নারীর সম্মান নিয়ে গল্প

শ্বশুর আমার শরীরে বি'শ্রী ভাবে হাত দেয়। বিয়ের যখন দ্বিতীয় দিন তখন শ্বশুরকে চা দিতে গেলে, শ্বশুর চায়ের কাপ নেওয়ার বাহানায় হাতটা ছুঁয়ে দেয়। তখন এতটা পাত্তা দিলাম না। কিন্তু দিনকে দিন তার অত্যা'চার বাড়তে থাকে। সুযোগ পেলেই হাত ধরার বাহানা খুঁজে। খারাপ নজরে তাকায়। কিন্তু আমি কথাগুলো কাউকে বললাম না। শ্বশুরকে যথেষ্ট এড়িয়ে চলতে লাগলাম। 


বিয়ের এক মাস পাড় হলো। আমার স্বামী তখন অফিসে। শাশুড়ি পাশের বাসায় গেছে। আমি রান্নাঘরে রান্না করছি। খালি বাসা পেয়ে শ্বশুর পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমার অন্তর আ'ত্মা কেঁ'পে উঠে। প্রান'পনে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। মিনতি করে শ্বশুরকে বললাম,

"কি করছেন বাবা? দয়া করে আমাকে ছেড়ে দেন।


শ্বশুর আমাকে ছেড়ে দেওয়ার বদলে আরো শক্ত করে ধরে। আমার চোখ বেয়ে অশ্রুকনা ঝড়ে পড়তে থাকে। দরজায় পরপর দুই বার কলিং বেল বাজায় শ্বশুর আমায় ছেড়ে দেয়। মনে মনে দরজার বাহিরে থাকা মানুষ টাকে ধন্যবাদ জানলাম।


দরজা খুলে দেখি আমার শাশুড়ি এসেছে। শাশুড়িকে সব বলার পর শাশুড়ি চুলের মুঠি ধরে বলল,

"মুখ পুড়ি আমাদের খেয়ে, আমাদের পড়ে, আমাদের নামেই বদ'নাম করছিস। কি এমন করেছে তোকে? একটু জড়িয়েই তো ধরেছে। তাতেই এতো ঢং শুরু করেছিস। 


শাশুড়ি আমাকে মারতে লাগলেন। শ্বশুর দরদ দেখিয়ে বলল,

"অভির মা বউমা ছোট মানুষ বুঝতে পারেনি ওকে ছেড়ে দাও। 


শাশুড়ি তখন রাগী স্বরে বলল,

"দেখেছিস আমার স্বামীকে। উনার নামে কল'ঙ্ক ছড়া'চ্ছিস আর উনি তোকে বাঁচাতে চাইছে। 


শাশুড়ির কাছ থেকে মাইর আর গা'লি ছাড়া কিছুই পেলাম না। মোবাইল নিয়ে ফোন লাগালাম মায়ের কাছে। মাকে সবকিছু খুলে বলতেই মা বলল,

"অভাবের সংসার। আমাদের নিজেদেরই চলতে ক'ষ্ট হয়। তুই আসলে আরেকজন মানুষ বাড়বে। জামাইকে বলে সবকিছু ঠিকঠাক করে নে। 


মায়ের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,

"হায়রে অভাব।


মা, শাশুড়ির থেকে আশানুরূপ ফল না পেয়ে স্বামীর কাছ থেকে বিচারের আশা ছেড়ে দিলাম। স্বামী ও হয়তো শাশুড়ির মতোই মারবে। তাই তাকে আর কিছু জানালাম না। 


এ ঘটনার বেশ কিছুদিন পর আমি আমার রুমে দুপুর বেলা কাপড় ভাঁজ করছি। শ্বশুর আমার রুমে এসে পেছন থেকে শাড়ি ভেদ করে পেটে হাত রাখলেন। পিছন ফিরে শ্বশুরকে ধা'ক্কা মেরে চিৎকার শুরু করলাম। শাশুড়ি উনার রুম থেকে এসে আমাকে গা'লি দিয়ে শ্বশুরকে নিয়ে চলে গেলেন।


রাতে স্বামী বাসায় আসলে তাকে সবকিছু জানালে তিনি আমাকে থা'প্পড় মেরে বলেন,

"একটু মানিয়ে নিতে পারো না? মেয়ে হলে এমন কতোকিছুই স'হ্য করতে হয়।


স্বামীর কথায় শ্বশুরের সাথে সাথে স্বামীর প্রতি ও তী'ব্র ঘৃ'ণা জন্ম নিল। কত নির্দ্বিধায় বলে ফেলল "মেয়ে হলে এমন কতোকিছুই স'হ্য করতে হয়"। পিতা তুল্য শ্বশুরের কাছ থেকে ও যদি নির্যা'তিত হতে হয় তাহলে মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? 


যেই স্বামীর বাড়িতে সারাক্ষণ সম্মান হারানোর ভয়ে থাকতে হয়। সঠিক বিচার পাওয়া যায় না। ঠিক করলাম সেই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তবে যাওয়ার আগে শ্বশুরকে তার প্রা'প্য শা'স্তি দিয়ে যাব। কি শা'স্তি দিব? পুলিশের কাছে যাব? কিন্তু টাকার কাছে যে পুলিশ ও হার মানে। এখন পুলিশ আমার কথায় শ্বশুরকে নিয়ে গেল। কিন্তু কয়েকঘণ্টা পরই আমার স্বামী গিয়ে টাকার জোরে শ্বশুরকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবে। তারপর? তারপর কি হবে? 


আমি চলে যাওয়ার পর স্বামীকে হয়তো আবার বিয়ে করিয়ে আনবে। তখন সেই মেয়ের শরীর দেখেও শ্বশুরের লো'ভ জাগবে। আমার স'ম্মান হারায়নি বলে সেই মেয়ের যে স'ম্মান হারাবে না তার গ্যারা'ন্টি কোথায়? অন্য কোনো মেয়ের দিকে খারাপ নজরে তাকানোর সুযোগ আমি দিবো না। 


পরেরদিন সকাল হলো। স্বামী তখন অফিসে চলে গেছে। শ্বাশুড়ি গেছে মার্কেটে। স্বামীর কাছ থেকে আগে থেকেই কিছু টাকা সরিয়ে রাখেছিলাম। রান্নাঘরে গিয়ে শ্বশুরের জন্য যত্ন সহকারে চা বানাচ্ছি। এটাই হয়তো আমার হাতে তার শেষ চা খাওয়া। 


চা বানানো শেষে চায়ের মধ্যে বি'ষ মিশিয়ে দিলাম। হাসিমুখে শ্বশুরের রুমে চা নিয়ে গেলাম। শ্বশুর আমাকে দেখে বেজায় খুশি হলেন। শ্বশুরকে চা দিতে গেলে এবারো শ্বশুর হাত ছুঁয়ে দিল। শ্বশুর তৃ'প্তি সহকারে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চা খেলেন। শ্বশুরের চা খাওয়া শেষ হলে তার রুম থেকে বেরিয়ে বাহির থেকে দরজা লক করে দিলাম। কিছুক্ষণ পর শ্বশুরের রুম থেকে চিৎ'কার শুনতে পেলাম। শ্বশুর যন্ত্র'নায় ছট'ফট করতে করতে চিৎ'কার করছে। শ্বশুরের চিৎকার শুনে আমার আ'ত্মার শান্তি হলো। 


বেশিক্ষণ আর এখানে থাকা যাবে না। একটা ব্যাগে জামাকাপড় গুছিয়ে কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। শ্বশুর হয়তো এতক্ষণে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। যে নারীর সম্মানের দিকে হাত বাড়াবে তাকে এভাবেই শেষ করে দেওয়া উচিত। হোক সে পিতৃতুল্য শ্বশুর। 


-নারীর_সম্মান 

-আদনান_তাওসিফ


বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।