রহস্যময় নারী

রহস্যময় নারী

তাকে বাধা দিবে কে...👿

পর্ব -০১


সে প্রেগন্যান্ট। মেয়েটির বয়স মাত্র ৪ বছর। রিয়াজের একমাত্র মেয়ে, সোহানা ।

এত ছোট মেয়েটিকে প্রেগন্যান্ট করবে কে। রিয়াজ সাহেব সোহানাকে নিয়ে যায় ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার বলল,পেটে বাচ্চা আছে ঠিকই। কিন্তু বাচ্চাটির মাথা নেই৷ অদ্ভুত বাচ্চার বিবরণ শুনে রিয়াজ ভয় পেয়ে যায়। একিই তো একটি বাচ্চার পেটে বাচ্চা,তারউপর ব্যাপারটা আরো জটিল। মাথা ছাড়া এই বাচ্চা সোহানার পেটে এলো কিভাবে , সেটাই আগে খোজ নেওয়ার বাকি৷ 


প্রথমে রিয়াজ বুঝতে পারেনি। সোহানা একদিন বলল,তার বাকি মাথা ব্যাথা। রিয়াজ সাহেব মাথা ব্যাথার মেডিসিন এনে দেয়। পরে সোহানা বমি শুরু করে, আর৷ পেট ব্যাথা বলে চিল্লাতে থাকে। রিয়াজ সোহানাকে পেট ব্যাথার মেডিসিন দেয়। তাও ঠিক হচ্ছিলোনা। কারণ এতটুকু একটা মেয়ে প্রেগন্যান্ট, এইটা কে বিশ্বাস করবে৷ রিয়াজের ভিতরে কোনো ভাবেই প্রেগন্যান্ট এর সন্দেহটা ঢুকেনি। কিন্তু মেয়ের পেট ব্যাথার কারণে ডাক্তারের কাছে আনতে বাধ্য হয়। আর এসেই এই ঘটনা শুনেন। তিনি তাড়াতাড়ি উনার স্ত্রী মুক্তাকে জানায় সবডা। মুক্তাও বেশ চমকে যায়। ৪ বছরের মেয়ে প্রেগন্যান্ট কথাটা শুনতেই গুজবের ঘ্রান পাওয়া যায়। কিন্তু এইটাই সত্যি। সোহানা প্রেগন্যান্ট। 

রিয়াজ ডাক্তারকে কল দিয়ে বাচ্চা নষ্ট করার অপার দেয়। ডাক্তার রাফি সাহেব বলল।


- দেখুন রিয়াজ সাহেব। আপনার মেয়ের গর্ভস্থানের সাথে বাচ্চাটি এতোই কঠিন ভাবে পেচিয়ে আছে যে, বাচ্চা বের করতে হলে সোহানার পেটের ভিতর অনেক নাড়ি কাটা যাবে। এতে সোহানার মৃত্যুও হতে পারে।

- রাফি সাহেব, আপনারা কতো ডেলিভারির কাজ করেন। এইটা কি কোনো ভাবেই পসিবল না? এতো কঠিন ভাবে বাচ্চা পেচি আছে কিভাবে। সব গর্ভস্থান তো একই।

- হ্যাঁ, কিন্তু সোহানার পেটের বাচ্চাটি বড়ই অদ্ভুত। সে বাচ্চার মাথা নেই। আমি আরো গবেষনা করে বুঝলাম,বাচ্চাটির হাত প্রায় ২ ফুট লম্বা। অর্থাৎ তার দেহের থেকে ৩ গুন লম্বা তার হাত। আর পা দুটোও প্রায় ৪ গুন বড়। এখন কথা হচ্ছে বাচ্চাটির হাত আর পা সোহামের নাড়ির সাথে এমন ভাবে পেছিয়ে আছে যে, কোনো ভাবেই তাকে সিজার করে বের করা পসিবল না।

- তো অন্যভাবে তো করুন। যেকোনো ভাবেই কি করা যাবেনা?

- যেতো, কিন্তু সোহানার গর্ভস্রাব এখনো পরিপূর্ণ না। আমার ২৭ বছরের ডাক্তারিতে আমি এমন রোগী দেখিনি। এতো ছো মেয়েটি কিভাবে প্রেগন্যান্ট হতে পারেন। শুনলে অবাক হবেন, এই বাচ্চার বয়স এখন ৫ বছর চলে।

- কিহহ, সোহানার বয়স মাত্র ৪ বছর। তাহলে বাচ্চার বয়স কিভাবে ৫ বছর হয়। 

- সেটাই তো ভাবছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী বলতে হচ্ছে, সোহানার জন্মের আগ থেকে সোহানা প্রেগন্যান্ট। কিন্তু বিজ্ঞান অনুযায়ী এইটা কোনো ভাবেই সম্ভব না। আমি সত্যিই ক্লান্ত। আর ভাবতে পারছিনা।

- আচ্ছা, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে নাতো? যদি এমন কিছুই না হয়ে থাকে?

- আজ অব্দি কোনো সময় আমার গবেষণা ভুল হয়না। এইটাই সত্য আর এইটাই বাস্তব। সোহানা প্রেগন্যান্ট, তার পেটের বাচ্চা অদ্ভুত আর সেই বাচ্চার বয়স.....

- ৫ বছর তাইতো? আচ্ছা এখন আমার কি করা উচিৎ।

- এক কাজ করতে পারেন। কোনো মায়াবিদ্যা ওয়ালা লোক দেখান। এই ছাড়া আর উপায় পাচ্ছিনা। 

- কিহহ, শেষ এই রিয়াজ যাদুকে বিশ্বাস করবে?

- দেখুন রিয়াজ সাহেব, আমি এসব বিশ্বাস করিনা। কিন্ত সোহানাকে দেখার পর এই কালো যাদুর উপর আমার বিশ্বাস জন্ম হতে লাগলো।আপনি প্লিজ কোনো কবিরাজ দেখান।

- কি বালের বিজ্ঞান নিয়ে বসছেন আপনারা হা? বিজ্ঞানের উপর কোনো কিছু আছে নাকি। 

- আগে জোর গলায় "না" বলতাম। কিন্তু এখন বলবো আমি শিওর না। আপনি যতই রাগ করেন, এর চেয়ে ভালো কিছু আমার মাথায় কাজ করেনা।


এ বলেই রাফি সাহেব ফোন কেটে দিলো। রিয়াজ মাথায় হাত দিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে আছে৷ রাফি সাহেবের কথার আগামাথাও বুঝেনি তিনি। জন্মের আগেই কিভাবে প্রেগন্যান্ট হয় মানুষ। অদ্ভুত অলৌকিক এই বার্তা যেনো হাজারো রহস্য আটকে রেখেছে। প্রশ্ন জমা হলো একগোছা। প্রথমত এই বাচ্চা সোহানার পেটে এলো কিভাবে। জন্মের আগে কিভাবে সোহানা প্রেগন্যান্ট হয়৷ আর বাচ্চাটি অদ্ভুত কেনো। এইটা কি আসলেই কোনো অলৌকিক যাদুর খেলা? নাকি রিপোর্টটাই ভুল। রিয়াজ সাহেব পড়ে যায় মহা চিন্তায়। মুক্তাও কথাটা শুনে সেম টেনশনে পড়ে যায়। এদিকে সোহানা কয়েক ঘন্টা পর পর পেট ধরে চিৎকার মারে৷ আর বলে " আব্বু আমার পেট ব্যাথা করছে"। 


রিয়াজ অলৌকিকে কিছুতে বিশ্বাসী না। কিন্তু এখন বিশ্বাস হোক আর না হোক, অন্তত কবিরাজের হেল্প লাগবেই তার। তাই রিয়াজ দেরি না করে, বাসা থেকে বের হয়ে যায়। গ্যারেজে গিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে গেট থেকে। তখন রিয়াজ খেয়াল করো, গেটের দারোয়ানটা কেমন অছেনা। সে হাসছে,কিন্তু তার দাত ছিলোনা। আর দারোয়ানের চোখ দুটো সাদা ছিলো। রিয়াজ গেট থেকে বের হয়েই, আবার গাড়ি ব্যাক করে৷ এরপর দাওয়ানের ক্যাবিনের দিকে তাকিয়ে দেখে,দারোয়ান সেখানে নেই।রিয়াজ ফোন বের করে দারোয়ানকে কল দেয়। দারোয়ান রিসিভ করতেই রিয়াজ বলল,


- কি হলো মূসা কাকা, ডিউটি রেখে কোথায় গেলেন।

-আরে স্যার,আমি তো দোকানে এসেছি জ্বরের মেডিসিন নিতে। 

- কখন গেছিলা।

- এইতো ১০ মিনিট আগে।

- ১০ মিনিট আগে? আমি তো আপনাকে ২ মিনিট আগে গেটের সামনেই দেখলাম।

- জ্বী না স্যার। হয়তো ভুল দেখছেন। আমি তো সেই ১০ মিনিট আগেই আসছি।

রিয়াজ আরো কনফিউজড হয়ে যায়। তবে এখন গেটের সামনে কে ছিলো৷ যার চোখ সাদা সাদা, মুখে ভয়ংকর হাসি ছিলো?

যাইহোক, রিয়াজ আবার রওনা দিলো কবিরাজের উদ্দেশ্যে। ৩৬ মিনিট পর কবিরাজের দেখা মেলে। এরপর রিয়াজ উনাকে বলে।


- দেখুন, আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন আগে ( এরপর রিয়াজ সব কথা খুলে বলে)

- তুই এক কাজ কর। তোর বাচ্চাকে কোরবানি দিয়ে দে।

- মানে? এসব কি বলছেন আপনি। আমি সোহানাকে কোরবানি কেনো দিব। 

- তাহলে তোর সন্তানের পেটের ভিতর সেই বাচ্চাটি নষ্ট হবে। 


এর মধ্যেই রিয়াজের ফোনে কল আসে। রিয়াজ স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে কবিরাজের ফোন। সঙ্গে সঙ্গে লাফ মেরে উঠে রিয়াজ সামনে তাকায়। দেখে সেখানে কেও নেই।

রিয়াজ বেশ আতংকিত হয়ে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে কবিরাজ বলল,


- আমি বাহিরে এসেছিলাম। তোমার জন্য কিছু নাস্তা পানি আনতে। বাসায় বসো।

- আ, আ, আপনি কখন গিয়েছিলেন?

- সে তো অনেক আগে। প্রায় ২০ মিনিট আগে। ভাবলাম তোমাকে কল দিয়ে জানিয়ে দেই।

- তাহলে এতক্ষণ আমার সাথে কথা কে বলল?

- কে বলবে, বাসায় তো কেও নেই।

- আপনি এক্ষুনি আসুন। এখানে কিছুই স্বাভাবিক নেই।

- ওকে ওকে আসছি।


রিয়াজ এসেছে একজন নামকরা বিখ্যাত কবিরাজের কাছে, উনার নাম মারুফ হোসেন।কিন্তু উনার চেহারা নিয়েই এতক্ষণ কেও রিয়াজের সাথে কথা বলেছে। সে বলল সোহানাকে কোরবানি করার জন্য৷ অর্থাৎ বুঝতে বাকি নেই, কোনো কালো শক্তি সোহানাকে মেরে ফেলতে চায়। রিয়াজ চুপচাপ মারুফের বাসায় বসে আছে। চারপাশে কিছুক্ষণ পর পর একটা ভয়ংকর গর্জন শুনা যাচ্ছে। রিয়াজ এতদিন এসবে বিশ্বাসী না হলেও, এখন পুরোপুরি বিশ্বাস করতে বাধ্য। ভয়ে রিয়াজের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে। কেও যেনো রুমের আড়ালে বলছে " মেরে দে, মেরে ফেল,তাকে আসতে দিবিনা"। আবার কেও বলতেছে " মরে যাবি,মৃত্যুর সঙ্গে খেলিস না"। এরকন অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ একটু পর পর রিয়াজ শুনেই যাচ্ছে। ভয়ে হাত পা অবশ হলেও, মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেনা রিয়াজ। এরা অশরীরী৷ কালো ছায়ার উৎপত্তি এক বায়ুথলীর সৃষ্টি৷ এদের সাথে কি বা বলবে। রিয়াজ উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে৷ ভয়ংকর শব্দগুলো আর শুনতে পারছেনা সে৷

হুট করে সব আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়৷ রিয়াজ মাথা তুলে দেখে কবিরাজ দরজা খুলে বাসায় প্রবেশ করেছে। রিয়াজ বুঝতে পারে, কবিরাজের আগমনে সব পালিয়ে গেছে৷ কবিরাজ বাসায় ঢুকতেই এদিক সেদিক কিছু খুজতে থাকে৷ আর নাক দিয়ে কিছুর ঘ্রান অনুভব করার চেষ্টা করে৷ এরকম কিছুক্ষণ করে, এরপর রিয়াজের সামনে এসে বসে বলল,


- বাসায় কিছু অশরীরী প্রবেশ করেছিলো৷ এখন একটাও নেই। 

- হ্যাঁ, আমাকে এতক্ষণ ভয় দেখিয়েছে।

- ওরা তোমার কোনো শারীরিক ক্ষতি করবেনা৷ 

- কেনো? ওরা শয়তান, আমাকে ক্ষতি করবেনা কেন।

- তুমি এখানে কেনো এসেছো, তা কাল রাতেই জেনেছি আমি। রাফি সাহেব কাল রাতে কল দিয়ে আমাকে জানায় সব। এরপর তোমার কল পেয়ে আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি কেন এসেছো।

- সোহানার ব্যাপারে সব বলে ছিলো? 

- হ্যাঁ। আর আমি কাল রাতেই বিষয়টি নিয়ে ঘেটেছি। আর বুঝেও গেছি। 

- তো বলুন? 

- এখানে অশরীরী একটা নয় শুধু। একদল তোমার সন্তানের পেটের বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে চায়। আরেকদল সোহানার পেটের বাচ্চাকে মারতে চায়, আরেকটা দল আছে, তারা সোহানার পেটের বাচ্চাকে নিজেদের বশে করে নিতে চায়, আর আরেকটা দল আছে, যারা তোমার পুরো ফ্যামিলিকে শেষ করতে চায়।

- মোট চারটা অশরীরীর দল? 

- হ্যাঁ, আর এই চারটির উদ্দেশ্য একটাই, সোহানার পেটের বাচ্চাটিকে নিয়ে ( কথাটা শুনেই রিয়াজ মরুফ সাহেবের পায়ে পড়ে বলল)

- প্লিজ, আমার ৪ বছরের বাচ্চাটিকে বাচান। ও অনেক ছোট, আর কত সহ্য করবে এমন চাপ। দরকার হলে আমাকে এর মাঝে কোরবানি করে দিন। তবু আমার সোহানাকে বাচান,প্লিজ। ( বলেই কান্না করে দিল রিয়াজ)

- দেখুন রিয়াজ সাহেব। এখানে এখন কিছুই করার নেই। ধীরে ধীরে এর সমাধান তোমাকেই খুজতে হবে।  

- আমি কিভাবে খুজবো।

- সেটা পরিস্থিতি বলে দিবে। এখন বাসায় যাও। তোমার বাসায় দুই দল অশরীরী আছে এখন। 

- তারা কে কে।

- একদল হচ্ছে অশরীরী সেই বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনার দল, আরেকটা হচ্ছে, তোমার ফ্যামিলিকে শেষ করার দল।

- অর্থাৎ তারা দুই দল দুজনের শত্রু?

- হ্যাঁ, ওরা নিজেদের মাঝেই যুদ্ধ শুরু করে দিবে। আর সেটা তুমি নিজেই টের পাবা।

- আচ্ছা, একটা উপায় তো বলুন আমাকে৷ আমি কি কি করবো এখন।

- তোমার এখন টার্গেট থাকতে হবে, চারটি দলকে চিহ্নিত করা। 

- তারপরে? 

- সেটা পরেই জেনে যাবে।

- আচ্ছা আমি আসি এখন।

- হুম যাও, আর হ্যাঁ, সোহানার খেয়াল রেখো।


রিয়াজ কবিরাজ মারুফের বাসা ছেড়ে চলে আসে বাড়িতে। বাড়িতে দেখাশুনা করার জন্য, আরো একটি কাজের মেয়ে রাখে। মেয়েটির নাম নিপা। বাড়ির কাজ কর্ম নাকি ভালো করে। তাই তাকে রাখা হয় নিজেদের বাড়িতে। রিয়াজ বাসায় আসতেই অন্য রকম কিছু অনুভব করতে থাকে৷ যেনো এখানে ওখানে লুকিয়ে আছে কেও। সোহানার রুমে গিয়ে দেখে, সোহানা ঘুমাচ্ছে। নিষ্পাপ মেয়েটির উপর কতোই না অত্যাচার। রিয়াজের চোখের কোনে এক ফোটা পানি চলে আসে। এরপর রিয়াজ মেয়ের দিকে তাকাতে তাকাতে দরজা অফ করে। দরজা অফ করে মাথা ঘুরানোর আগে, আবার হুট করে দরজা খুলে ফেলে। রুমে ঢুকেই রিয়াজ এদিক সেদিক পায়চারি করে। কারণ হচ্ছে, রিয়াজ দরজা অফ করার সময় সোহানার পাশে কালো জামা পড়া,ভয়ংকর একটা চেহারা দেখেছে। নিশ্চয় বড়সড় কোনো কিছু হতে চাচ্ছিলো। রিয়াজ সোহানাকে কোলে তুলে নিয়ে যায় নিজের রুমে। এরপর মুক্তা সহ সোহানাকে দেখাশুনা করে। 


দেখতে দেখতে রাত নেমে আসে। কাজের মেয়ে নিপা এসে বলল,


- দুলাভাই, ভাবি। খাওন হইয়া গেছে,খাইবেন না?

- হ্যাঁ, এক কাজ করো। খাবার রুমে নিয়ে আসো।

- ঠিক আছে আপা।


মুক্তার অর্ডারে নিপা খাবার রুমে নিয়ে আসে। এরপর সবাই খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে। 


রাত ২ টা.....

একটা কুটকুট শব্দে রিয়াজের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রিয়াজ চোখ খোলেই দেখে, খাটে মুক্তা এবং সোহানা কেওই নেই। রিয়াজ লাফ মেরে উঠেই লাইট অন করে রুমের। রুমের আসবাবপত্র সব এলোমেলো করা। সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজ জানাকার বাহিরে একটা বিকট শব্দ শুনে। রিয়াজ তাড়াতাড়ি জানালার পর্দা সরিয়ে দেখতে পায়, বাহিরে দুইটা কালো ছায়া উধম মারামারি লেগেছে। একজন একজনকে এমন জোরে উড়িয়ে ঘুরিয়ে মারছে, যেনো হলিউড মুভির কোনো সিন৷ রিয়াজ তাড়াতাড়ি উপর তলা থেকে নিছের তলায় এসে দেখে, সোহানা আর মুক্তা ফ্লোরে পড়ে আছে। রিয়াজ আগে সোহানাকে কোলে তুলে মুক্তার কাছে যায়। মুক্তার মুখে ক্ষতবিক্ষত আচড়ের চাপ। রিয়াজ মুক্তাকে কয়েকবার ডেকে তুলে। এরপর দুজনকে নিয়েই চলে আসে রুমে। মুক্তাকে অশরীরীরা অনেক মেরেছে। মুখে দাগ। রিয়াজ মেডিসিন লাগাচ্ছে আর মুক্তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। এ কোন অভিশাপ নেমে এলো তাদের জীবনে। সারারাত আর ঘুমায়নি তারা সোহানাকে পাহারা দেয়। সকাল সকাল রিয়াজের ফোনে কল আসে, কবিরাজ মারুফ মারা যায়। রিয়াজ একটা শক্তিকে হারিয়ে আরো ভেঙ্গে পড়ে। ঠিক তার পর পরই রিয়াজের ফোনে আরেকটা কল রিসিভ করতেই খবর আসে, ডক্টর রাফি সাহেব নিজের দেহে নিজে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে আত্মহত্যা করে। রিয়াজের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। 


কবিরাজ মারুফ মারা গেলো। ডক্টর রাফি আত্মহত্যা করলো। এদিকে চারটি অশরীরী তাদের ঘিরে আছে। তাদের একা চিহ্নিত করবে কিভাবে। চিহ্নিত করেও বা, কি করবে। সোহানাকে কিভাবে বাচাবে। রিয়াজ এখন কি করবে? কি হবে এখন?


তাকে বাধা দিবে কে...👿

পর্ব -০২ ও শেষ 


কবিরাজ মারুফ মারা গেলো। ডক্টর রাফি আত্মহত্যা করলো। এদিকে চারটি অশরীরী তাদের ঘিরে আছে। তাদের একা চিহ্নিত করবে কিভাবে। চিহ্নিত করেও বা, কি করবে। সোহানাকে কিভাবে বাচাবে। রিয়াজ এখন কি করবে? কি হবে এখন?


এসব চিন্তা করতে করতে প্রায় অসুস্থ হয়ে যায় রিয়াজ। কিছুক্ষণ বাদে রিয়াজের ফোনে একটি কল আসে। অচেনা নাম্বার। রিয়াজ রিসিভ করতেই, ওপাশ থেকে একটি মেয়েলী কন্ঠ ভেসে আসে।


- হ্যালো, রিয়াজ সাহেব বলছেন? 

- জ্বি, কে আপনি? 

- আমি অরন্য। আপনার মেয়েকে বাচাতে সাহায্য করতে পারি। 

- অরন্য? তা আপনি কিভাবে জানলেন আমার মেয়ের ব্যাপারে। 

- আমি সব জানি। আপনি একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবেন? 

- বাড়িতে সোহানাকে একা রেখে বের হবো?

- চিন্তার কারণ নেই। সেই চারদল অশরীরী দিনের বেলায় সোহানাকে কিছু করবেনা। তারা রাতের বেলায় সব চেষ্টা করবে। দিনের বেলায় করবেনা।

- আপনি সেই চারদলের ব্যাপারেও জানেন? আপনার সাথে তো দেখা করতেই হচ্ছে।

- আপনি এক কাজ করুন। মিরপুর ৮ এ চলে আসুন। সেখানে এসে তান্ত্রিক অরন্যের বাসা কোনটা যে কাওকে বললেই দেখিয়ে দিবে।

- আচ্ছা, আমি বের হচ্ছি। ৩-৪ ঘন্টা লাগবে আসতে।

- আচ্ছা আসুন।


রিয়াজ পেলো নতুন কোনো সাহায্যের হাত। একদম একা মনে করেছিলো নিজেকে। যাক এখন তো কারো দেখা মিলেই গেলো। যদি কিছু করা যায়।আর উনিও যেহেতু এতকিছু জানেন, সে হিসেবে কোনো ভাবেই সাহায্য করতে পারবে নিশ্চয়। 

৪ ঘন্টা ১২ মিনিট পর রিয়াজ পৌঁছে মিরপুর ৮ নাম্বারে। গিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করায় উনি বাসা দেখিয়ে দেন। এরপর রিয়াজ উনার বাসার নিছে এসে কল দেয় উনাকে। অরন্য তান্ত্রিকের লোকজন এসে রিয়াজকে রিসিভ করে উপরে নিয়ে যায়। রিয়াজ উনার সামনে যেতেই বেশ অবাক হয়। রুমটা দেখতে খুবই ভয়ংকর। এর মাঝে অরন্য তান্ত্রিক যেভাবে সেজে আছে, যেনো বড়সড় কোনো তান্ত্রিক। কপালে ইয়া বড় এক লাল বর্নিত গোলকার বৃত্তের চিহ্ন। চুলগুলো বিশাল, আর উনার চাহনি আরো ভয়ংকর। রিয়াজ উনার সামনে বসে জিজ্ঞেস করলো।


- আমিই রিয়াজ।

- হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। 

- বলুন, আপনি কিভাবে জানেন। 

- সোহানার পেটে যে অশরীরী বাচ্চা। সে এক ভয়ানক শয়তান। এই শয়তানটা ভৃমিষ্ঠে জন্ম নিবে, তা অনেক আগে থেকেই জেনেছি আমি। গুরু মাসুদ রানার ধারণায় এই বাচ্চা পৃথিবীতে আসবে। মাসুদ রানার ও আসবেই বইটা পড়েছি আমি। বাচ্চাটা যখন কোনো গর্ভে আসবে, তখন সে প্রায় ১২ বছর গর্ভেই থাকতে চাইবে। ১২ বছর পর ভৃমিষ্ঠে পা রাখতে চাইবে। এখন বাচ্চার ৫ বছর চলে, আগামী ৭ বছর বাদেই সে আসবে। আর আপনার ঘরেই সে বাচ্চা আছে, এইটা আমি অনেক সাধনার পর বুঝেছি। কিন্ত এখন টার্গেট বলুন আর লক্ষ্য বলুন, তা হচ্ছে বাচ্চাটিকে নষ্ট করতে হবে৷ 

- কিন্তু সেটা কিভাবে। সোহানার ক্ষতি ছাড়াই এই এইটা কি অধৌ পসিবল? 

- সেটা নিশ্চিত দিতে পারবো না। হতে পারে সোহানা মারাও যাবে,আবার হতে পারে বেচে যাবে । 

- আপনার কোনো হেল্প লাগবে না আমার।

- আরে রেগে যাচ্ছেন কেনো। সোহানার যাতে কিছু না হয়, সেটা নিয়েই গবেষণা করছি আমি।

- এখন আমি কি করবো। 

- এই নিন। এইটা আপনার কাছে রাখবেন। ( লোহার তৈরি একটা তারা( স্টার) রিয়াজের হাতে দেয় উনি।)

- এইটা দিয়ে কি করবো আমি।

- এই তারার মাধ্যমে আপনি শয়তান তাড়াতে পারবেন৷ যখনি বুঝবেন আপনার আশেপাশে শয়তান আছে, তখনি এই তারাটা হাতে নিয়ে বলবেন " আংকিত মার বুচ বুচ"। আর তারাটি একটা বিশাল আলো ছড়াবে। তখনি পালিয়ে যাবে শয়তান।

- ঠিক আছে।আমি তাহলে আসি।

- জ্বি। 

রিয়াজ তারাটা হাতে নিয়ে রওনা দেয় নিজের বাসার দিকে। অনেকখানি দূরের পথ, তাই ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধা হয়ে যায়। রিয়াজ গেইটের সামনে আসতেই দেখে, গেইট খোলা। অদ্ভুত, বাসার দারোয়ান কোথায়৷ রিয়াজ গাড়ি পার্কিং করে গেইটের সামনে আসে। এসেই দেখে, দারোয়ানের দেহ থেকে কেও মাথাটা আলাদা করে দিয়েছে। রিয়াজ ভয়ে থরথর করতে করতে মাটিতে পড়ে যায়। মূসা চাচাকে কে মারলো। রিয়াজ তাড়াহুড়ো করে মূসা চাচার লাশটা লুকিয়ে ফেলে। এরপর কেও দেখার আগেই, গ্যারেজ থেকে কোদাল এনে, বাড়ির পিছনে একটা গর্ত খুড়ে৷ আর সেই গর্তেই মূসা চাচাকে দাপন করে দেয়। রিয়াজের মাথায় অন্য কিছু আর আসেও নি। এমনিতেই বাড়িতে অশুভ শক্তির আসা-যাওয়া। মৃত্যু এখন সামান্য পুতুল খেলা মাত্র। এখন রিয়াজের মাথায় এলো মুক্তার কথা৷ মুক্তা বাসায় ঠিক আছে তো? রিয়াজ তাড়াহুড়ো করে বাসার দিকে দৌড় দেয়। দরজার কলিং বেল বাজাতেই, কাজের মেয়ে নিপা ( Megha Chowdhury) এসে দরজা খোলে। রিয়াজকে আতংকে দেখে কামের মেয়ে জিজ্ঞেস করে।


- কি হইছে স্যার।আপনারে এমন দেহাইতেছে ক্যন।

- মুক্তা বাড়িতে আছে?

- হ, আপামনি সোহানা মেডামরে খাবার খাওয়াইতেছে। 

- আচ্ছা সরো।


রিয়াজ জলদি বাসার ভিতরে যায়। মুক্তা সোহানাকে খাটে বসিয়ে খাবার খাওয়াচ্ছে। সোহানার বিড়ালটা সোহানার পাশে বসে মাছের কাটা খাচ্ছে। রিয়াজ সোহানাকে দেখে একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। এরপর সোহানাকে আদর করার জন্য এগিয়ে যেতেই, সোহানা হুট করে তার বিড়ালটাকে ধরে কামড় দেয়। বিড়ালের দেহ থেকে রক্ত চিত চিত করে বের হচ্ছে। মুক্তা এসব দেখে এক চিৎকার দেয়৷ রিয়াজ ফ্লোরে পড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। এরপর সোহানা হিংস্র চোখে মুক্তার দিকে তাকায়।রিয়াজ বুক ধুকধুক করছে।


সোহানা মুক্তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়েই অজ্ঞান হয়ে যায়। এর মাঝে রিয়াজ একটা জিনিস লক্ষ্য করে। মুক্তা নির্ভয়ে সোহানার সামনে বসেছিলো।রিয়াজ দৌড়ে এসে সোহানাকে খাটে শুইয়ে দেয়। অজ্ঞান হয়েছে, তাই এতো চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু চোখ খোলার পর যেনো স্বাভাবিক আচরণ করে, সেই প্রার্থনা করছে রিয়াজ।রিয়াজ মুক্তাকে আলাদা ভাবে রুমের বাহিরে ডাকে। মুক্তাও আসে রিয়াজের পিছন পিছন। এরপর রিয়াজ প্রশ্ন করলো,

- তুমিও কি কোনো তান্ত্রিকের কাছে গেছো নাকি।

- হ্যাঁ, কিন্তু কেনো 

- না মানে সোহানার সামনে নির্ভয়ে বসে ছিলে তাই।

- আমি অরন্য বেগম নামের এক মহিলার সাথে যোগাযোগ করছি। উনি বলল সোহানা হিংস্র হয়ে গেলে, সোহানার চোখের দিকে তাকিয়ে রাগ দেখালে সে ঠান্ডা হয়ে যাবে। সেটাই করলাম আমি।

- আরেহহ, আর উনি আমাকে এই স্টার দিয়ে বলল বিপদের মুখে যে কারো সামনে মন্ত্র পড়তে। তাহলেই নাকি অশরীরী পালাবে। বুঝলাম না, তান্ত্রিক অরন্যে আবার কোনো গেম খেলছে নাকি।

- আচ্ছা আমি পরে কথা বলে নিবো। রাগ ঘনিয়ে এসেছে। চলো শুয়ে পড়ি। 

- হুম চলো। 


রিয়াজ আর মুক্তা খাবারের পার্ট শেষ করে ঘুমাতে চলে যায়। সোহানা এখনো ঘুমেই আছে। কিছুক্ষণ পর রিয়াজকে কেও ডাকতে লাগলো। রিয়াজ লাফ মেরে উঠে দেখে তান্ত্রিক অরন্য রিয়াজের রুমে রিয়াজকে ডাকছে৷ রিয়াজ অরন্যের দিকে তাকিয়ে দেখে, মহিকার মুখে রক্তের চাপ। মনে হচ্ছে উনি মাত্র কোনো জন্তুর সাথে লড়াই করে এসেছে৷ এদিকে বিছানায় সোহানা আর মুক্তা কেওই নেই। রিয়াজ কিছু বলার আগেই অরন্য বলল।


- রিয়াজ সাহেব, সব রহস্য জেনে গেছি৷ 

- কি জেনেছেন।আর সোহানা এবং মুক্তা কোথায়।

- তোমার বউ মুক্তাই হচ্ছে এই সব কিছুর মূল। সেই সব করাচ্ছে।

- মানে? 

- যে চার দল অশরীরী, তার মধ্যে একদল হচ্ছে সোহানার পেটের বাচ্চাকে মারবে। একদল বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনবে। একদল বাচ্চাটাকে নিজেদের বশে নিতে চায়, আরেকদল তোমার ফ্যামিলিকে মারতে চায়৷ তার মধ্যে যে দল অশরীরীকে পৃথিবীতে আনতে চায়, সে আর কেও নয়, সে হচ্ছে তোমার বউ মুক্তা। 

- আর বাকি তিনদল কারা।

- সে বাচ্চাকে বাধা দেওয়ার জন্য একদল অশরীরী ২৫ বছর যাবত চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারা ভালো অশরীরী। অর্থাৎ যারা বাচ্চাটিকে নষ্ট করতে চায়। আর একদল এই বাচ্চাটাকে নিজেদের বশে নিতে চায়, তারা খারাপ অশরীরী। ওরা চায় বাচ্চাটিকে নিয়ে পৃথিবীতে রাজত্ব করতে৷ এরা গত ৫৫ বছর থেকে এই বাচ্চার জন্মের জন্য অপেক্ষা করে আসছে৷ আরেকদল তোমার ফ্যামিলি শেষ করতে চায়৷ তাদের উদ্দেশ্য একটাই, তোমার ফ্যামিলি শেষ হলে, সে বাচ্চার আগমন সম্পুর্ন বন্ধ। তারা ভালো, কিন্তু অন্যদের বাচাতে তোমাদের শেষ করতে চায়। আর মুক্তা একা প্রতিনিয়ত এই তিনদল অশরীরী সাথে যুদ্ধ করে আসতেছে। যেইভাবেই হোক, এই বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে চায় সে।

- এতে মুক্তার লাভ কি?

- এই মুক্তা তোমার সেই মুক্তা নয়। যে মুক্তাকে তুমি বিয়ে করে এনেছো।এই মুক্তার দেহের ভিতর আছে এক ভয়ংকর অশরীরী। যে গত ১৪০০ বছর থেকে এই বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে চাচ্ছে। প্রথমে বাচ্চাটিকে তোমার মুক্তার পেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মুক্তা প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর, বাচ্চাটি সোহানার পেটে চলে যায়। যাতে সে যথেষ্ট পরিমাণ সময় পায়৷ ১২ বছর কিন্তু কম না। সেজন্যে সোহানার পেটের বাচ্চাটির মাথা নেই। আর হাত দুটো অনেক বড়। কারণ ওটা বাচ্চা নয়,একটা অশরীরী। 

- আল্লাহ, এত কিছু হয়ে আসছে এতদিন ধরে, আর আমি কোথায়। এখন এর সমাধান কিভাবে কি করবো।

- হ্যাঁ, এইটার সমাধান হচ.... আ......আ... 


অরন্য চিৎকার দিয়ে ঘুরে পড়ে যায়। কারণ মুক্তা অরন্যের পিঠে নখ ঢুকিয়ে তান্ত্রিক অরন্যকে মেরে ফেলে। রিয়াজ ভয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে যায় রুম থেকে। মুক্তা অট্টহাসি দিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো,


- লাভ নেই রিয়াজ। সেই তিনদল অশরীরীকে আমি মেরে ফেলেছি। এবার তোমার পালা। অনেক লাফাইছো।এবার মরার সময় ঘনিয়ে এসেছে।


কে শুনে কার কথা। রিয়াজ দৌড়ে গিয়ে সিড়ির নিছে লুকায়। চারদিকে অন্ধকার আর নিরবতার ছড়াছড়ি। হরর মুভিতেও এমন সিন দেখেনি রিয়াজ। এরপর ধীরে ধীরে মুক্তার অবস্থান বুঝার জন্য মাথা বের করে। আর ওমনি দেখে, মুক্তা সিড়ির সামনে রিয়াজের দিকে বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে৷ ভয়ে রিয়াজ আবার দৌড়ে পালিয়ে যায়৷ এরপর দেখে সোহানা ফ্লোরে শুয়ে আছে। নিশ্চয় তিনদল অশরীরী সোহানাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করার সময় সোহানা এখানে পড়ে গেছে। রিয়াজের চোখভরা অশ্রু৷ নিজের মেয়েকে এমন কষ্টে দেখে কোন বাবার চোখে পানি আটকাবে। এদিকে তিনদল অশরীরী শেষ হলেও, মুক্তার রুপে আসল অশরীরী রয়েই গেলো। রিয়াজ সোহানার দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে, মুক্তা এসে রিয়াজকে ছুড়ে মারে। রিয়াজ উড়ে গিয়ে টেবিল ভেঙে ফ্লোরে পড়ে যায়। টেবিলের গ্লাস ভেঙে,টুকরো গুলো রিয়াজের দেহ ছিদ্র করে দিচ্ছে। অথচ রিয়াজ তার মেয়ের কষ্টে,নিজের ব্যাথাকে প্রায় ভুলেই গেছে। মুক্তা দাড়িয়ে দাড়িয়ে অট্টহাসি দিচ্ছে। পৈশাচিক হাসির শব্দে রিয়াজ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে কল্পনা করে, এই বাচ্চার জন্য মুক্তার আগমন,।এই বাচ্চার জন্য অনেকের প্রান গেলো। এই বাচ্চার জন্য মুক্তাকে হারালো। এই বাচ্চার জন্য তান্ত্রিক মৃত।এই বাচ্চার জন্য অশরীরীর আগমন। তবে কি করার? রিয়াজের মাথায় বুদ্ধির আগমন ঘটলো। রিয়াজ পকেট থেকে সেই স্টার বের করে বলতে লাগলো, 

" আংকিত মার বুচ বুচ " সঙে সঙে একটা আলোর উৎপত্তি ঘঠে।সে আলোর চাপে মুক্তা উড়ে গিয়ে বাড়ির বাহিরে পড়ে যায়। রিয়াজ তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে চলে আসে। বাহির থেকে মুক্তার ভয়ংকর হুংকার শুনা যাচ্ছে। রিয়াজ রান্নাঘরে এসে গ্যাসের সিলিন্ডার বতলটি হাতে নেয়। এরপর পাই খুলে দিয়ে গ্যাস ছেড়ে দেয়, পুরো বাড়িতে মাত্র ১ মিনিটেই গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। রিয়াজ সোহানাকে বাড়ির ভিতরেই, অর্থাৎ ফ্লোরে রেখেই দরজার সামনে দাড়িয়ে ম্যাচ ধরিয়ে দেয়। 


ধুপপপপপপপপপপপপপপপপ


বিশাল এক বিস্ফোরণ ঘটে। পুরো এলাকায় শব্দ ছড়িয়ে যায়। ঘুমন্ত মানুষ সব জেগে যায়। বিস্ফোরণের প্রভাবে রিয়াজে উড়ে গিয়ে বাড়ির গেটের সামনে হিচড়ে পড়ে।মাটিতে ডিগবাজি খেতে খেতে রিয়াজের হাত পায়ের চামড়া ছিড়ে যায় অনেক খানি। ভিতরে রিয়াজের মেয়ে সোহানা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সাথে সোহানার পেটের বাচ্চাটিও শেষ হয়ে যায়। মুক্তার দেহ থেকে লাল রঙের একটি আলো আকাশের দিকে চিত করে উড়ে চলে যায়। আলোটা হচ্ছে সেই অশরীরী, যে মুক্তার দেহের ভিতর ছিলো। অশরীরী বাচ্চা মারা যাবার পর মুক্তার দেহের ভিতরের শয়তানটাও মরে উড়ে গেলো। মুক্তা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় মাটিতে। রিয়াজের পুরো দেহ দুর্বল। মাটিতে শুয়ে আছে। মনে মনে বলল, 


- মুক্তাকে তো আমি আবার ফিরে পেলাম। কিন্তু আমার মেয়ে সোহানাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম। তাতে কি আর হয়েছে, আমার মেয়ের কোরবানির দিয়ে, হাজারো বাবার মেয়েকে বাচিয়েছি। তারা সবাই আজ থেকে আমার সোহানা৷ পৃথিবীর সব বাচ্চাকে আমি সোহানা মনে করে থাকবো।যতদিন বাচি।


এ বলেই রিয়াজ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।


........সমাপ্ত........


লেখক- Riaz Raj 


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন এখানে ক্লিক করে।