছাড়িয়ে নিয়ে বললো...


- কথা এসব কি?প্লিজ পাগলামি ছাড়ো। আর তাছাড়া এখন আর সময় নেই,ফুরিয়ে গিয়েছে। চাইলেই এখন সব কিছু সম্ভব না।


- তুমি চাইলে সম্ভব আবিদ। আমি তোমার কাছেই থেকে যাবো। যতই বলো না কেন আমি যাচ্ছি না।


- বাসার মধ্যে চলো।


- দেখো আবিদ, এতদিন কেনো যেনো তোমাকে হারানো ভয় ছিলো না। এখন ভয় হচ্ছে।  আমার ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে গো। আমি পারব না তোমাকে হারাতে।  আবিদ আমি আসলে এতদিন একটা ঘোরের মাঝে ছিলাম। কিন্তু আজ আমি বুঝতে পারলাম তোমাকেই আমার লাগবে। 


- কথা দেখো আমি এখন চাচ্ছি না তুমি আমার জীবনে রয়ে যাও। যে তুমিটা দুইটা বছরেও আমাকে বুঝলে না। যে তুমি পারলে না দুই বছরে আমার কথা তোমার পরিবারকে জানাতে। যে তুমি পারলে না তুমি আমার ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে। সেই তোমাকে আমি এই মুহূর্তে আমার কাছে রাখার সাহস পাই না। তুমি তোমার বাবা মাকে কষ্ট  দিতে পারলেও আমি পারব না তাদের কষ্ট দিতে। 


- তোমার আম্মাজান তো চান আমাকে তোমার হতে? পারবে তাকে কষ্ট দিতে?


- দেখো সে এসবের কিছুই জানে না। যদি জানে তাহলে সেও বলবে তোমাকে রেখে আসতে। তুমি পারোনি ভালোবাসাকে আটকে রাখতে।  যদি একটু আমার দিকে তাকাতে,যদি একটু আমার ভালোবাসাকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেখতে তাহলে আজ এমন পরিস্থিতি হত না। তুমি আমাকে ভালোবাসো ঠিকই কিন্তু আমার ভালোবাসাকে স্পর্শ করতে চাওনি তুমি। শুধু ভালোই বেসে গিয়েছো। কিন্তু ভাবোনি পরবর্তীতে আমাদের কি হবে। আমারই ভুল ছিলো কথা,আমি তোমার ব্যাপারে সব কিছু জেনে শুনেও তোমাকে ভালোবেসেছি। কই তুমিও তো আমাকে ভালোবেসেছিলে। আমাদের ভালোবাসা তো এক তরফা ছিলো না। অনেক ভাবেই তোমাকে বুঝিয়েছি কিছু একটা করো,পরিবারকে জানাও আমাদের ব্যপারে।কিন্তু পারোনি তুমি। এখন কিছুই করার নেই। আজকে তোমাকে এনেছি আমার মায়ের চাওয়ার কারনেই,নতুবা তোমার সাথে আমার আর যোগাযোগ হতো না।


- আবিদ তুমি আমাকে যা খুশি বলো, আমাকে শাস্তি দাও,তবুও আমাকে এখন মাঝ রাস্তায় ফেলে দিও না। আমি স্বীকার করছি সমস্ত ভুল আমারই। আমি পারিনি তোমার ভালোবাসা প্রকাশ করতে,এখন আমি অনুতপ্ত আবিদ। আমি তোমাকেই চাই। 


- একটা সময় মানুষ পাথর হয়ে যায়। ভালোবাসতে হলে একে অপরকে বুঝতে হয়। সব কিছু একার চিন্তায় থাকলে সফল হওয়া  যায় না। দুজনেরই আপ্রান চেষ্টা করে ভালোবাসাকে জয়ী করতে হয়। ভালোবাসাকে শক্ত করে ধরে রাখতে হয়,আর সেই শক্ত করে ধরেই জীবন পাড় করে দেয়া যায়। সিচুয়েশন? আরে সিচুয়েশন তো সবারই আসে। কখনো বলেছো তুমি আমাকেই বিয়ে করবে? যদি কেউ না  মানে তাহলে আমার হাতটি ধরবে। ভালোবাসি! ভালোবাসি! আর ভালোবাসি। এটাই বলে গিয়েছো। কিন্তু একটাবার ভাবলে না আমাদের ভবিষ্যৎটা কি! আজ আমার আম্মাজান না থাকলে বা আরেকটা ভাই থাকলে আমি হয়তো আত্নহত্যার পথ বেছে নিতাম। ভাবছো কষ্ট পেয়ে? উহু একদম না। কষ্ট কিসের? তুমি আমার ভালোবাসাকে সন্মান দাওনি,আমার ভালোবাসাকে তুমি সেই চোখে দেখোনি। ঘৃণা লাগে বড্ড ঘৃণা লাগে নিজের উপর। আর এই ঘৃণা থেকেই মরে যেতে ইচ্ছে করে।


- আবিদ প্লিজ! এভাবে বলছো কেনো? আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। সমস্ত অপরাধ আমার। এখন আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিও না। 


- দেখো এসব শুনতে ভালো লাগছে না। ঘুমাবো এখন,তুমি মায়ের কাছে যাও। আর হ্যা সকালে রেডি হয়ে থেকো। 


আবিদ আমাকে এখানে রেখেই চলে গেলো। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। চাঁদের আলো আমার মুখের উপরে পরছে। কিছুটা বিরক্ত লাগছে আমার। যত সময় আবিদ ছিলো এখানে,বেশ ভালোই লাগছিলো,ওর মায়া ভরা মুখ দেখে। অনেক অভিমান নিয়ে আবিদ আমাকে কথা গুলো বলেছে। কিন্তু আমার প্রতি আবিদের রয়েছে অসীম ভালোবাসা।


আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আবিদের ব্যপারে আজই বাবাকে ফোন দিয়ে বলবো। আমি কোনো ভাবেই আবিদকে হারাতে পারবো না। যদি আমার বাবা মা আমার ভালোবাসা মেনে নেয় তো, আবিদকে নিয়ে তাদের সামনে যাবো। আর যদি মেনে না নেয় তাহলে আমি এখানেই আম্মাজানের কাছে থেকে যাবো।


ফুল বাগান থেকে আমি আমার ফোনটা নিতে আবিদের রুমে গেলাম। এরই মধ্যে আবিদ আমাকে বললো....


"আম্মাজান তোমাকে ডেকেছে"


আমি আস্তে আস্তে আম্মাজানের কাছে গেলাম।  আবিদ দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মাজানের পাশে গিয়ে বসার পরে বললেন.....


- মা কথা,সেই কখন তোমাকে ডাকলাম।


- আম্মাজান আমি ফুল বাগানে ছিলাম।


- কথা মা আমার দুইটা সন্তান। আমার বড় মেয়েটা তো সেই অনেকদিন হলো অস্ট্রেলিয়া আছে। আসার কোনো নাম গন্ধ নাই। আর আমার ছেলেটা থাকে চিটাগং।  আমার এখানে একারই কাটাতে হয়। কারো সাথে যে সময় কাটাবো সেই মানুষটা পাই না। আর তাছাড়া আমি অন্ধ মানুষ, বছর পাঁচেক হলো চোখের দৃষ্টি হারিয়েছি। আমার কিছুই ভালো লাগে না মা। আমার ছেলেটা চেয়েছে ওর সাথে চিটাগং নিয়ে যেতে। কিন্তু আমি যাইনি। ওর বাবার কবরটা এখানে, তাকে একা ফেলে আমি কিভাবে যাই। আবিদকে এত করে বললাম তোমাকে এখানে নিয়ে আসতে,তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দিতে। কিন্তু আমার ছেলেটা কিছু শুনলোও না। এখন তুমি যেহেতু এখানে এসেছো, তোমার বাবা মাকে আসতে বলো। আমি তাদের সাথে কথা বলবো। মা কি বলছি শুনেছো?


- জি আম্মাজান। (আম্মাজানের কথা শুনে আমি কি বলবো জানা নেই। তার কথা যতই শুনি ততটা চোখ ফেটে কান্না আসে।)


- মা আমার ছেলের কিন্তু কোনো কিছুতে কমতি নাই। আর তাছাড়া ভালো একটা চাকরি করে। তোমরা দুজন দুজনাকে তো ভালোবাসো। এখন বিয়েটা করে নাও। মা তোমার হাতটা আগাও তো...


আমি তার সামনে হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললাম... 


- আম্মাজান এইতো আমার হাত।


- আমি তো অন্ধ মানুষ, এই চেইনটা তুমি আসার পরে খুলে রেখেছি,এটা পড়ো তুমি। আমি দেখলে তো নিজ হাতেই পড়িয়ে দিতাম।


- আম্মাজান সেই থেকে অন্ধ অন্ধ বলতেছেন। এটা কিন্তু ঠিক না। আম্মাজান চেইনটা পরে পরলে হয় না?


- না এখনি পড়বে। আমি গলায় হাত দিয়ে অনুভব করবো। ভালো লাগার তৃপ্তি নিবো যে আমার কথা মা চেইনটা পরেছে।


আমি আবিদের দিকে তাকিয়ে আছি। কি করবো বুঝতেছিনা। তাই আবিদের দিকেই তাকিয়ে আছি। আবিদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কাছে কোনো জবাব পেলাম না। তাই আম্মাজানের পাশে বসেই চেইনটা গলায় দিয়ে বললাম....


-আম্মাজান পড়েছি। 


- এইতো আমার মিষ্টি মা। আমি দেখতে পারলে হয়তো খুবই ভালো লাগতো,নিজ চোখে আনন্দ উপভোগ করতাম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমার চোখ দুইটা কেড়ে নিলো।


আম্মাজানের সাথে কথা বলা শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত একটা ছুঁইছুঁই।  ভেবেছিলাম আমার বাবার কাছে ফোন দিবো। কিন্তু এতরাতে বাবাকে ফোনে পাওয়া যাবে না। বাবা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে।


বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। অপরপাশে তাকিয়ে দেখি আবিদ সিগারেট টানছে। আমি রেলিং ঘেঁষে আবিদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আবিদ সিগারেটটা ফেলে দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বললো...


-ঘুমাওনি যে?


- ঘুম আসবে না। 


- না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবে?


- জানি না।


- যাও ঘুমিয়ে পড়ো।


- কোলের উপর রেখে ঘুম পাড়িয়ে দাও।


- উহুঁ,নিজেই ঘুমাও।


- দেখো আবিদ আমি তোমার কথা শুনে এখানে এসেছি। আমার চাওয়াটা তো পুরন করবে তাই না?


- আমি কিন্তু জোর করিনি এখানে আসতে। তোমাকে একবার বলেছিলাম। তুমি রাজী হয়ে গেলে।


- কি হয়েছে তাতে? দাওনা একটু মাথাটা তোমার কোলে রাখতে।


আমার কথার দিকে আবিদের তেমন গুরুত্ব নাই। আমি অপলক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে। আমি যে ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছি সেই অনুভূতিটুকু নাই। আনমনে কি যেনো ভাবছে? আমি আবিদের হাতটা আঁকড়ে ধরে ওর কাধে মাথা রাখলাম। অপর হাত দিয়ে আবিদের কোমড়টা ধরে বললাম....


- চাঁদটা কিন্তু সুন্দর, আলোটা একদম তোমার মুকে এসে পড়েছে। আমার কিন্তু হিংসে হচ্ছে, আলো তোমায় ছুঁয়ে দিচ্ছে। এদিকে  তো একটু তাকাবে?


- কথা এখন আর আমরা প্রেম করছি না। এসব বাদ দাও।


- দেখো তো আম্মাজানের দেওয়া চেইনটায় আমায় কেমন মানিয়েছে।


- সুন্দর মানিয়েছে।


- যখন আমি তোমার কাছে আসলাম,তোমার সাথে আজীবন থাকতে চাই সেই তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো। দাও ঠেলে,আমি আর এখান থেকে যাবো না।


- কারণ তুমি এতদিনে আমাকে বুঝোনি, আগের গতিতেই তুমি চলেছো। কিঞ্চিৎ পরিমান তুমি ভাবোনি যে আমাদের পরবর্তীতে কি হবে।


- বাদ দাও না প্লিজ। আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো। খুব করে বুকের সাথে মিশিয়ে নাও না। আমার কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে।


আবিদ আমাকে জড়িয়ে ধরেছে ঠিকই,কিন্তু ও অন্য মনস্ক হয়ে আছে। আবিদ এতটাই পাথর হয়ে আছে,যেনো আমার চোখের জল ওর মনটা নরম করতে পারেনি। আবিদের গলাটা ধরে বললাম...


- আমাকে হারিয়ে ফেলতে চাও?


- জানি না।


- রেখে দাও না তোমার কাছে।


- উহুঁ!


- একবার হারিয়ে গেলে যে আর কোনো দিন আমাকে পাবে না।


- আমার ভাগ্যে যে এটাই ছিলো।


- এখন আমি তো চাই থেকে যেতে।


-এভাবে সম্ভব না


- মরে যাই?


- শখ হয়েছে? 


- জানি না। তবে এখন তুমি ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না। দুইটা বছর যতটা তোমাকে অনুভব করতে পেরেছি,তারচেয়ে আজকের দিনটায় তোমার মাঝে ডুবে গিয়েছি।


- করুনা করছো?


- না তোমার হয়ে থাকতে চাচ্ছি।


আবিদের গলা থেকে আমার হাত দুইটা সরিয়ে নিয়ে বললো....


তোমার বিয়ের আর মাত্র দশদিন আছে। দশদিন পরে তুমি অন্যের হয়ে যাবে। এখন এসব চিন্তা না করলেও হবে। 


পরেরদিন সকালে আবিদ আমাকে নিয়ে বের হয়েছে। ওর মায়ের চেইনটা এখনো আমার গলায়। গাড়িতে উঠে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছি আমরা। জবাবে বললো আমাকে বাসায় এগিয়ে দিতে যাচ্ছে।


আমি আর কিছু বললাম না। চুপ করে রইলাম। যাকে এত করেই বললাম তার কাছে রেখে দিতে,সে এখন আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছে। ঘন্টা পাঁচেক সময় গাড়িতে বসেছিলাম দুজনে তেমন কোনো কথাই বললাম না।


আমার বাসায় নামার আগ মুহূর্তে আবিদ আমাকে বললো...


- যদি বাবা মাকে আমার কথা বলার সাহস পাও,তবেই আমার জীবনে এসো। অপেক্ষায় রইলাম দশটা দিন।


(৩)

ওর মায়ের চেইনটা আবিদের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললাম...


- বাবা মাকে রাজী করে যদি তোমার কাছে যেতে পারি চেইনটা তখন তুমি পড়িয়ে দিও। আর যদি দেখো আমি তোমার জীবনে ফিরতে পারিনি ভেবে নিও আমি আর এই পৃথিবীতে নেই। আবিদ আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।


গাড়ি থেকে নামার সময় ইচ্ছে হয়েছিলো,আবিদকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু আবিদের আমার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। আবিদ গাড়ি থেকে নেমে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি হাটা দিয়ে কিছুদূপ এগিয়ে পিঁছু ফিরে দেখি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।


আমার ইচ্ছে করছিলো,দৌড়ে গিয়ে আবিদকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু তা আর সম্ভব না। আমার বাড়ির গেইটের সামনে যাওয়ার পরেই আবিদ চলে গেলো। 


চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠলাম। পা যেনো আগাচ্ছে না। আমার কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছিলো। এতটা অস্থিরতা আমার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে,এই বুঝি আমার দমটা আটকে যাবে। আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারলাম না। দরজায় কলিংবেল চাপতেই বাবা দরজা খুলে দিলো। আমি কারো সাথে কথা না বলেই আমার রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলাম।


বিছানায় গিয়ে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। হুঁহুঁ করে কেঁদে দিলাম। এই বুঝি আমি আবিদকে হারাতে বসেছি। হঠাৎ করে আবিদের এত পরিবর্তন কেনো আসলো। আমাকে কেনোই বা এখন দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আগে যতটা সহজ ভেবেছিলাম কিন্তু এখন আমার বেঁচে থাকাটাই বেশ কষ্ট হয়ে গেলো। আমি যে আবিদকে ছাড়া আর কাউকে আমার জীবনে গ্রহন করতে পারবো না।


আমার মা এসে দরজায় নক করলো। আমি দরজা খুলিনি। ভিতর থেকে জানিয়ে দিলাম বিশ্রাম নিচ্ছি। দরজা খুলতে লেইট হবে। 


ফোনটা হাতে নিয়ে আবিদকে কল দিলাম....


- খুব সহজেই আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়ে গেলে। একটুও কি কষ্ট হয়নি আবিদ?


- কষ্ট তো সেদিন পেয়েছি,যেদিন বলেছিলে তোমার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়েছে। কথা একটা সত্য কথা বলবা?


- হ্যা বলো।


- তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছিলে? আমাকে নিয়ে কি একটুও অনুভূতি হয়নি?


- ভালোবাসি কিনা জানো না তুমি? আমার যে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফেলেছি। আমি যে সাহস করে বলতে পারিনি বাবা মাকে।


- এমনটা না করলেও তো পারতে কথা। এখন আমার কি হবে? আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমি যে সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।


- আমাকে এখানে দিয়ে গেলে কেনো? তোমার কাছে রেখে দিলেই তো পারতে।


- এছাড়া যে আমার আর কিছুই করার ছিলো না। তোমার বাবা মা তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে। আর তুমি তো আগে থেকে পারোনি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করতে। সব কিছু ঠিকঠাক হওয়ার পরে যদি এখন এমন কিছু করি তাহলে তোমার বাবা মায়ের কি হবে ভেবে দেখেছো? তাদের এক মাত্র মেয়ে তুমি। আর তোমার বড় ভাইটাও সবার অমতে গিয়ে বিয়ে করেছে। এখন তুমিও যদি বড় ভাইয়ের মত এমনটা করো তাহলে তারা মুখ দেখাতে পারবে? তোমার বড় ভাই সেই থেকে তোমাদের বাসায় আসে না। এখন তুমি এমন করলে তোমাকেও পরিচয় দিবে না তোমার বাবা মা। আমি কিভাবে এতটা স্বার্থপর হয়ে সবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করি?


- বাহ্! যে তুমিটা আমাকে সব সময় আশা দেখিয়েছো,সেই তুমিটাই আমাকে এখন হারিয়ে ফেলতে চাইছো। আরে কোনো না কোনো সময় আমাদের ঠিকই মেনে নিবে,কিন্তু তোমার জীবন থেকে আমি হারিয়ে গেলে আমাকে তুমি পাবে? বা তোমাকে আমি পাবো? অসম্ভব আবিদ। আমি তোমাকে হারাতে পারবো না। দরকার হলে আমি আত্মহত্যা করবো। কিন্তু তোমাকে হারিয়ে ফেলতে পারবো না। আমি বুঝে গিয়েছি তোমাকে ছাড়া আমার অন্য কারো জীবনে থাকা অসম্ভব।


- উল্টাপাল্টা বলো না। আত্মহত্যা সমাধান নয় কথা। ঠান্ডা মাথায় থাকো। আর তোমার রায়ান ভাই যথেষ্ট ভালো মানুষ। সেও তোমাকে ভালোবাসে। তার কাছেও তুমি হ্যাপি থাকবে। তাছাড়া তোমারই তো খালাতো ভাই হয়। কখনো অসন্মান করবে না। তোমার উপরে দুইটা পরিবার ডিপেন্ড করে। দুইটা পরিবারই তোমাকে অনেক ভালোবাসে।


- আর তুমি? তোমার আম্মাজান? আম্মাজান তো আমাকে ভালোবেসেই তার গলার চেইনটা খুলে আমার গলায় পড়িয়ে দিয়েছিলো। অথচ সে আমাকে চিনে না, কখনো দেখেওনি। তোমরা কি আমাকে ভালোবাসো না? 


- ভালোবাসি। তোমার প্রতি ভালোবাসা থাকবে আজীবন। কিন্তু এভাবে নয়। আমি কাউকে ঠকিয়ে কিছুই করতে পারবো না। তোমার বিয়ের আর মাত্র দশদিন বাকী আছে। ভুলে গেলে চলবে না কথা।


- দেখে নিও আমি কি করতে পারি। আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি,হয় আমি তোমার জীবনে থাকবো না হয় আমি দুনিয়া ছাড়বো।


- ড্রাইভিং করতে কষ্ট হচ্ছে। এখন রাখছি।


আবিদ ফোন কাটার পরপরই ছোট খালা ডাক দিলেন। আমি দরজা খুলে তার সামনে দাঁড়াতেই বললেন,.... 


- পরশু রায়ান আসবে। আমাদের সাথে তুই এয়ারপোর্টে যাবি। আমি তো এখানে তেমন চলাফেরা করিনি, তাই রাস্তাঘাট আমি চিনি না। দুলাভাই  আর আপাকে বললাম,তারা যেতে পারবে না। কোথায় নাকি দাওয়াতের কাজ আছে।


- খালা আমিও যেতে পারবো না। আমাদের বাসার দারোয়ানকে নিয়েই যান। আমার হাতে কাজ আছে।


- কোনো কাজ নাই,আমার ছেলে আসতেছে, তাই আমার সাথে ছেলের বউকে নিয়ে যাবো।


- খালা এখনো আমি আপনার ছেলের বউ হইনি, আপনার বোনের মেয়েই আছি। আর আমার কাজ আছে বললাম তো।


- কি কাজ শুনি?


- ভার্সিটিতে যাবো।


- আপাতত আর ভার্সিটিতে যেতে হবে না। আমার ছেলে দেশে তিনমাস থাকবে,তুই সেই তিনমাস আমার ছেলেকেই সময় দিবি।


- আমার প্রচুর ঘুম পাইছে। একটু ঘুমাই?


- এই অসময়ে ঘুমাবি?


- এখন যে ঘুম পেয়েছে।


- তার চেয়ে চল, কিছু কেনাকাটা করে আসি। হাতেও তো সময় নেই। তাড়াহুড়ায় সবই ভুলে যাবো।


- মাকে নিয়ে যান। আমার খুব খারাপ লাগছে।


রায়ান ভাই আসার কথা শুনে মেজাজ কিছুটা বিগড়ে গেলো। এখন তাদের কোনো কথাই আমার ভালো লাগছে না। এখন আমার কি করা উচিত বুঝতে পারছি না। 


ঘুম থেকে উঠলাম সন্ধ্যার পরে। মাথা কিছুটা ব্যথা করছে। কিচেনে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম।  বাবা সোফায় বসে আছে তার হাতে কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম।


- বাবা চা নেন। মা আর খালা কি বাহিরে গিয়েছে?


- হ্যা কি যেনো কেনাকাটা আছে তোর খালার। আচ্ছা তুই নাকি তোর খালার মুখের উপর কথা বলেছিস।


- মুখের উপরে বলিনি ঠিক। কিন্তু তার ছেলের বউ হওয়ার আগেই আমার তাদের কথা মানতে হবে কেন?


- তাই বলে ওভাবে?


- কিছু কথা ছিলো।


- বুঝিনি!


- তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।


- হ্যা বল কি বলবি?


- ভাবছি কিভাবে বলা যায়।


- আরে ইনিয়েবিনিয়ে না বলে সরাসরি বলে ফেল।


- বাবা আমি তো তোমাদের মেয়ে তাই না? আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি ক্ষমা করবে?


- ঠিক বুঝতে পারছি না। কি এমন ভুল বলতো। আমায় ক্লিয়ার করে বল।


- বাবা আমি যদি মারা যাই মেনে নিতে কষ্ট হবে তাই না?


- কি সব আবল তাবল বলছিস কথা?


- উহু আবল তাবল হয়। যা বলছি সত্যিই।


- আরে তোর কি হয়েছে বলবি তো!


- চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে শেষ করো।


- আমার মাথায় কিছুই ঢুকলো না।


- আমার ভাইয়াকে তো গ্রহন করে নাওনি,সেই তিন বছর হলো, সে বাসায় আসছে না। একটা বার তো বললে না তাকে বাসায় আসতে।


- দেখ কথা ওর ব্যপারে আমার কাছে কিছু বলবি না। 


- তোমাদের এই যে এগ্রিমেন্ট, তাতে আমরা ভাই বোনেরা তোমাদের কাছে ক্লজ হবো কিভাবে বাবা? আমাদের চাওয়া পাওয়ার কথা শেয়ার করবো কিভাবে? কখনো সুযোগ দিয়েছো আমাদের চাওয়া পাওয়া গুলো বলার জন্য। ফ্রি ভাবে কিছু বলতে দিয়েছো?


- হঠাৎ এই কথা?


- কারন তো অনেক কিছুই আছে। তোমরা যে রায়ান ভাইয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে প্রস্তুত, কখনো কি আমার মতামত জানতে চেয়েছো?


- তুই তো সবই জেনেছিস, শুনেছিস।


- হ্যাঁ জেনেছি,শুনেছি,তাই বলে একটাবারও কি আমার কথা চিন্তা করলে না। তোমাদের মতামতই কি সঠিক সিদ্ধান্ত? 


- কথা বেশিই বলতেছিস। আমরা তো তোর খারাপ চাইবো না। রায়ান ভালো একটা ছেলে,ওর ভালো ইনকাম আছে। আর তাছাড়া বড় কথা হলো তোর খালা তোর মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। 


- ভুল বললে বাবা। জীবন মরণ আল্লাহর হাতে। সে তো শুধু রক্ত দিয়েছিলো। হতে পারে দুইবার রিস্ক নিয়ে রক্ত দিয়েছে। তাই বলে??


- তো সমস্যা কি?


- সমস্যা নেই কোনো, আর আমি বলছিনা রায়ান ভাই খারাপ। কিন্তু তাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।


- তোর মাথা ঠিক আছে?


- হ্যাঁ। আমি ভেবে চিনতে করেই বলেছি। 


- সবাইকে দাওয়াত দেওয়া কমপ্লিট।  আর এই মূহুর্তে কোনো কিছু করা সম্ভব না।


- ভালোবাসি। আমি একটা ছেলেকে প্রচুর ভালোবাসি। আমি তোমাকে অনেকবার বলতে চেয়েছি,কিন্তু তুমি বলার সুযোগ দেওনি। যেমনটা ভাইয়া'ও পেয়েছিলো না।


- এতদিন বললি না কেন? 


- ওই যে বললাম সুযোগ দাওনি। এখন যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে,তাই তোমাকে এখন বলা।


- এখন আর কিছু করা সম্ভব না। মানিয়ে নিতে হবে। হুটহাট কোনো কিছু হয় না কথা। আর প্রেম ভালোবাসা হয়ে থাকে। ওসব সাময়িক সময়ের জন্য। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।


- তোমাদের এটাই বড় সমস্যা যে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি রায়ান ভাইকে বিয়ে করতে পারবো না। যদি বুঝো তো ভালো না বুঝলে আমার কিছুই করার নাই। আমি চলে যাবো ওই ছেলের সাথে।


- যা ইচ্ছা বলে ফেললেই হবে? আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি,তোর সেটাই মানতে হবে।  আমি তোর বাবা।


- হ্যা তুমি আমার বাবা এটাই বড় সমস্যা। কারন বাবাদের যে কিছু বলা যায় না। তাদের কথা'ই সব সময় রাইট।  আমরা কি চাই না চাই তাতে তোমাদের কিচ্ছু আসে যায় না।


- বেয়াদব!  মুখের উপরে তর্ক করছিস?


টেবিল থেকে বাবা কাপটা ছুড়ে ফেলে দিলো। রাগে সে ফোসফোস করছে। আমিও কম নই। আমার হাতের কাপটা ছুড়ে মেরে সোকেজের গ্লাসটা টুকরো টুকরো করে ফেললাম। এতদিন সব মেনে নিয়েছি,কিন্তু আর না।


দুইদিন কারো সাথে কথা বলিনি। ছোট খালা অনেক ডাকাডাকি করেছি,সাড়া দেইনি। হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। 

রাত এগারোটার দিকে রায়ান ভাই এসেছে। খালা আমাকে ডাক দিলো যাইনি। বাবার সাথে কথা বলে আমার রুমে এসে একটা ব্যাগ রাখলো রায়ান ভাই। রেখে বললো...


- অনেক বড় হয়ে গিয়েছো। এই ব্যাগে যা কিছু আছে সবই তোমার জন্য এনেছি। 


আমি শুনেও না শোনোর ভান ধরে বসে রইলাম। রায়ান ভাই আমার কাছে গিয়ে হাতটা ধরে বললো....


- এই কথা,চুপ করে আছো কেনো?


- আপনি আমার হাত ধরলেন কেনো? বলুন হাত কেনো ধরেছেন? আর আপনি যে আমার রুমে এসেছেন,আমার পার্মিশন নিয়ে এসেছেন?


কিছুটা চিৎকার দিয়ে বললাম। সবাই দৌড়ে আসলো.......


গল্প:দেয়াল_বন্দি(পর্ব : ০৩ ) সমাপ্ত

লেখাঃ Md. Nazmul Huda  


(৪)

রায়ান ভাইয়া আমার হাত ধরতেই আমি জোরে জোরে চেচামেচি শুরু করে দিলাম। আমার চিৎকার চেচামেচি শুনে সবাই আমার ঘরে চলে আসলো। রায়ান ভাইয়া ততক্ষণে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সবাইকে দেখে সে লজ্জা পেয়ে পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা জিজ্ঞেস করলো, 


- কি হয়েছে কথা? এভাবে চিৎকার চেচামেচি করছিস কেন? কোনো সমস্যা? 


- কিছু হয়নি। আর হলেও তোমাকে বলব না। আমার কোনো সমস্যা ই তোমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিনা। কারণ তুমি আমাদের সমস্যা না কখনো বুঝতে চেয়েছো, না বুঝতে পেরেছো আর না তো বুঝতে পারবে। তুমি সবসময়ই তোমার সিদ্ধান্তে সঠিক৷ তাহলে এখন আমার কি হয়েছে কি হয়নি সেটা কেন দেখতে এসেছো?? 


- এসব কেমন ধরনের ব্যবহার কথা? তুই কি ভদ্রতা ভুলে গেছো?? 


- না ভুলে যাইনি। আর অভদ্রতাও করিনি। যেটা সত্যি সেটাই বললাম। আমাকে এখন একটু একা থাকতে দাও। সবাই এখান থেকে যাও। আমার ভালো লাগছে না। 


রায়ান ভাইয়া বললো, 


- আচ্ছা কথা তুমি এখন রেস্ট নাও। আমরা যাচ্ছি। পরে কথা হবে তোমার সাথে। কেমন?? আর গিফট গুলো দেখো। তোমার পছন্দের জিনিস নিয়ে এসেছি। আশা করি তোমার ভালো লাগবে। 


আমি কোনো কথা বললাম না। ছোট খালা কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু রায়ান ভাইয়া কিছু বলতে না দিয়ে তাকে নিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেল। 


বাবা আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললেন,


- আমি যেন অপমানিত না হই। কথাটা মাথায় রেখো। এত বছরের আদর, স্নেহ, যত্ন, ভালোবাসার প্র‍তিদান হিসেবে মানুষের কাছে আমার মাথা নিচু করে দিস না। 


এটা বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলেন। আমি দরজা বন্ধ করে দিলাম। ফ্লোরে বসে পড়লাম। অস্থিরতায় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একদিকে আবিদকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারছি না। অন্যদিকে বাবাকে বোঝাতে পারছি না। আবার আবিদ ও আমাকে এইভাবে গ্রহন করতে রাজি না। আমি এখন কি করবো? উফফ আমি যদি আগেই সাহস করে বাবাকে বলতে পারতাম! তখন তো বুঝতে পারিনি আবিদের নিরবতা আর অভিমান চেপে রাখা ভালোবাসা আমাকে এতটা কষ্ট দিবে, ওকে ছাড়া আমার এতটা পাগল পাগল লাগবে!


আবিদকে ফোন দিলাম। কয়েকবার ফোন দেয়ার পরে ধরলো। 


- কতবার ফোন দিলাম কোথায় ছিলে তুমি??


- কি কারণে ফোন দিয়েছো?? এখন তো তোমার রায়ান ভাইকে সময় দেয়া উচিত। সে কতদিন পরে দেশে এসেছে। তার সাথে সময় কাটাও। আমাকে ফোন দিও না। 


- শাট আপ আবিদ। এইভাবে কি করে বলতে পারো তুমি? এসব বলতে তোমার মোটেও কষ্ট হয় না?? 


- উহু। অনুভূতি মরে গেছে। ছোট ছোট অনুভূতি গুলো জড়ো হয়ে বিশাল এক ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু বড় এক ধাক্কায় সেটা ভেঙে গেছে। এখন আর এমন ছোট ছোট ব্যপারে কোন কষ্ট বা আনন্দ কোনোটাই পাই না। 


- আবিদ।


আবিদের কথাগুলো বুকে তীরের মতো বিঁধছে। কেঁদে ফেললাম। 


- কেঁদো না। ফোন রেখে রায়ান ভাইয়ার সাথে কিছুটা সময় কাটাও, ঘুরতে যাও, শপিং করো। অনেকটা হালকা লাগবে। একটা সময় আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। 


- আবিদ, প্লিজ তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। আমি মরে যাবো, প্লিজ নিয়ে যাও। 


আবিদ ফোন কেটে দিলো। আরো কয়েকবার ট্রাই করলাম। কিন্তু ফোন তুললো না। এতটা অভিমান! কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমের ভেতরে শুয়ে ছিলাম। এর মাঝে আবিদকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু ধরে নি। এত এত মেসেজ করেছি কিন্তু একটা মেসেজের ও রিপ্লে দেয়নি। কি যে করবো বুঝতেছি না। 


বাবা এসে ডাকাডাকি করে গেল। বলে দিয়েছি বের হবো না। পরে খালা এসেও ডাকলেন। পরে দেখি রায়ান ভাইয়া ও এসেছেন। দরজা খুলে দিলাম। রায়ান ভাইয়ার সাথে কথা বলা দরকার।  কারণ এখন একমাত্র রায়ান ভাইয়া-ই পারে বিয়েটা ভাঙতে। 


- খেতে এসো কথা। 


- ভাইয়া আপনার সাথে আমার একটু কথা বলার ছিলো। 


- ঠিক আছে। আগে খেতে এসো। সবাই একসাথে খাবো অনেকদিন পরে। এসো এসো। 


- ভাইয়া কথাটা খুবই জরুরী। 


- আরে বাবা শুনবো তো। তোমার সব কথাই শুনবো। এত বছর দেশের বাইরে ছিলাম এখন দেশে এসেছি, আর তোমার কথা শুনবো না? আমার এত এত জমানো কথা বলব, তোমার জমানো কথা শুনবো। তবে এখন আগে খেতে এসো। আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে। 


- হুম।


আমি আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেতে বসে গেলাম। খাবার নামছে না গলা দিয়ে। কিন্তু তবুও খাচ্ছি। 


খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পরে রায়ান ভাইয়া বললেন, 


- রেডি হও। শপিং করতে বের হবো। 


- কিন্তু ভাইয়া আমি যে বলেছিলাম আমার আপনাকে জরুরি কথা বলার আছে? 


- তো আমি কখন মানা করলাম? বাইরে বসেও তো বলা যায়। আর জরুরি কথা ভালো কোনো জায়গায় বসেই বলা উচিত। তাই না?? 


- না আমি কোথাও যেতে চাইনা। আমি এখনই বলবো। 


- কিন্তু আমি তো এখন শুনবো না। আমার সাথে বাইরে গেলে তবেই শুনবো। 


বাধ্য হয়ে রেডি হয়ে বের হলাম ভাইয়ার সাথে। ভাইয়া একটা রিকশা নিলো। 


- তুমি কিছু বলার আগে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি কাল রাতে তোমার হাত ধরার জন্য। আসলে আমি ওইভাবে তোমার হাত ধরিনি। আর বুঝতেও পারিনি এইভাবে রিয়েক্ট করবে। স্যরি। তুমি খারাপ কিছু মনে করো না প্লিজ। 


- আচ্ছা ঠিক আছে। এখন আমার কথাটা আপনাকে শুনতে হবে। এটা আমার জীবন মরণের প্রশ্ন। 


- আচ্ছা বলো। 


- ভাইয়া আমি একজনকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। বাবাকে আমি অনেক বুঝানোর চেস্টা করেছি। কিন্তু উনি আমার কথা বুঝতেই চান নি। তাই আমি আপনার কাছে বললাম।


- ওও আচ্ছা, এই ব্যাপার? 


- হুম ভাইয়া আপনি প্লিজ কিছু করুন। 


- আচ্ছা। 


এরপরে এই বিষয় নিয়ে আর কোন কথা হয়নি।ভাইয়া জোর করে কিছু শপিং করে দিলো। সেগুলো নিয়ে কিছুক্ষণ পরে বাসায় ফিরে আসলাম। 


বাসায় এসে কারো সাথে কথা বললাম না। খালা এসে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে গেলেন। কিন্তু আমি কোনো কথার উত্তর না দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলাম। খালা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন হয়তো। বিড়বিড় করে কিসব বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন আমার ঘর থেকে। কিছুক্ষণ পরে আবিদ কে কল দিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম। তখন বাবার রুম থেকে জোরে জোরে কথা বলার আওয়াজ পেলাম। কি কথা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। ওখান থেকে বাবার ঘরের সামনে গেলাম। খালা আর বাবার মধ্যে কি নিয়ে যেন কথা কাটাকাটি হচ্ছে। 


- আমার ছেলে কথাকে অনেক পছন্দ করে। কিন্তু আপনার মেয়ের আচার আচরণ আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। যদি আমার ছেলে কষ্ট পায় তাহলে আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না। আর যে টাকাগুলো নিয়েছেন এর জন্য আমি আইনের আশ্রয় নিবো।


এটা বলেই খালা বাবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। কি নিয়ে কথা বললেন? টাকা কিসের? বাবা আর খালার মধ্যে টাকা নিয়ে কোন লেনদেন আছে বলে তো আমার মনে হয় না। ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে আসলাম। আবিদকে ফোন দিলাম আবারো। চারবার দেয়ার পরে ধরলো। 


- আবিদ আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। 


- সম্ভব না। 


- তুমি এরকম কেন করছো আবিদ? আমাকে কি বুঝতে পারছো না?


- তুমি আরেকজনের বউ হতে যাচ্ছো কথা, বুঝতে পারছো না? 


- আমি তোমার বউ হতে চাই। 


আবিদ আমার ফোন কেটে দিলো। এই আবিদের কি হলো বুঝতেছি না। ওর বাসায় যাবো আমি।কাল সকালেই যাবো। 


সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই চমকে গেলাম। সারাবাড়ি সাজানো হচ্ছে। মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করতে বললেন আজ নাকি আমার এংগেজমেন্ট। মুহূর্তেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি মায়ের সাথে জোরে কথা বলছি দেখে বাবা আমাকে হাত ধরে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন। কি করব বুঝতে পারছি না। আবিদকে ফোন দিয়েই যাচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না। রায়ান ভাইয়াকে তো আমি বলেছিলাম কিন্তু তা সত্বেও উনি আমার সাথে এরকম টা কিভাবে করতে পারলেন? অনেক বড় অন্যায় হচ্ছে আমার সাথে। আমি এটা কিছুতেই মানবো না। আমি আবিদকে ভালোবাসি, আর বিয়ে যদি করতে হয় তাহলে ওকে-ই করবো। নাহলে নিজেকে শেষ করে দিবো। 


গলায় ওড়না পেঁচিয়েছি। কিন্তু সেই মুহূর্তে মনে হলো আমি যদি মরে যাই তাহলে কি লাভ? আবিদকে তো পেলাম না। আর তাছাড়া আমার কিছু হয়ে গেলে অবিদ ও বাঁচবে না। তার থেকে।  এনগেজমেন্ট টা করে নেই। তারপর এখান থেকে বের হতে পারলেই আমি আবিদের কাছে চলে যাবো। আমার সাথে সবাই মিলে অন্যায় করেছে। আমি কেন অন্যের কথা ভাববো?? 


ওড়না খুলে চুপচাপ বিছানায় বসে পড়লাম। এর মধ্যে আবিদের একটা মেসেজ আসলো,

"আজ তাহলে অন্যের হয়েই যাচ্ছো? দোয়া করো আমার জন্য যাতে নিশ্বাস টা নিতে পারি অন্তত আমার আম্মাজানের জন্য।" 


মেসেজটা পড়ে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। চোখের দুইফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো ফোনের ওপরে! ফোন টা বুকের সাথে চেপে ধরে আছি। চোখের পানি বাঁধ মানছে না।


রায়ান ছোট খালা ডাক দিলেন....


-মেহমান আসছে তাড়াতাড়ি বের হবে......


(৫)

খালার চিল্লাচিল্লিতে আমি নিজেকে ঠিক করে নিলাম। খালা বাবার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করতেছে। আমার মাকেও খালা অনেক কিছু বলতেছে।


রেডি না হয়েই আমি ড্রইং রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আমাদের পরিচিত কয়েকজন স্বজনেরা এসেছেন। খালা সবাইকে মিষ্টি দিয়ে রায়ান ভাইকে বললো আংটি পরিয়ে দিতে। রায়ান ভাই আমার পাশে এসে আংটি পড়িয়ে দিলেন। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের হলো না। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি আমি। আমি শুধু দেখে যাচ্ছি।


বাবা আমার হাতে আংটিটা দিয়ে বললো।


"এটা রায়ানকে পরিয়ে দাও"


আংটি বদলের পরে নিজেকে জিন্দা লাশ মনে হলো। বেঁচে থেকেও মনে হচ্ছে আমি মৃত। আবিদ ফোনটা অফ করে রেখেছে। অনেক অভিমানে ফোন অফ করেছে নাকি আমাকে ভুলে যাওয়ার জন্য এত বাহানা। আবিদ কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতো? ভালোবাসলে তো এত সহজে ভুলে যেতে পারতো না।


রায়ান ভাইকে বলার পরেও সে আমার হাতে আংটি পড়িয়ে দিলো। কিঞ্চিৎ পরিমান সে ভাবলো না। নাকি বাবার কাছে টাকা পায় সেই দায়ে সেও রাজী হয়ে গেলো। আসলেই কেউ কারো না। সবাই সুযোগ-সন্ধানী। 


আজ আমি মেয়ে মানুষ বলে আমার বিন্দু পরিমান দাম নাই। এই সমাজে আমি মূল্যহীন, আমার অনুভূতি মূল্যহীন, আমার ভালোবাসা অসহায়। না পেরেছি বাবাকে বুঝাতে, না পেরেছি আবিদকে ভালোবেসে আকড়ে ধরতে। আর রায়ান ভাই তো স্বার্থের দায়ে আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলেন। 


হায়তে মানুষ! হায়রে বাবা। হায়রে আমার ভালোবাসা।

আনুষ্ঠানিক বিয়ের আর মাত্র ছয়দিন বাকী আছে। সবাই কত আনন্দে আছে। আমার বাবা তো রায়ান ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে। যতক্ষন না আমি কবুল বলবো, ততক্ষন হয়তো বাবার গলার কাঁটা হয়েই থাকবো।


আস্তে আস্তে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। না ঘুমাতে না ঘুমাতে চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে গিয়েছে। ক্ষুধায় পেট চো চো করছে তবুও আমার একটুও খেতে ইচ্ছে করছে না। 


সেদিন আংটি বদলের পরে রায়ান ভাই আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছে, কিন্তু আমি কারো সাথেই কথা বলিনি। আর দরজাও আটকিয়ে রেখেছি। অনেকবার বাসা থেকে চলে যাওয়ার চেস্টা করেছি কিন্তু সফল হইনি। প্রত্যেকবার কেউ না কেউ আমার রুমের সামনে থাকে যখনই দরজা খুলি। এখন তো আমিও হাল ছেড়ে দিয়েছি। হয়তো আবিদ আমার ভাগ্যে নেই। তাই নিয়তির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। চেস্টা তো কম করিনি। 


তবে মা অনেক রাতে আমার রুমে এসে খাবার খাইতে দিয়ে গিয়েছেন প্রতিদিনই। সে তো আমার মা। আমার মা অন্তত আমাকে বুঝেন। কিন্তু বাবার জন্য কোনো কিছু করতে সাহস পান না। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতেন। 


"আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। তিনি যা করবেন তোর ভালোর জন্যই করবেন।"


আমি শুধু মায়ের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতাম। তাকেও শক্ত করে কিছু বলতে পারতাম না। কারন আবিদ যে ফোনটা অফ করে রেখেছে। বাসা থেকে চলে যাওয়া বা সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত টা মায়ের জন্য বাদ দিয়ে দিলাম। মাঝে মাঝে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় ভাইয়া ও নেই, এখন যদি আমিও মায়ের কাছ থেকে চলে যাই আর বাবা আমার সাথে ভাইয়ার মতো সব সম্পর্ক শেষ করে দেয় তাহলে আমার মাকে বাঁচাতে পারবো না। আমার মা হার্টের রোগী। আমার বাবা তো মাকে গালিগালাজ করবে, সাথে আমার খালা'ও মায়ের সাথে বিষাক্ত ব্যবহার করবে। আর কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেয়ার জন্য প্রতিবেশী তো আছেই। আর যদি সুইসাইড করি তাহলে মা এম্নিতেই মরে যাবে। এতগুলো মানুষ আমার সাথে অন্যায় করলেও আমার মা আমার পাশে থেকেছেন। আমি কি করে তাকে একা করে দিবো? ভাগ্যে যা আছে তাই হোক। 


কিন্তু আবিদকে কখনো ক্ষমা করবো না। আর ওর ই বা দোষ দিবো কি করে?? ও আমাকে গ্রহণ করলেও তো বাবা মানতেন না। সব প্রেশার আমার মায়ের ওপরে পড়তো। রায়ান ভাইয়া আর খালাকে তো আমি বিয়ের পরে দেখে নিবো। তারা যখন এতই চাচ্ছে বিয়ে টা হোক, তো বিয়েটা হয়ে যাক। আর বাবা! বাবার সাথে সব সম্পর্ক এখানেই শেষ। শুধু মায়ের সাথে সম্পর্ক রাখবো, সম্ভব হলে নিয়মিত দেখা করবো। কিন্তু এই বাড়িতে আর কোনদিন ও না।


হঠাৎ করে করে আমার ভাইয়ার কন্ঠ ভেসে আসলো..


- কথা,এই কথা। কই তুই? মা, মা!


ভাইয়ার কন্ঠ শুনতে পেয়ে দরজা খুললাম। খুলে দেখি সত্যিই আমার ভাইয়া এসেছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। খুব শব্দ করে আমি কান্না করছি। বাবা মা,খালা,রায়ান ভাই সবাই ড্রইং রুমে এসে হাজির। বাবা বলে উঠলেন....


- কি কারনে এই বাড়িতে, কে আসতে বলেছে আমার বাড়িতে? কার অনুমতি নিয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করেছো? কোন অধিকারে??


- আমি আপনার বাড়িতে অধিকার নিয়ে আসিনি, আমি এসেছি আমার বোনের কাছে।


- কে বোন? কেউ তোর বোন না।


- আপনি বললেই হবে না। আপনি আমাকে পরিচয় না দিতে পারেন, কিন্তু কথা আমার বোন, আর এখানে আমার মা'ও আছেন। লাগবে না আপনার পরিচয়। আমি তাদের কাছে এসেছি।


- দেখছেন আপনি? আপনার ছেলে কতটা বেয়াদব? আমার ছেলে রায়ান এভাবে বললে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিতাম। (খালা বাবাকে বললেন।)


- আপনি চুপ করুন, একদম চুপ করুন। আপনি এখানে কোনো কথা বলবেন না। এখন আমি যা বলবো তাই শুনবেন চুপচাপ। 


- বের হয়ে যা বাসা থেকে। এক্ষনি বের হয়ে যা বেয়াদব। নাহলে জুতাপেটা করে বের করে দিবো।( বাবা বললেন)


- তা আপনার যা ইচ্ছা হয় করুন, কিন্তু আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি সেটার ফয়সালা করেই এখান থেকে বের হবো।


- মানে? কিসের উদ্দেশ্য? 


- একটু পরেই দেখবেন।


এরই মধ্যে কয়েকজন লোক আমাদের বাসায় প্রবেশ করলেন।

আমি তাকিয়ে দেখলাম আবিদ পিছনে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এটা আমার ভ্রম না তো? হতেই পারে। নাহলে আবিদের তো এখানে আসার কথা না। চোখটা কচলিয়ে ভালো মত তাকালাম। নাহ, সত্যিই আবিদ এসেছে।


- আবিদ সামনে আসো। (ভাইয়া বললেন)


আবিদ ভাইয়ার পাশে মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভাইয়ার অপর পাশে। আবিদকে দেখে চোখের পানি আর আটকাতে পারলাম না। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেলো। 


ভাইয়া আবারো বলতে শুরু করলেন...


- এই আবিদ ছেলেটাকে কথা ভালোবাসে। কিন্তু আপনার ভয়ে কথা আপনাকে ওর ভালোবাসার কথা বলতে পারেনি। ওর ভয় হচ্ছিলো যেটা আপনি আমার সাথে করেছেন ঠিক সে-ই কাজটা ওর সাথে ও না করে ফেলেন। ও আপনার সম্মানের কথা ভাবলো অথচ আপনি বাবা হয়ে আপনার মেয়েকে দুঃখের সাগরে ফেলে দিচ্ছেন। অবশ্য আপনি পারেনও বটে। আপনার কাছে আপনিই রাইট।  আপনার সন্তানেরা কিছু না।


- এই ছেলে, এই। তুমি এত কথা বলছো কেনো?(খালা বললেন)


- নিষেধ করেছি কথা বলতে। চুপ থাকেন। আমি এখানে পুলিশ অফিসার নিয়ে এসেছি। জেলে ঢুকিয়ে দিবো। একটা মেয়ের অমতে বিয়ে দেওয়া অন্যায়। এটা আইন ভঙ্গ করা। আমি যা বলবো তা শুনুন সবাই।


আগামীকাল সাত তারিখ কথা আর আবিদের বিয়ে হবে। কাল ওর বাসার মেহমান আসবে সবাই। ওরা দুজন দুজনাকে ভালোবাসে। ওদের দুজনের বিয়ে দিয়েই আমি এখান থেকে যাবো। সাথে থাকবে আমার বন্ধু পুলিশ অফিসার।  যদি উল্টাপাল্টা কেউ কিছু করতে যান তো খবর আছে।


আপনাদের মত কয়েকজন মানুষ সমাজটাকে দেয়াল বন্দি করে রেখেছেন। আপনারা সন্তানদের ভালোবাসাকে দেয়াল বন্দি করে রেখেছেন। এমনকি আপনারাও দেয়াল বন্দি হয়ে আছেন। নিজেদেরকে এই দেয়ালের মাঝ থেকে বের করে দেখুন, ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কতজনেই সুখে আছে। এরকম স্বার্থপরের মত হয়ে অন্যকে অসুখি করবেন না। 


বাবা আমার মত কথাকে কষ্ট দিবেন না প্লিজ। যদি দিতে চান তো একা হয়ে যাবেন। মাকে আমি এখান থেকে নিয়ে যাবো। আর কথা থাকবে আবিদের কাছে।


খালা আপনি যে বাবাকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়েছিলে। টাকাটা নিয়ে যাবেন। সাথে করেই নিয়ে এসেছি। 


কথা আংটি ফেরত দিয়ে দে। তুই তো একটা গাধী। কিছুই করতে পারবি না। যা করার এই আবিদই করলো। এই আবিদই আমাকে সব কিছু বলেছে তোর আর ওর ব্যপারে। তুই কিচ্ছু করতে পারবিও না। আবিদ তোকে অনেক ভালোবাসে, বুঝলি?


আর মা। মা'ও কিন্তু আমাকে কল করেছিলো। সেও বলেছে তোর কথা। মাকে তো একটু জড়িয়ে ধর। সেও তোর কষ্ট দেখে আমাকে নিজ থেকে ফোন দিয়ে বলেছে।"


সব দেখে খালা বললেন, 


- বুবু তুমি আমাদের সাথে এমন করতে পারলে? তুমি তো জানতে রায়ান ছোট বেলা থেকেই কথাকে পছন্দ করে। 


ভাইয়া রেগে গিয়ে খালাকে বললেন,


- আপনি একটা কথাও বলবেন না। আর সম্পর্কের দোহাই তো একেবারেই দিবেন না। আপনি না আমাদের খালা হন? লোকে বলে খালা নাকি মায়ের প্রতিরূপ হয়। কিন্তু আপনি কি? জোর করে এদের বিয়ে দিতে চাচ্ছেন শুধুমাত্র রায়ান পছন্দ করে বলে। অথচ কথা এই বিয়েতে খুশি থাকবে কিনা এই ব্যাপার টা একবারো ভাবেন নি। কথা যদি কিছু একটা করে ফেলতো তাহলে রায়ান ও কি কথার সাথে সাথে মরে যেত? কখনোই না। অন্য কোনো মেয়ের সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দিতেন। কিন্তু আবিদ ঠিকই কথার জন্য নিজের জীবন দিতে পারে। আপনাকে আমার আর কিছুই বলার নেই। আপনারা আসলে কোনদিনও বুঝবেন না। 


সব কথা আমার ভাইয়া'ই বলে গেলেন। মা শুধু একটু হেসে দিয়ে বললেন...


"আমার ছেলের বউটাও যেনো কাল আসে কথার বাবা। নইলে কিন্তু আমিও আমার ছেলের সাথে চলে যাবো। বলে দিলাম।" 


বাবা চশমাটা খুলে পরিস্কার করে পরে নিলেন। অন্য দিকে খালা আর রায়ান ভাই  ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে গেলেন।


ভাইয়া আবিদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

 

 "আমার বোনটাকে দেখে রেখো ভাই।" 


আবিদ চোখে পানি নিয়ে বললো, 


"জীবন ও দিয়ে দিবো ও চাইলে।" 


আমি ভাইয়ার কাধে মাথা রাখলাম। আর ভাইয়া আবিদের কাঁধে হাত রাখলেন।


--------সমাপ্ত


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন এখানে ক্লিক করে।